২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে, যা আগের অর্থবছরের ৩৮ হাজার কোটি টাকার তুলনায় ২.৬৩ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, "জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃষি খাতে যথাযথ ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকদের সহায়তা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতেই এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।"
আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক সদর দপ্তরের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপ-গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান, প্রধান অর্থনীতিবিদ, নির্বাহী পরিচালক এবং তফসিলি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
একই অনুষ্ঠানে কৃষি ও পল্লী ঋণ কর্মসূচির কার্যকর তদারকি ও নীতিনির্ধারণে সহায়তার জন্য "ওয়েব-ভিত্তিক অ্যাগ্রি-ক্রেডিট এমআইএস সফটওয়্যার" উদ্বোধন করা হয়।
গভর্নর জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ২৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১, ২, ৮, ১০, ১২, ১৩ ও ১৫ নম্বর লক্ষ্য, সংবিধানের ১৪ ও ১৬ অনুচ্ছেদ, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১–এর সঙ্গে সম্পর্কিত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কৃষি খাতে যেকোনো পরিমাণ ঋণ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে কৃষি ও পল্লী খাতে ২.৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি রিপোর্ট সংক্রান্ত সার্ভিস চার্জ মওকুফ করা হয়েছে।
গভর্নর আরও জানান, প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে এবং সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে ২ শতাংশ ঋণ বিতরণের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি ও পল্লী ঋণের সুযোগ বিস্তারের অংশ হিসেবে নতুনভাবে কাঁঠাল, বিটরুট, শসা, কচু, কালোজিরা, ব্যাগে আদা, রসুন ও হলুদের চাষ এবং গুড় উৎপাদনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্থানভেদ ও প্রকৃত চাহিদার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো নির্ধারিত ঋণ মানদণ্ড অনুযায়ী কৃষি ঋণের পরিমাণ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে বা কমাতে পারবে।
তিনি বলেন, কৃষকদের মধ্যে কৃষি ঋণ বিতরণ ও পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী কৃষকদের পুরস্কৃত করার ব্যবস্থাও নেওয়ার কথা জানান তিনি।
গভর্নর ড. মনসুর বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগণের আয় বৃদ্ধি এবং একটি টেকসই অর্থনীতি গড়তে কৃষি ও পল্লী খাতে সময়মতো পর্যাপ্ত অর্থ সরবরাহ অত্যাবশ্যক।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই নীতিমালা ও কর্মসূচিগুলো কৃষি পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে দেশের স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।