Bangla
4 days ago

আইএমএফ শর্ত পূরণে এনবিআরের কোড অব এথিক্স চালুর প্রস্তুতি

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের চলমান ঋণ কর্মসূচির অন্যতম শর্ত পূরণে আগামী সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে আনুষ্ঠানিক নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিধিমালা (কোড অব এথিকস অ্যান্ড প্রফেশনাল কন্ডাক্ট) চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

স্বচ্ছতা ও সুশাসন উন্নয়নের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই নতুন বিধিমালার মাধ্যমে কর কর্মকর্তাদের আচরণবিধি নির্ধারণ, দুর্নীতি কমানো এবং রাজস্ব প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার সুযোগ তৈরি হবে।

বর্তমানে পর্যালোচনাধীন থাকা এই কোডে করদাতার তথ্য অ্যাক্সেস, ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ এবং ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরে নৈতিক আচরণের মানদণ্ডও নির্ধারণ করা হবে।

রাজস্ব খাতে সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যেও এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালে, একটি ছয় সদস্যের কমিটির নেতৃত্বে।

অর্থনীতিবিদ ও কর বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগকে বহু প্রতীক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, এটি রাজস্ব প্রশাসনে কাঠামোগত সংস্কার এবং পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখবে।

এই কাঠামোগত মানদণ্ড পূরণ করাও জরুরি, কারণ এর ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণের কিস্তি ছাড়।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী আগস্টের মধ্যে এই কোডের খসড়া চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান জানিয়েছেন, কোডের প্রথম খসড়া তৈরি হয়েছে এবং ঊর্ধ্বতন মহলে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এনবিআরের কাছের একাধিক সূত্র বলছে, কয়েকদিনের মধ্যেই আইএমএফের একটি মিশন বাংলাদেশে এসে কোড চূড়ান্তকরণে কারিগরি সহায়তা এবং শর্ত যথাযথভাবে পূরণ হয়েছে কিনা তা মূল্যায়ন করবে।

জাতীয়তাবাদী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে অভিহিত করেন। তবে তিনি কোড বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, "এটা যেন কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে না দেয় এবং রাজস্ব সংগ্রহে নিরুৎসাহিত না করে।"

সম্প্রতি দেশজুড়ে রাজস্ব কর্মকর্তাদের আন্দোলন, কাজ বন্ধ রাখা এবং কলমবন্দি কর্মসূচির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের পেশাগত আচরণবিধি থাকলে করদাতারা আরও ভালো সেবা পাবেন।

তবে, রাজস্ব বিভাগের অনেক কর্মকর্তাই শুধু এনবিআরের জন্য আলাদা কোড চালুর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মাঠপর্যায়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, "সব সরকারি কর্মকর্তাই চাকরি বিধিমালার অধীন। আলাদা কোডের প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝি না।"

তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, প্রস্তাবিত কোড যেন বিদ্যমান চাকরি বিধিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হয়।

এনবিআর কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, এই নতুন কোড বিদ্যমান নিয়মের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করবে না, বরং এমন কিছু আচরণবিধি নির্ধারণ করবে যা এই বিভাগে এতদিন অনুপস্থিত ছিল।

বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা এবং বিশ্ব কাস্টমস সংস্থার ‘ইন্টিগ্রিটি ডেভেলপমেন্ট গাইড’-এর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, এ ধরনের কোড প্রণয়নের সময় সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ত করা উচিত।

রেভিনিউ প্রশাসনে নৈতিকতা ও আচরণবিধি নিয়ে করা বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, "এ ধরনের অংশগ্রহণই আচরণবিধির দীর্ঘমেয়াদি সফল বাস্তবায়নের অন্যতম শর্ত।"

এছাড়া, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া, পরিচালক, এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেড বলেন, "এমন কোড চালু করলে রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এতে অপচয় কমবে, সেবার মান বাড়বে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।"

আন্তর্জাতিকভাবে রাজস্ব প্রশাসনগুলোর মধ্যে এই ধরনের কোড চালু থাকাকে ‘বেস্ট প্র্যাকটিস’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেমন, মরিশাস, পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ফিলিপাইনের রাজস্ব প্রশাসনেও এমন কোড চালু রয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশেও একই ধরনের একটি কাঠামো চালু হলে জনআস্থা বাড়বে এবং এনবিআরের কার্যক্রম আরও কার্যকর ও ন্যায়সংগত হবে। 

 

doulotakter11@gmail.com

 

 

শেয়ার করুন