Bangla
2 days ago

ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছিল: সুপ্রিম কোর্ট

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে জানিয়েছে, ষোড়শ সংশোধনী মামলার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল বিচারপতিদের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করা। রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে পুনরায় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যেন তারা বিচারপতিদের অযোগ্যতা বা আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে অপসারণ করতে পারেন।

চূড়ান্ত রায়ে বলা হয়েছে, ষোড়শ সংশোধনী ছিল একধরনের কর্তৃত্ববাদী প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছিল।

গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন এবং আজ ৫০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, পর্যবেক্ষণসহ মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী রায়ে বলেন, কোনো বিচারক যদি সরকারের বিরাগভাজন হন, তাহলে সংসদের সদস্যদের এক কলমের আঁচড়ে তাকে অপসারণ করা যেতে পারে—এটি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সহকর্মীদের মতামতও একমত।

রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, বিচারপতিদের বিচারিক কাজের সময় রাজনৈতিক বিতর্কে জড়ানো উচিত নয়, কারণ এতে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে পারে এবং তারা সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন।

আদালত আরও মত দেয়, রাজনৈতিক মতামত থেকে বিরত থাকা উচিত, যাতে বিচার বিভাগের সুনাম ও স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকে।

এই রায়কে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, এতে বিচার বিভাগ আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেল এবং এটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি আরও জানান, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এখন একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। রিভিউয়ের জন্য ৯৪টি কারণ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে কোনোটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে দেখা গেছে। আদালতকে জানানো হয়েছে, আর এসব কারণ উপস্থাপন করা হবে না।

এই মামলায় রিটকারীর পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এবং শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনীকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আপিল বিভাগ সেই রায় বহাল রাখে। রাষ্ট্রপক্ষ পরে রিভিউ আবেদন করে, যার নিষ্পত্তি হয় ২০২৪ সালের অক্টোবরে। 

শেয়ার করুন