অর্থনৈতিক সাফল্যহীনতায় শ্বেতহস্তী হয়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-০১
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
শেখ হাসিনা সরকার-বাস্তবায়িত অর্থনৈতিকভাবে অসফল প্রকল্পগুলোর একটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-০১কে এখন একটি শ্বেতহস্তি প্রকল্প হিসেবে বিচেবচনা করা হচ্ছে। সরকারের অভ্যন্তরের একটি সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
বুধবার ওই সূত্র জানায়, কৃত্রিম উপগ্রহের অধিকাংশ ব্যান্ডই অব্যবহৃত রয়ে গেছে এবং বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের তুলনায় আয় হচ্ছে অত্যন্ত কম।
আওয়ামী লীগ সরকার ১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা ব্যয় করে ২০১৮ সালে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠায়। এতে ৪০টি ‘কেইউ ব্যান্ড’ এবং ‘সি-ব্যান্ড’ ট্রান্সপন্ডার রয়েছে, যার মোট ক্ষমতা ১,৬০০ মেগাহার্জ এবং এর সম্ভাব্য জীবনকাল ১৫ বছর, অর্থাৎ ২০৩৩ সাল পর্যন্ত।
স্যাটেলাইটটির ‘সি-ব্যান্ড’ ট্রান্সপন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে বেশ কয়েকটি স্থানীয় টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠান, তবে ‘কু-ব্যান্ড’-এর ২৬টি ট্রান্সপন্ডারের প্রায় সবগুলো এখনও অব্যবহৃত রয়েছে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) তথ্য বলছে, সি-ব্যান্ডের প্রায় ৫৯ শতাংশ বিক্রি হয়েছে, যেখানে কু-ব্যান্ডের মাত্র ২৫ শতাংশ বিভিন্ন স্থানীয় ও বিদেশি কম্পানির কাছে লিজ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে টেলিকম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে জানান, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটের প্রয়োজন ছিল ।
”কিন্তু হাসিনা সরকারের অধীনে স্যাটেলাইট নির্মাণে এতো অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা আর্থিক ও অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণই অযৌক্তিক ছিল।… প্রতি বছর সরকার এটি থেকে প্রত্যাশিত আয় তুলতে ব্যর্থ হয়।"
আরেক কর্মকর্তা হতাশার সঙ্গে মন্তব্য করেন, সম্ভাব্য বিদেশি গ্রাহকদেরও অভাব রয়েছে এখানে। তিনি বলেন, "যদিও আমাদের ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সের মতো ১৪টি এশীয় দেশের ওপর কভারেজ রয়েছে, যেখানে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ বসবাস করে, তবে আমরা আমাদের স্যাটেলাইট সেবা সম্ভাব্য বিদেশি কম্পানি বা তাদের সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছি।"
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৩ অর্থবছরে বিএসসিএল স্যাটেলাইট থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা আয় করেছে কিন্তু এর পরিচালনা ব্যয় হয়েছে ৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বিএসসিএল ২০১৯ অর্থবছরে আয় করে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা, ২০২০ অর্থবছরে ১০৮ কোটি টাকা, ২০২১ অর্থবছরে ১৪৬ কোটি টাকা, ২০২২ অর্থবছরে ১৪৯ কোটি টাকা এবং ২০২৩ অর্থবছরে ১৭১ কোটি টাকা আয় করেছে।
বর্তমানে কারাবন্দী জুনায়েদ আহমেদ পলক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন বলেছিলেন, সরকার ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের অর্ধেক স্থানীয় টেলিভিশন স্টেশনগুলোর জন্য বরাদ্দ করবে এবং বাকিগুলো অন্যান্য দেশের চ্যানেলগুলোকে সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়ায় প্রতি বছর ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় করছে। সরকার আশা করেছিল, স্যাটেলাইট থেকে বার্ষিক ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা আয় হবে এবং ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে এটি লাভজনক হবে।
মার্কিন স্পেস ট্রান্সপোর্ট কম্পানি স্পেসএক্সের মাধ্যমে দেশের প্রথম স্যাটেলাইটটিকে কক্ষপথে পাঠানোর মাধ্যমে ২০১৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ৫৭টি দেশের এলিট স্পেস ক্লাবে প্রবেশ করে।
বর্তমানে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী সক্রিয় স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে ১,৬১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের, ২৯৮টি চীনের, ৮৮টি ভারতের, ৬৮টি ফ্রান্সের, ৪২টি ব্রিটেনের, ২৩টি স্পেনের, ১৪টি তুরস্কের, ১৩টি সৌদি আরবের এবং ৩টি পাকিস্তানের।