Bangla
2 years ago

রমজানের সেরা পাঁচ শরবত

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

বছর ঘুরে আবার এসেছে পবিত্র রমজান মাস। দেশজুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করছে রোজা। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ। এই সংযম সুস্থভাবে পালন করার জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। সারাদিন রোজা রাখার পর শরীরের পানিশূণ্যতা দূর করার জন্য ও শক্তি পাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ ও ভিটামিন-মিনারেল সমৃদ্ধ শরবত বা পানীয়ের চাহিদা ইফতারে সবার থাকে।

লেবুর শরবত

বাজারে লেবুর দাম দিনদিন বাড়লেও, লেবুর শরবতের জনপ্রিয়তা কমছে না একটুও। ভিটামিন সি এ ভরপুর এ পানীয় ইফতারে থাকলে শরীর হয় নিমিষেই চাঙ্গা। লেবুর শরবতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। লেবুর মতো সাইট্রাস ফলগুলো প্রতিরক্ষাতন্ত্রকে করে আরো সক্রিয়। সংক্রমণ প্রতিরোধেও লেবু সহায়তা করে। লেবু্তে থাকে পলিনিউট্রিয়েন্টস নামের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ঠান্ডা পানিতে চিনি আর লেবু দিয়ে নিলেই হয়ে যায় এ শরবত। সাথে এক চিমটি লবণ বা বিট লবণ যোগ করে বাড়তি স্বাদ। তোকমা বা ইসবগুলের ভুসিও দেয়া যেতে পারে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করার জন্য। এছাড়াও একটু পুদিনা পাতা কুচি করে ব্লেন্ড করে নিলে হয়ে যাবে ঘরে তৈরি লেমন মোহিতো।

তরমুজের শরবত

বাজারে নামতে শুরু করেছে তরমুজ। মৌসুমি এই পানজাতীয় ফলের স্বাদের জুড়ি মেলা ভার। ইফতারে ঠান্ডা তরমুজের শরবত থাকলে শরীরে পানির চাহিদা পূরণ হয় সহজেই। দেখতে সুন্দর, স্বাদে ভরপুর এ শরবত ইফতারে দেয় প্রশান্তি। তরমুজের শরবত অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সুস্বাদু এ শরবত কিডনি সুস্থ রাখার পাশাপাশি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এ ছাড়া প্রোস্টেট ক্যানসার, কোলন ক্যানসার ও ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে তরমুজ।

তরমুজ কিউব করে কেটে নিয়ে একটু পানি যোগ করে ব্লেন্ড করলেই তৈরি হয়ে যাবে শরবত। স্বাদমতো চিনি দিতে হবে। একটু গোলমরিচের গুড়ো বা বিটলবণ দিলে আসবে ভিন্ন এক স্বাদ। বরফকুচি দিয়ে পরিবেশন করলে সবচেয়ে ভালো স্বাদ পাওয়া যাবে এ শরবতের।

রুহ আফজা

রমজান আসবে আর রুহ আফজার চর্চা হবে না, তা তো হয় না। শুধু আমাদের দেশেই নয়, পুরো ভারতীয় উপমহাদেশেই জনপ্রিয় এক পানীয় রুহ আফজা। হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের এই শরবত শতাব্দীব্যাপি রোজাদারদের ইফতারের অনুষঙ্গ। রুহ্ আফজায় ভিটামিন এ, বি, সি, ডি-সহ প্রায় সকল ভিটামিনিই যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে যা শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে। এসব ভিটামিন ও বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস্ জাতীয় এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় রুহ্ আফজা দেহে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালসমূহকে ধ্বংস করে দেহকে রোগমুক্ত রাখে। এছাড়াও শরীরে ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা করে রুহ আফজা।

যদিও রুহ আফজা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তবুও এর জনপ্রিয়তা কমেনি একটুও। ঠান্ডা পানি ও চিনির সাথে রুহ আফজা মিশিয়ে নিলেই হয়ে যায় সুস্বাদু রুহ আফজা। সাথে লেবু বা দুধ যোগ করেও তৈরি করা যায় মজাদার লেমনেড বা মিল্ক শেক। দুধ-তরমুজ আর চিনি যোগ করে রুহ আফজা দিয়ে বানানো যায় শরবত-এ-মহব্বত।

আনারসের শরবত

বর্তমানে মৌসুমি ফল হিসেবে বাজারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত আছে আনারস। কম দামে ভালো ও পুষ্টিকর শরবত তৈরি করতে আনারসের বিকল্প নেই। খালি পেটে আনারস খাওয়ার উপকারিতা আমরা সবাই জানি। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস ও ম্যাঙ্গানিজ। এসব উপাদান দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আনারস হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন, যা হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন ইফতারে আনারস খাওয়া দরকার।

আনারস ছোট করে কেটে ঠান্ডা পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিলেই হয়ে যাবে মজাদার আনারসের শরবত। স্বাদমতো চিনি ও বিটলবণ যোগ করতে হবে। একটু পুদিনা কুচি করে দিলে স্বাদ আরো

দই-কলার লাচ্ছি

দই-কলার লাচ্ছি অনেক জনপ্রিয় একটি ইফতার আইটেম। শুধু দই বা দুধ-কলা দিয়েও এ শরবত তৈরি করা যায়। সারাদিন পর দই আর কলার শরবত পান করলে পেট একদম ঠান্ডা হয়ে যাবে। দই খেলে শরীরে চাঞ্চল্য আসে এবং অনেক রোগ দূরে থাকে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দই খেলে হজম ঠিকমতো হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা দূর হয়। এছাড়া কলায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। আর কলায় ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। শরীরের যাবতীয় দূষিত পদার্থ দূর করতে এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট দারুণ কাজ করে।

টক বা মিষ্টি দই এর সাথে কলা ছোট করে কেটে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। সাথে দিতে হবে স্বাদমতো চিনি। অল্প গুড়ো দুধ বা কনডেন্সড মিল্ক যোগ করা যেতে পারে শরবতের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য। ইফতারে এ শরবত বরফ দিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পান করলে করলে শরীর বল পাবে দ্রুত।

শরবত ছাড়া ইফতারে তৃষ্ণা মেটানো দায়। সারাদিন পর রোজাদার ব্যক্তির কাহিল দেহ যখন তৃষ্ণায় জর্জরিত, তখন এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত পুরো শরীরে দেয় এক শান্তির ছোঁয়া।

 

ফাইয়াজ আহনাফ সামিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

faiyazahnaf678@gmail.com

শেয়ার করুন