Bangla
14 days ago

এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিঃ মিরপুর ১ দিয়াবাড়ি কাঁচাবাজারের দুর্দশা

অব্যবস্থাপনায় মিরপুর ১ দিয়াবাড়ি কাঁচাবাজার
অব্যবস্থাপনায় মিরপুর ১ দিয়াবাড়ি কাঁচাবাজার Photo : নীলাঞ্জনা চম্পা

Published :

Updated :

রাস্তা দিয়ে চলছে বড় বাস, প্রাইভেটকার, রিকশা, অটোসহ নানা যানবাহন। ব্যস্ত এই রাস্তার মাঝ দিয়েই মাথায় মাছ-ভর্তি পাতিল নিয়ে বাজার ছাড়ছে কেউ, কেউ আবার ভ্যানে সবজি সাজিয়ে বাজার ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছে অলি-গলির ভেতর। রাস্তায় চলমান যানবাহনের গতির পরোয়া নেই কারো। এই হলো ঢাকার বৃহৎ কাঁচা বাজারগুলোর একটি মিরপুর ১ এর দিয়াবাড়ি পাইকারি কাঁচাবাজারের প্রতিদিনের চিত্র। 

আশুলিয়া-সাভার থেকে আসা যানবাহনের উপায় এই প্রশস্ত রাস্তা যা এই বাজার অতিক্রম করে মিলিত হয় মিরপুর ১ এ। কিন্তু অব্যবস্থাপনার জন্য বাসচালক থেকে শুরু করে যাত্রী কিংবা বাসীন্দাদের ব্যাপক কষ্ট করতে হয়। 

রাস্তার দুই পারে প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে এই বাজার, ফলে এতো লোক ঠেলে এইটুকু রাস্তা পার হতে সময় লাগে আট-দশ মিনিট, ক্ষেত্র বিশেষে আধা ঘণ্টা। শুধু ফুটপাথ নয়, রাস্তার বেশ কিছু অংশ দখল করে রেখেছে কাঁচাবাজার দোকানিরা। এমন অব্যবস্থপনার মাঝেই বাজার চলে রাত থেকে সকাল ৯টা, মাঝেমধ্যে ১০টা পর্যন্ত।

রাস্তার একপাশে টিনের চালা বিশিষ্ট বেশকিছু দোকান। অপর পাশে বিশাল মাঠে বাঁশের উপর মাচার মতো  ছাউনির নিচে বেশকিছু ছোট-ছোট দোকান। উভয়পাশেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা। অনেকেই বলবে বাংলাদেশের  সব সবজির বাজারের পরিবেশ এমন প্রত্যাশিত।  

কাঁচা বাজারে ময়লা-আবর্জনা জমবে তা স্বাভাবিক, তবে স্তুপাকারে জমিয়ে রেখে এর পাশ দিয়ে খাদ্য-বস্তু কেনাবেচা স্বাস্থ্যে কেমন প্রভাব ফেলবে তা নিদারুন চিন্তনীয়। এনিয়ে এক স্থানীয় জানায়, “বাজারের পরিবেশ দেখেকিছু কেনার রুচি চলে যায়। তাই তো আমরা সুপার শপের দিকে ঝুঁকছি।”
কাছেই আবর্জনা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন থাকা সত্ত্বেও আশেপাশে উন্মুক্ত স্থানে ময়লার স্তুপ জমতে দেখা যায় প্রতিনিয়ত। 

বাজারের এক বিক্রেতা জানান,“দুপুরের আগেই বাজারের কার্যক্রম শেষ হলেও রাত গড়ানোর পরও দুর্গন্ধ কমেনা।”

এছাড়া মাছি, নানা পোকামাকড়ের উপদ্রব হয়রানি সৃষ্টি করেছে বাজারপার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে। ময়লার স্তুপ হতে নির্গত পানি মাড়িয়ে যানবাহনগুলো ছোটে দূর দূরান্তে। স্থানীয়রা জানায়, বরাবরই তারা প্রশাসনের কাছে এনিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসছে।  মাঝেমধ্যে সিটি কর্পোরেশন ফুটপাত দখল মুক্ত করে, কিন্তু কিছু দিনপর আবার ফুটপাথটি আগের অবস্থায় ফিরে যায়।

বাজারটির প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম যত্রতত্র মূত্রত্যাগ করা। বাজারের ভেতরে পূর্বদিকে আছে পাবলিক টয়লেট। তারপরও অনেকেই সেগুলো ব্যবহার করে না। বাজারের দোকানিদের মতে এই ধরনের কাজ করে থাকে মূলত পথচারী কিংবা অন্যস্থান থেকে আসা ক্রেতারা। টয়লেট একটু ভেতরের দিকে হওয়ায় অনেকে এই সুবিধা সম্পর্কে অবগত নয়।

একদিকে এমনচিত্র, আরেক দিকে রয়েছে চাঁদাবাজি।  অনেকে দোকানিরা জানায় অল্প সময়ের এই বাজারে প্রায়ই চাঁদাবাজির সম্মুখীন হতে হয়। এতে বেশ ক্ষতিরমুখে পড়তে হয় ক্ষুদ্রপরিসরের বিক্রেতাদের। ট্রাফিক পরিচালনায় মাঝেমধ্যেই পুলিশকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। কিন্তু এসকল অনিয়ম-অব্যবস্থাপনারোধে তৎপরতার উপস্থিতির দেখা মেলে না।

তবে কি দোষ শুধু প্রশাসনের?

অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে, সাধারণ জনতা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি? এনিয়ে বাজারটিতে অবস্থিত আলেয়া সুপার কমপ্লেক্সের মালিক আলেয়া বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, “প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব না। যেহেতু এখানের পরিচ্ছন্নতার কাজ মুলত সিটি কর্পোরেশনের হাতে তাই অনেকেই একে প্রশাসনের দায়িত্ব ভেবে নিয়েছে। কিন্তু সিটিকর্পোরেশনের ব্যর্থতায় মালিকসমিতি ও বাসিন্দারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে।” 

ঢাকার এমন অনেক শহরেই এমন অব্যবস্থাপনা অহরহ দেখা যায়। দূষণ রোধে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনের অতৎপরতা এভাবেই বিগত বছরগুলোতে ঢাকাকে দূষিত শহরের তালিকায় উপরের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

[email protected]

 

Share this news