বাংলাদেশে বিনিয়োগে জাপানি কোম্পানিগুলোর প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন কার্যক্রমে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানী টোকিওতে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেন, “আজ আমরা এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি, যখন আপনাদের সহায়তা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এখন বাকি পথটুকু একসঙ্গে আনন্দ-উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।”

জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) তাদের সদর দপ্তরে এই বৈঠকের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনাকারী শীর্ষস্থানীয় জাপানি কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা অংশ নেন।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, “ গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের সবকিছুই নানা ভাবে ভেঙে পড়েছিল। আমাদের আর্থিক অবস্থা শূন্যের নিচে নেমে গিয়েছিল। ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়েছিল, প্রশাসনিক ও পুলিশ ব্যবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া। সেখান থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, তার অন্তর্বর্তী সরকারের গত দশ মাসের যাত্রা ছিল ধ্বংসস্তূপ থেকে একটানা গড়ে তোলার চেষ্টা। এ সময় তিনি বলেন, “তাই জাপান সরকারের এবং জাপানি ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

প্রফেসর ইউনূস বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য একটি ' নতুন বাংলাদেশ' গড়ে তোলা। কারণ পুরনো বাংলাদেশে অনেক খারাপ দৃষ্টান্ত রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, “আমরা সেই পুরনো বাংলাদেশের সঙ্গে দূরত্ব রাখতে চাই। আমাদের যাত্রা নতুন বাংলাদেশ গঠনের, আর এই যাত্রায় আপনারা আমাদের বন্ধু ও সহযোগী হবেন। আপনাদের উপস্থিতি আমাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এটি একটি সুযোগ, অতীতের সব ভয়াবহ অভিজ্ঞতা পেছনে ফেলে একটি নতুন দেশ গড়ে তোলার।

তিনি বলেন, স্বৈরশাসক সরকারের পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘জীবনের চিহ্ন’ ফিরে এসেছে, এখন কিছুটা সময় দরকার সবকিছু গুছিয়ে নিতে।

জেট্রো চেয়ারম্যান ও সিইও নোরিহিকো ইশিগুরো বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

জাপান-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমিটির (জেবিসিসিইসি ) চেয়ারম্যান এবং মারুবেনি করপোরেশনের নির্বাহী কর্পোরেট উপদেষ্টা ফুমিয়া কোকুবু জানান, বাংলাদেশে ব্যবসা করা ৮৫ শতাংশ জাপানি কোম্পানি আশা করছে চলতি বছর অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ ) স্বাক্ষর হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কর ব্যবস্থায় সংস্কার আনার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত শিনিচি সাইদা বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে; কোনও প্রকল্প স্থগিত হয়নি, কোনও ব্যবসা বন্ধ হয়নি।

এছাড়া বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন সুমিতোমো করপোরেশনের সিইও শিনগো উএনো, ইউগ্লেনা কো. লিমিটেডের সিইও মিতসুরু ইজুমো, জেরা-র চিফ গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভেন উইন, জেবিআইসি-র সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজুনোরি ওগাওয়া, ওনোডা ইনক.-এর প্রেসিডেন্ট শিগেয়োশি ওনোডা, জেট্রো-র নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজুয়া নাকাজো এবং আইডিই-জেট্রো-র নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মায়ুমি মুরায়ামা।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুতফে সিদ্দিকী সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।