Bangla
2 days ago

১৬০ পেরিয়ে আলাউদ্দিন সুইটমিট

আলাউদ্দিন সুইটমিট ও এর রকমারি মিষ্টি-সমাহার, কোলাজ
আলাউদ্দিন সুইটমিট ও এর রকমারি মিষ্টি-সমাহার, কোলাজ Photo : মাহমুদ নেওয়াজ জয়

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

১৮৬০ সালের কথা। ভারতের লক্ষ্ণৌর মিষ্টিবিক্রেতা আলাউদ্দিন হালওয়াই ভাবছিলেন ব্যবসার সম্প্রসারণ করবেন। মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলাকে বেছে নিলেন তিনি। ১৮৬৪ সালে শুরু করলেন ঢাকার চকবাজারে মিষ্টির ব্যবসা। নাম দিলেন আলাউদ্দিন সুইটস। ১৮৯৪ এটি আরও বড় পরিসরে বাহারি মিষ্টির পসরা নিয়ে দোকানের নাম হলো আলাউদ্দিন সুইটমিট। 

লক্ষ্ণৌ থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ১০০০ কিলোমিটার। কিন্তু সেইসব দুরুহ যোগাযোগের দিনেও আলাউদ্দিন ঠিকই দুটো শাখার মিষ্টির মান ধরে রাখতে পেরেছিলেন।

সেসময় কালোজাম, গোলাপজাম, রসগোল্লা, সন্দেশের মতো কমন মিষ্টিগুলোই পাওয়া যেত। শুরু থেকেই ঢাকায় তার ব্যবসা জমে ওঠে, কারণ ঢাকার মানুষ মিষ্টি বেশ পছন্দ করতো। ফলে লক্ষ্ণৌ থেকে আসা রকমারি মিষ্টির রেসিপি তাদের কাছে আলাদা মনে হয়েছিল ও ভালো লেগেছিল। এভাবে সফলতার সাথেই আলাউদ্দিন সুইটমিটের ব্যবসা চলতে থাকে। 

আলাউদ্দিন হালওয়াই মারা যান ব্রিটিশ আমলে। এরপর তার পুত্র এই ব্যবসার হাল ধরেন। এর ভেতর অনেক চড়াই উৎরাই দেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে এর দায়িত্বে আছেন মারুফ আহমেদ। তিনি আলাউদ্দিনের পুত্র সালাউদ্দিনের নাত-জামাই। সালাউদ্দিন তার দাদাশ্বশুর ছিলেন। তিনি বলেন, "আমি এমন শুনেছি যে, ১৯৪৬ এর দাঙ্গায় এদিকে খুব ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের দোকান লুট করারও চেষ্টা হয়েছিল। পাকিস্তান হওয়ার পর ব্যবসা চলছিল স্বাভাবিকভাবেই। তখন তো পুরো ঢাকায় আমাদের মিষ্টির ব্যাপক সুনাম। আমাদের ভারতের শাখাও কিন্তু চলেছে। ওদিকের আত্মীয়রা ওটা দেখতেন। এরপর ১৯৭১ এলো।  মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দোকানে আগুন দেওয়া হয়৷ স্বাধীনতার পর ব্যবসা আবার শুরু হলো। কিন্তু তখন অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে আবার আমরা লাভের মুখ দেখলাম। ১৯৮৩ সালে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলাম আমরা। ঢাকায় মোট সাতটা শাখা হলো। দেশের বাইরে নিউইয়র্ক ও লন্ডনেও আমাদের শাখা খোলা হলো। তখন আমাদের ব্যবসার স্বর্ণযুগ। আমরা মিষ্টির বাইরে বেকারী আইটেম, লাচ্ছা সেমাই, কেক আনলাম। ঈদে আমাদের লাচ্ছা খুবই জনপ্রিয়তা পেল। একসময় প্রিমিয়াম লাচ্ছা সেমাই হিসেবে একনামে সবাই আলাউদ্দিনকে চিনতেন। পরে আরও কিছু মিষ্টির ব্র‍্যান্ড এই ধারা অনুসরণ করেছে।" 

আলাউদ্দিনের সাফল্য তখন তুঙ্গে।  তবে এত সাফল্যের মাঝেই এসে পড়ে ঝড়৷ ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদত্যাগ করার পর ব্যবসায় ধস নামে। একপর্যায়ে ২০০৫ সালে দোকান বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ২০০৯ সালের পর মারুফ আহমেদ ব্যবসার হাল ধরেন। এরপর আবার সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে আলাউদ্দিন সুইটমিট। বর্তমানে ঢাকায় তাদের সাতটি শাখা আছে, পুরনো অনেক কর্মচারীও আছেন৷ যেমন- আবদুল করিম মিয়া নামে একজন আছেন, যিনি ১৯৬০ সাল থেকে এই দোকানে কাজ করছেন। তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, "আমি এই দোকানে কাজ শুরু করেছিলাম ২০ বছর বয়সে। এখন বয়স ৮৫। সারাটা জীবন এইখানেই কাটয়েছি। বলতে পারেন, এটাই আমার ঘরবাড়ি।" 

বর্তমানে আলাউদ্দিন সুইটমিট বিয়ের অনুষ্ঠান, ক্যাটারিং, বড় বড় বিভিন্ন প্রোগ্রামে মিষ্টি সরবরাহ করার প্রচুর অর্ডার পেয়ে থাকে।

দোকানের ভেতর বামদিকে বড় শো-কেসে আছে রকমারি মিষ্টির সমাহার, আর ডানদিকে আছে বসে মিষ্টি খাওয়ার জন্য একটি টেবিল ও চারটি চেয়ার। ফোন কল, ফুডপান্ডা ও পাঠাও-য়ের মাধ্যমে দোকানে না এসেও তাদের কাছ থেকে মিষ্টি ডেলিভারি নেয়া যায়৷ 

মারুফ আহমেদ মনে করেন, অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী দামে তারা যেভাবে মিষ্টি সরবরাহ করছেন, সেই ধারা তারা ধরে রাখতে পারবেন৷ তার মতে, "দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা কখনও সরে যাইনি। চারপুরুষ ধরে আমাদের এই ব্যবসা। মিষ্টি খেয়ে যাতে গ্রাহক আবার আসেন, আমরা সেরকম আস্থার জায়গাতেই থাকতে ও ধরে রাখতে চাই।"

mahmudnewaz939@gmail.com

শেয়ার করুন