প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
গ্রীষ্মকাল মানেই যেন আম-কাঁঠালের মৌসুম। ফলের রাজা আম হলেও আম্রপালিকে বলা হয় আমের রানী। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি কেনো এই আমের নাম আম্রপালি? এর পেছনে রয়েছে এক সুন্দর ইতিহাস আছে, চলুন জেনে নিই এর নেপথ্যের গল্প।
স্বাদের দিক থেকে বিবেচনা করলে সবার প্রিয় আম্রপালি আম। আকারে বড়সর না হলেও মিষ্টির দিকে যেন সকল আমকে পেছনে ফেলে দিয়েছে আম্রপালি।
ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, প্রায় ২৫০০ বছর আগে ভারতের এক অপরুপ সুন্দরী নর্তকির নাম ছিলো আম্রপালি। লোকমুখে জানা যায়, এক নিঃসন্তান দম্পতি একদিন আম বাগানে খুঁজে পায় এক কন্যা শিশুকে। আম বাগানে কুড়িয়ে পাওয়া সেই শিশুটির নাম রাখা হয় আম্রপালি।
আম্রপালি নামকে বিশ্লেষণ করলে দুটি অর্থ পাওয়া যায়। সংস্কৃত আম্র মানে আম, এবং পালি/পল্লপ এর অর্থ হচ্ছে নতুন পাতা। সময়ের সাথে বেড়ে ওঠা আম্রপালি যেন ঠিক আমের মুকুলের মতোই তার সৌন্দর্য্য ফোটাতে শুরু করে।
কিন্তু এই সৌন্দর্য্য যেন বাবা মায়ের কাছে ব্যাপক বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, কেননা এলাকায় কিশোরী আম্রপালিকে নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ লেগে যেতো। শুধু যেন এলাকায় নয়, সময়ের সাথে দেশ-বিদেশের রাজা, রাজপুত্র সহ সবাই তার রূপে পাগল প্রায়। তাকে একনজর দেখার জন্য সবাই উদগ্রীব, এবং বাবা-মা যাকেই ফিরিয়ে দেন সেই হয়ে ওঠে শত্রু।
এমন অবস্থায় তারা বৈশালির ক্ষমতাবান ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে কন্যার বিয়ে দিতে চাইলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে আম্রপালিকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না। সেসময়ের বৈশালির একটি নিয়ম ছিল যে সর্বাঙ্গ সুন্দরী রমনী কখনো বিয়ে করতে পারবে না, তারা হতো নগরবধু। ইতিহাসে এমন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে নগরবধু বানানোর সিদ্ধান্ত যেন নেই বললেই চলে। আম্রপালির পিতামাতার কাছে সেসময়ের সমাজপতি বা রীতি অমান্য করা ছিল অকল্পনীয়।
বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মগ্রন্থেও নগরবধুর কথা উল্লেখিত রয়েছে জনপদকল্যানী হিসেবে। নগরবধু হচ্ছে অভিজাত এক রমনী যে নৃত্যকলায় পারদর্শী এবং সমাজের উচ্চবংশের মানুষ কেবল পাবেন তাকে। কিন্তু একইসাথে তিনি নিজেই নিজের সঙ্গী নির্বাচনের অধিকার রাখেন। ফলে, সভায় উপস্হিত আম্রপালি ৫ টি শর্ত রাখেন। যা হলো:
- সমাজের সবচেয়ে মনোরম জায়গায় তার ঘর নির্মাণ করতে হবে
- এক রাতের জন্য তার দর্শনী হবে ৫০০ স্বর্নমুদ্রা
- একই সময়ে কেবল একজন তার ঘরে প্রবেশা করতে পারবে
- কে তার ঘরে এল, কেইবা গেল, এই নিয়ে কেউ অনুসন্ধান করতে পারবে না
- শত্রু এবং অপরাধীর সন্ধানে সপ্তাহে কেবল একবার তার গৃহে প্রবেশ করা যাবে
সমাজপতিরা তার এসব নিঃশর্তে মেনে নেয়। নগরবধু হয়ে এভাবেই দিন দিন আম্রপালি হয়ে ওঠে বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী, যা বেশ কিছু রাজা থেকেও বেশি। সবশেষে সর্বস্ব ত্যাগ করে বুদ্ধের চরণে আশ্রয়ের আকাংক্ষা করেন তিনি এবং সবকিছু দান করে বাকি জীবন বুদ্ধের কাছেই কাটয়ে দেন এই অপরুপ রমনী আম্রপালি।
ইতিহাস ও কৃষিবিদদের মতে, এই অপরুপ নারীর সম্মানে সেরা জাতের এই আমের নাম রাখা হয়েছে আম্রপালি। ১৯৭৮ সালের ভারতের আম গবেষকরা দশোহরি এবং নিলাম এই দুই প্রজাতির আমের মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে এক নতুন জাতের আম উদ্ভাবন করেন যা এখন সবার প্রিয় আম্রপালি নামে পরিচিত।
স্বাদের দিকে আম্রপালি নিলাম বা দশোহরি থেকে অনেক ভিন্ন এবং সুস্বাদু। আকারে খানিকটা ছোট দেখতে আম্রপালির খোসা মসৃণ আর মিস্ষ্টির দিক থেকে যেন আমের রাজা ল্যাংড়া, খিরসাপাতি এবং ফজলিসহ বেশকিছু আমকে টক্কর দেয়।