আইসিইউ, সিসিইউ, লাইফ সাপোর্ট এবং ভেন্টিলেশন: কোন রোগীর কোন সেবা?

প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :

একজন রোগীর শারীরিক অবস্থা যখন চরম অবনতির পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন প্রায়ই তাকে হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। এসব বিশেষায়িত ইউনিটের মধ্যে রয়েছে আইসিউ, সিসিইউ, লাইফ সাপোর্ট কিংবা ভেন্টিলেশনের মতো নিবিড় পর্যবেক্ষণ সেবা। এসব নাম সবার কাছে পরিচিত হলেও এগুলোর বৈশিষ্ট্য কিংবা এদের মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। এবারের লেখায় জানার চেষ্টা করবো আইসিউ, সিসিইউ, লাইফ সাপোর্ট এবং ভেন্টিলেশনের বৈশিষ্ট্য এবং এগুলোর মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে।
আইসিইউ
আইসিইউ বা ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট হাসপাতালের বিশেষায়িত সেবাগুলোর মধ্যে একটি। সাধারণত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
এখানে দিনের ২৪ ঘণ্টাই নিবিড় চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয় রোগীকে। শারীরিক অবস্থা যখন চরম সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে, তখন রোগীকে আইসিউতে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
মূলত অ্যানেস্থেসিয়া বিষয়ের উপর যে পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো আইসিইউ।
শরীরের কোনো অঙ্গ যেমন- ফুসফুস, কিডনি, লিভার ইত্যাদির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যখন বিঘ্ন ঘটে, তখনই মূলত রোগীর জন্য আইসিইউ সুবিধা দরকার হয়।
সাধারণত সেপসিস, স্ট্রোক, গুরুতর আঘাত, কিংবা বড় কোনো সার্জারির পর রোগীকে আইসিউতে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া শ্বাসকষ্ট কিংবা হৃদরোগের রোগীদের ক্ষেত্রেও এই সেবা প্রযোজ্য হতে পারে।
আইসিউতে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ভেন্টিলেটর কিংবা লাইফ সাপোর্টের ব্যবস্থাও থাকে। এছাড়া বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্সদের মাধ্যমে এখানে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
একজন রোগী যাতে কোনো ধরনের সংক্রমণের শিকার না হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয় আইসিইউতে। এছাড়া রোগীর কক্ষে চিকিৎসক এবং নার্স ব্যতীত অন্য কারও প্রবেশাধিকারও থাকে নিয়ন্ত্রিত।
তবে আইসিইউ একটি অবশ্যম্ভাবী চিকিৎসাসেবা হলেও বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালেই এখনও এই সেবাটি অনুপস্থিত। এমনকি সরকারি বেশিরভাগ হাসপাতালেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আইসিইউ নেই। এতে করে হরহামেশাই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের।
সিসিইউ
সিসিইউ এর পূর্ণরূপ হলো করোনারি কেয়ার ইউনিট। তবে অনেকে এটিকে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটও বলে থাকেন। এটি আইসিইউ এর একটি বিশেষ সংস্করণ। এখানে মূলত হৃদরোগীদের বিশেষায়িত সেবা প্রদান করা হয়। শ্বাসকষ্ট কিংবা হার্টের সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছালে রোগীকে সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়।
হার্ট অ্যাটাক, হৃদস্পন্দনে অস্বাভাবিকতা, হৃদপিন্ডে দুর্বলতা কিংবা গুরুতর অ্যারিদমিয়ার ক্ষেত্রে সিসিইউ সেবা প্রদান করা হয়। মূলত আইসিইউ এর একটি বিশেষ কার্ডিয়াক ইউনিট সিসিইউ নামে পরিচিত। এছাড়া তীব্র বুকে ব্যথা নিয়ে যদি কোনও রোগী হাসপাতালে আসেন, সেক্ষেত্রে ইসিজি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রোগীকে সিসিইউতে ভর্তির জন্য পরামর্শ দিতে পারেন।
লাইফ সাপোর্ট
একজন রোগী যখন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে ব্যর্থ হয়, তখন হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটে যন্ত্রের সাহায্যে সেটির ব্যবস্থা করা হয়। এটিকে লাইফ সাপোর্ট বলা হয়।
শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস নয়, জীবন রক্ষাকারী কোনও অঙ্গ যদি তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেললে তখন যন্ত্রের সাহায্যে সেটির ব্যবস্থা করাও লাইফ সাপোর্টের অন্তর্ভুক্ত।
এখানে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ভেন্টিলেটর, কিডনির কার্যক্ষমতা রক্ষার জন্য ডায়ালাইসিস, রোগীর পুষ্টির যোগানের জন্য টিউব ফিডিং এবং ঔষধের মাধ্যমে রক্তচাপ বজায় রাখতে ভ্যাসোপ্রেসার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কিংবা মস্তিষ্কের টিউমারের জন্যও অনেকের শ্বাস-প্রশাসে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রেও লাইফ সাপোর্ট সেবা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
ভেন্টিলেশন
ভেন্টিলেশন মূলত লাইফ সাপোর্ট সেবারই একটি অংশ। যখন কোনও রোগী স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে ব্যর্থ হয়, মূলত তখনই তাকে ভেন্টিলেশনে রেখে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়।
এখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের সাহায্যে রোগীর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
ভেন্টিলেশন প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হল ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন এবং অন্যটি নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন।
যখন একজন রোগীকে মুখে একটি মাস্ক পরিয়ে তার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয় তাকে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন বলা হয়। তবে যখন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন কার্যকর হয় না, তখন রোগীর নাক বা মুখের মাধ্যমে নল ঢুকিয়ে সরাসরি শ্বাসনালীর সাথে যুক্ত করে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়। আর এই ধরনের ভেন্টিলেশনকে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন বলা হয়।

For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.