করফাঁকি শনাক্ত করার জন্য আয়কর ও ভ্যাট রিটার্নে করদাতাদের প্রদত্ত সম্পদ-বিবরণী এখন থেকে যাচাই করে দেখা হবে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এনবিআরের আয়কর ও ভ্যাট বিভাগ ট্যাক্স রিটার্নের অডিটে সহযোগিতা করার জন্য করদাতাদের প্রদত্ত তথ্যগুলো নিজেদের মধ্যে বিনিময় করবে।
বোর্ড সম্প্রতি এর মাঠ-পর্যায়ের ভ্যাট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে যেন তাঁরা অডিট কার্যক্রমে কৌশলটি অন্তর্ভুক্ত করে নেন। ভ্যাট রিটার্নের অডিট সম্পন্নের সময় করদাতাদের আয়কর-সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের প্রমাণ রিপোর্টে সংযুক্ত করে দিতে সার্কেল অফিসগুলোর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ভ্যাট অডিট বিভাগ।
খুব শিগগিরই যেসব কোম্পানির অডিট করা হবে সেগুলোর তালিকাও চেয়েছে এনবিআর।
উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জনিয়েছেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পলিসি-বেইজড ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে জুড়ে দেওয়া শর্ত মেনেই নির্দেশনাটি এসেছে। শর্ত অনুযায়ী, এনবিআরকে আয়কর ও ভ্যাট শাখার মধ্যে তথ্য-বিনিময়ের পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, রাজস্ব বোর্ডকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে অডিটের জন্য প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হবে। ভ্যাটের সার্কেল অফিসগুলোতে প্রেরিত ফার্স্ট সেক্রেটারি শামীমা আক্তার স্বাক্ষরিত এই নির্দেশনায় ৫ মার্চের মধ্যে এই পদ্ধতি মেনে ভ্যাট রিটার্নের অডিটের বিস্তারিত তালিকা চাওয়া হয়েছে।
ভ্যাট অফিসগুলোকে এই মর্মে প্রমাণ সংযুক্ত করতে হবে যে, আয়কর শাখার সঙ্গে তথ্য-বিনিময়ের ভিত্তিতে অডিট সম্পন্ন হয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা জানান, যেসব প্রতিষ্ঠানে অডিট চলছে, সম্পন্ন হয়েছে বা আগামীতে হতে যাচ্ছে, ভ্যাট কর্তাদেরকে সেগুলোর আয়কর রিটার্নসহ অন্যান্য দলিলপত্র ও তথ্যাদি সংগ্রহ করতে হবে।
স্থানীয় ভ্যাট অফিসগুলোতে পাঠানো চার দফা নির্দেশনায় রয়েছে তথ্য-বিনিময়ের পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিদ্যমান অডিট তফসিলের সংশোধনের বিষয়টিও।
কর্মকর্তা আরও জানালেন, বোর্ডের ভ্যাট শাখার অধীনে বৃহৎ করদাতা ইউনিটগুলোর (এলটিইউ) জন্যও একই নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে যাতে এলটিইউ, আয়কর শাখা অথবা অন্যান্য আয়কর অঞ্চল থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
ভ্যাট কার্যালয়গুলোর যেকোনো অডিট-ক্রম বা তফসিলের ক্ষেত্রে আয়কর বিভাগের সঙ্গে তথ্য-বিনিময়ের নির্দেশনা থাকবে।
আয়কর রিটার্ন থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে কোনো প্রতিষ্ঠানের করফাঁকির বিষয়টি চিহ্নিত করা গেলে অডিট রিপোর্টের ভিন্ন একটি প্যারাগ্রাফে বোর্ডকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। ভ্যাট অফিসগুলোকেই সেসব তথ্য সুরক্ষিত রেখে বোর্ডের প্রয়োজনমতো জোগান দিতে হবে।
তাদেরকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল অনুসরণ করে অডিটের জন্য প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে অডিটের জন্য নির্বাচন করা হবে, অডিট তফসিলে সেগুলোর প্রতিটির ঝুঁকির উৎস বিশ্লেষণ করতে হবে।
বোর্ডের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কর কর্তাদেরকে ভ্যাটযুক্ত ও ভ্যাট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত কাঁচামাল সহযোগে রপ্তানি পণ্যের উৎপাদনসহ ঝুঁকির উৎসগুলো অনুধাবন করতে হবে। বিধিবদ্ধ রেগুলেটরি আদেশবলে (এসআরও ) ওয়ালটন ও যমুনার মতো যেসব প্রতিষ্ঠান কর-অব্যাহতি ভোগ করছে সেগুলো এই সুবিধার বিপরীতে চুক্তিভুক্ত শর্তাবলী মেনে চলছে কিনা সেটিও সতর্ক বিবেচনায় নিতে হবে।
আদেশে এটাও বলা হয়েছে যে, যেসব প্রতিষ্ঠান পরপর তিন বছর অডিট সম্পন্ন করেনি সেগুলোও ঝুঁকির উৎসে যুক্ত হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে জোগানের তুলনায় বিক্রি কম দেখা যাচ্ছে অথবা যেগুলোর প্রত্যর্পণ বা ছাড়ের দাবি বেশি অথবা যেগুলোতে ভ্যালু-এডিশন কম হচ্ছে সেগুলোকে বাছাই করার কাজটি ভ্যাট কর্তাদেরই করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, আয়কর ও ভ্যাটের উপাত্ত বিনিময়ের এই প্রক্রিয়া করফাঁকি শনাক্তকরণের মাধ্যমে বড় অংকের রাজস্ব আদায়ে সহযোগিতা করবে।