আধুনিক বিশ্বে দৈনন্দিন জীবনে ডিজিটাল ক্যামেরা নিত্যদিনের সঙ্গী। জীবনের বিশেষ মুহূর্তগুলো কে ধরে রাখতে আমরা প্রতিদিনই ক্যামেরার ব্যবহার করছি। মোবাইল ফোন এর বদৌলতে ক্যামেরা এখন সকলের হাতের মুঠোয় হলেও প্রফেশনাল ক্যামেরা বা ডিএসএলআর ক্যামেরার চাহিদায় ভাঁটা পড়েনি।
কিন্তু নতুন ক্যামেরা কিনতে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন ডিএসএলআর নাকি মিররলেস কোনটা সঠিক পছন্দ। সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মুক্তি দিতে পারে এই লেখাটি।
পার্থক্য
ডিএসএলআর ও মিররলেস ক্যামেরার মাঝে মূল পার্থক্য হলো ডিএসএলআর ক্যামেরাতে সেন্সরের সামনে একটি মিরর বা আয়না থাকে। লেন্সের মাধ্যমে যখন সামনে থাকা বস্তু থেকে আলো ক্যামেরাতে থাকা আয়নাতে এসে পড়ে তখন আয়না একটি প্রিজম এর মাধ্যমে আলোকরশ্মি গুলো ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে পাঠিয়ে দেয়। আয়নার সেই প্রতিবিম্ব আমরা ভিউ ফাইন্ডারে দেখি।
ছবি তোলার জন্য ক্লিক করার পর আয়নাটি সরে যায় এবং আলো সেন্সরের ওপর এসে পড়ে ও ছবি তোলা হয়। মিররলেস ক্যামেরাগুলোতে এই আয়নাটি থাকে না। ফলে আলো সরাসরি সেন্সরে এসে পরে এবং সেন্সর সরসরি ছবি ভিউ ফাইন্ডারে পাঠায় যা দেখে আমরা ছবি তুলি।
সুবিধা-অসুবিধা
যদিও দুই প্রকার ক্যামেরারই সুবিধা অসুবিধা দুটো দিকই আছে। শুরুতেই আসি ক্যামেরার বাহ্যিক বিষয়গুলো নিয়ে। মিররলেস ক্যামেরার তুলনায় ডিএসএলআর ক্যামেরাগুলো কিছুটা ভারী ও বড়। যার ফলে মিররলেস ক্যামেরা সহজে বহনযোগ্য। লম্বা সময় ধরে যারা ছবি তোলেন বা দূরে ভ্রমণের জন্য মিররলেস ক্যামেরাই প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে।
ডিএসএলআর ক্যামেরায় আয়নাতে যে প্রতিবিম্ব পড়ছে আমরা শুধু সেটিই দেখতে পাই অপটিকাল ভিউ ফাইন্ডারের মাধ্যমে। ছবি তোলার পর কেমন হবে সেটা বোঝা যায় না। আমাদের প্রতিটি ছবি তোলার পর দেখে নিতে হয় কাংখিত ছবিটি পেয়েছি কিনা।
কিন্তু মিররলেস ক্যামেরাতে ইলেকট্রনিক ভিউ ফাইন্ডার থাকাতে ছবি তোলার আগেই দেখতে পাই কেমন ছবি আমরা পেতে যাচ্ছি। ছবি তোলার আগেই ফোকাস, এক্সপোজারের মতো বিষয়গুলো ঠিক করে নেয়া যায়। এই ফিচারটি নতুন ফটোগ্রাফারদের জন্য খুবই সুবিধাজনক।
ফোকাস এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ মিররলেস ক্যামেরায় এখন টাচস্ক্রীন প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যায়। ফলে সরাসরি কাংখিত বস্তুর উপর ট্যাপ করে ফোকাস ঠিক করা যায়। এছাড়াও মিররলেস ক্যামেরার আই অটো ফোকাস প্রযুক্তি পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফিকে সহজ করে দিচ্ছে। খুব কম সংখ্যক ডিএসএলআর ক্যামেরায় আমরা এই সুবিধাটি পেয়ে থাকি।
ডিএসএলআর ক্যামেরায় সেন্সরের সামনে আয়না থাকাতে যখন ক্যামেরার লেন্স পরিবর্তন করা হয় তখন আয়নাটি সেন্সরটিকে বাহিরের ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু মিররলেস ক্যামেরায় সেন্সরের সামনে আয়না না থাকায় লেন্স পরিবর্তন করার সময় সেন্সর উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে এবং ধুলোবালি সেন্সরের ক্ষতি করে।
ডিএসএলআর ক্যামেরায় শাটার স্পিড যতই কম করা হোক না কেন, ফ্রেম পার সেকেন্ড বা এফপিএস মিররলেস ক্যামেরার মতো বেশি পাওয়া যায় না। ফ্রেম রেট যত বেশি, ছবিও ততটাই ভালো পাওয়া যায়। এদিক থেকে মিররলেস ক্যামেরা ডিএসএলআর এর তুলনায় এগিয়ে থাকবে।
এছাড়াও আমরা ইমেজ স্টাবিলাইজেশন ডিএসএলআর এর তুলনায় মিররলেস ক্যামেরাগুলো তে ভালো যা শুধু ছবি তোলা নয়, ভালো ভিডিওগ্রাফির ক্ষেত্রেও অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। ব্যাটারি পারফরম্যান্স এর দিকে তাকালে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিএসএলআর এগিয়ে থাকে।
ডিএসএলআর এবং মিররলেস দুই প্রকার ক্যামেরারই সুবিধা অসুবিধা আছে। তবে সময়ের সাথে মিররলেস ক্যামেরাগুলো দ্রুত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠছে। নিত্যনতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার ক্যামেরা ব্যবহারের আনন্দ ও তৃপ্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে মিররলেস ক্যামেরাগুলো, যে কারণে এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে দ্রুত।