মহেশখালীতে লবণচাষী, পানচাষী ও জেলেদের অধিকার রক্ষায় জনসভা
বানিজ্যিক ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ ব্যবহার করে মহেশখালীতে হচ্ছে বেপরোয়া শিল্পায়ন: শরীফ জামিল
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নাগরিক সংগঠন “ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)” আয়োজনে কক্সবাজারে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকায় সৃষ্ট বহুমাত্রিক সংকট মোকাবেলায় সরকার ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের ন্যায়ভিত্তিক উদ্যোগের দাবিতে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (২৮ জুন) বিকালে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জলবায়ু সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত এই অঞ্চলের লবণচাষী, পানচাষী এবং মৎস্যজীবীদের জীবনধারা, খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অধিকারের সুরক্ষার দাবীগুলো তুলে ধরা ও এই সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করাই ছিল জনসভার মূল লক্ষ্য।
জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব ও ওয়াটারকিপার এলায়েন্স এর বৈশ্বিক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শরীফ জামিল। প্রধান অতিথি শরীফ জামিল তার বক্তব্যে বলেন, মহেশখালী ও মাতারবাড়ীর ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগে বানিজ্যিক ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে ব্যবহার করতে এ অঞ্চলে বেপরোয়া শিল্পায়ন চলছে। স্থানীয় মানুষকে অন্ধকারে রেখে বৈদেশিক স্বার্থে কয়লা ও গ্যাসের মত দুষিত প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে লবন ও পানচাষিদের উচ্ছেদের নীলনকশা বাস্তবায়িত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত স্বচ্ছ, বিজ্ঞানভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ অঞ্চলে সকল ভারী শিল্প স্থাপন বন্ধ রাখা। দেশের মানুষ কখনোই লবনকে আমদানিনির্ভর পণ্যে রূপান্তরিত করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলতে দেবেনা।
বিশেষ অতিথী হিসাবে বক্তব্য রাখেন সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি-এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক। বিশেষ অতিথী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশসমূহ দায়ী হলেও বাংলাদেশের মতো দেশসমূহের প্রাণ প্রকৃতি এর অভিঘাতে জর্জরিত। বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। অথচ উন্নত দেশসমূহ ক্ষতিপূরনের নামে ঋন প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিতের বিপক্ষে দাড়াচ্ছে। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ প্রতিবেশ সমীক্ষা নিশ্চিত করে স্থানীয় অধিবাসীদের মতামত নিতে হবে। কোনো সভ্য দেশে স্থানীয়দের মতামত ও ন্যায্য হিস্যা ছাড়া প্রকল্প নেয়া হয়না। আমরা প্রমাণ দেখতে চাই আমরা একটি সভ্য দেশে বসবাস করি।
আরো বক্তব্য রাখেন সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক মো. নূর আলম শেখ। তিনি বলেন, মহেশখালীর চাষিদের বাঁচাতে লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যাতে মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া চাষীরা যেন সরাসরি বিক্রি করতে পারেন। সরকারি সহায়তা বা ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। জমির সুরক্ষা ও লবণচাষ উপযোগী নীতিমালা তৈরি করতে হবে। লবণ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দেশীয় উৎপাদনের স্বার্থে সস্তা বিদেশী লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চুনতি রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়ক সানজিদা রহমান এবং গর্জন সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবদুল মাবুদ। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধরা-কক্সবাজারের যুগ্ম আহবায়ক এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, ধরা-পেকুয়া’র সমন্বয়ক দেলোয়ার হোসেন, ধরা-মহেশখালী’র সমন্বয়ক মোহাম্মদ কায়সার হামিদ, আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মওলানা ওসমান গনি, ধরা মহেশখালী শাখার সদস্য আবদুস সালাম কাকলী, ধরা কক্সবাজার সদর উপজেলার আহবায়ক মো. হাসান সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।