Bangla
4 hours ago

আয়ুর্বেদের দুই স্তম্ভ: নিম ও তুলসীর কার্যকারিতা নিয়ে যা জানা জরুরি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

হাজার বছরের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্র ভরসা রেখেছে প্রকৃতির ভেষজ শক্তির ওপর। সেই অসংখ্য ভেষজের মাঝে দুটি নাম বারবার ফিরে আসে নিম ও তুলসী। ভারতীয় ঐতিহ্য, দৈনন্দিন আচার, ঘরোয়া চিকিৎসা থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন এই দুই গাছই গভীরভাবে যুক্ত মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে। দুটোর মধ্যেই রয়েছে শরীর পরিশোধন, রোগপ্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো এবং ত্বককে সুস্থ রাখার ক্ষমতা; তবে একেকটির রয়েছে আলাদা আলাদা শক্তি ও বিশেষত্ব।

নিম বেশি পরিচিত তার ব্যাকটেরিয়া-নাশক ও বিশুদ্ধিকরণের ক্ষমতার জন্য; আর তুলসী বিখ্যাত অ্যাডাপ্টোজেন, অর্থাৎ চাপ-উদ্বেগ সামলে শরীরকে ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনার ক্ষমতার জন্য। তাই স্বাস্থ্য ও ত্বকের সঠিক রুটিন গঠনে কোনটি বেছে নেবেন, তা বুঝতে হলে দুটোর আলাদা গুণাগুণ জানা জরুরি।

কেন নিম ও তুলসীকে আয়ুর্বেদ বলে দেহের ‘ফাইনাল ডিটক্স ডুও’

আয়ুর্বেদ ভেষজকে শ্রেণিবদ্ধ করে তাদের ‘এনার্জেটিক’ বা দোষা-সামঞ্জস্যকারী ক্ষমতার ভিত্তিতে। নিম ও তুলসী দুটোই পিত্ত প্রশমক অর্থাৎ শরীরের অতিরিক্ত গরমভাব, টক্সিন, প্রদাহ বা সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।

নিমকে ধরা হয় বিশুদ্ধকারী ও শীতলকারক, যা শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। আর তুলসীকে বলা হয় জীবনীশক্তি বাড়ানো ও পুনরুজ্জীবনের প্রতীক, যা চাপ, ক্লান্তি ও রোগব্যাধির বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।

নিম: শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্স মেশিন

'গ্রামের ফার্মেসি' নামে পরিচিত নিম গাছের প্রতিটি অংশ যেমন, পাতা, ছাল, বীজ, তেল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এতে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান।

নিমের প্রধান স্বাস্থ্যগুণ

নিম রক্ত ও লিভার পরিষ্কার করে, ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে, দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কাজ বাড়ায়। রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। নিম্বিডিন ও আজাদিরাক্টিনের মতো যৌগ শরীরকে ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে নিম। গবেষণায় দেখা গেছে, নিম অগ্ন্যাশয়ের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য রাখতে সহায়তা করে।

আবার মুখগহ্বর ও পরিপাকতন্ত্রের সুরক্ষা পাওয়া যায় নিমপাতা চিবানোর মাধ্যমে। নিমসমৃদ্ধ মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে প্লাক, দুর্গন্ধ ও মাড়ির প্রদাহ কমে। পরিপাক শক্তিও বাড়ে, পরজীবী সংক্রমণ দূর হয়। ত্বকের জন্য নিমের ভূমিকা ব্যাপক। ত্বক থেকে ময়লা ও অতিরিক্ত তেল পরিষ্কার করে এটি। ব্রণ, র‍্যাশ ও সামান্য সংক্রমণ কমায়, ক্ষত দ্রুত সারে এবং ত্বককে করে পরিষ্কার, সতেজ ও ভারসাম্যপূর্ণ।

তুলসী: সার্বিক সুস্থতার রাণী

'হোলি বেসিল' নামে পরিচিত তুলসী ভারতীয় ঘরে ঘরে পূজিত। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি এটি শরীরকে চাপ থেকে রক্ষা করে ও সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষা করে।

তুলসীর প্রধান স্বাস্থ্যগুণ

তুলসী রোগপ্রতিরোধ শক্তি বাড়ায় আর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাসবিরোধী ও ফাঙ্গাস-নাশকগুণ শরীরকে ঠান্ডা-কাশি বা ঋতুজনিত অসুখ থেকে রক্ষা করে। এছাড়া চাপ ও ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে এটি। অ্যাডাপ্টোজেন হিসেবে তুলসী কর্টিসল কমিয়ে মনকে শান্ত করে, মানসিক সহনশীলতা বাড়ায়।

শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা প্রদান করে। শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে শ্বাস সহজ করে তুলসী। রক্তচলাচল উন্নত করে হৃদযন্ত্রকে সবল রাখে, কোলেস্টেরল কমায়। হজম ও বিপাকে সহায়ক; তুলসী চা। এছাড়া হজমশক্তি বাড়ায়, ফোলাভাব কমায়, গ্যাস ও বদহজমে আরাম দেয় এবং বিপাকক্রিয়া উন্নত করে।

বৈজ্ঞানিক তুলনা: নিম বনাম তুলসী

তুলনামূলক গবেষণায় দেখা গেছে নিম কিছু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশি শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কাজ দেখিয়েছে। অপরদিকে, তুলসী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতায় এগিয়ে, যা শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য ও ত্বকের পুনর্গঠনে সহায়ক।

নিম–তুলসী: একসঙ্গে ব্যবহার করলে কেন আরও কার্যকর 

আয়ুর্বেদ ও আধুনিক গবেষণা দুটোই বলছে যে নিম শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। তুলসী সেই পরিষ্কার শরীরকে শক্তি, ভারসাম্য ও প্রতিরোধশক্তি দিয়ে পুনর্গঠন করে। তাই চা, সাপ্লিমেন্ট, ক্যাপসুল বা স্কিনকেয়ার যেভাবেই ব্যবহার করুন, দুইটি মিললে দেহ-মন-ত্বক তিনটাই উন্নত হয়।

mahmudnewaz939@gmail.com

শেয়ার করুন