Bangla
a month ago

বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিবেশবান্ধব রূপান্তরে ফের বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চালু

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশ রেলওয়ের (বিআর) কার্যক্রমকে পরিবেশবান্ধব বা “সবুজ” করতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য কারিগরি সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। 

গতকাল শনিবার (৫ এপ্রিল) রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তার বরাতে এমন তথ্য জানা যায়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি "গ্রিন রেলওয়ে ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প প্রস্তুতি সুবিধা" (Green Railway Transport Project Preparation Facility) প্রকল্পের অধীনে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। এর আওতায় একটি বৃহৎ ‘গ্রিন রেলওয়ে’ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

দেড় দশক আগে, প্রত্যাশিত সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থতা এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের কারণে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি বাংলাদেশ রেলওয়েকে সহায়তা কার্যত স্থগিত করে দিয়েছিল।

২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে সংস্থাটি "বাংলাদেশ রেলওয়ে রিফর্ম প্রোগ্রাম্যাটিক ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট" হিসেবে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিল, যা ছিল বিআরের জন্য তাদের সর্বশেষ আর্থিক সহায়তা।

যদিও এ সময় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি) এবং দক্ষিণ কোরিয়া বিআরের উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রেখেছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০০৯ সালের সংস্কার সহায়তা থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়া এবং পদ্মা সেতু দুর্নীতি কেলেঙ্কারি বিশ্বব্যাংকের সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার প্রধান কারণ ছিল।

২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তদন্তে সরকারের সন্তোষজনক সাড়া না দেওয়ার কারণে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ স্থগিত করে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এর মোট পরিচালন আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে যাত্রীসেবা থেকে এবং ২০ শতাংশ মালবাহী পরিবহন থেকে।

যাত্রীসেবার মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন সবচেয়ে বড় অবদান রাখে, যা প্রায় ৮৯ শতাংশ। আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া স্থানীয় ট্রেনের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ধারিত। বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তঃনগর ট্রেন বাড়িয়ে এবং স্থানীয় ট্রেন কমিয়ে ব্যবসায়িকভাবে পরিচালনার দিকে মনোযোগ দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবিত ৬ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার আওতায়, বিআর একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম চালাবে এবং ধারণাগত নকশা তৈরি করবে—যার মাধ্যমে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও এয়ারপোর্ট স্টেশনকে মাল্টিমোডাল হাবে রূপান্তর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মালবাহী করিডোরের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে ওয়ার্কশপ এবং কিছু রেল ইঞ্জিন ক্রয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হবে, যার মূল লক্ষ্য থাকবে কার্বন নির্গমন হ্রাস করা।

এই সম্ভাব্যতা যাচাই ও ধারণাগত নকশার ভিত্তিতে, ভবিষ্যতে বিআর মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোর ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ প্রকল্প হাতে নেবে।

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের অংশ হিসেবে কমলাপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের সুবিধার্থে বিদ্যমান অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধাদি স্থানান্তরের বিষয়সহ স্টেশন ইয়ার্ড পুনর্গঠনের জন্য একটি সম্ভাব্যতা যাচাই চালানো হবে।

তিনি বলেন, “আমরা যদি টিএ প্রকল্পটিকে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচনা করি, তাহলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণ করব। এই টিএ এবং ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলো বিআরের কার্যক্রমকে আরও পরিবেশবান্ধব করে তুলবে।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কার্বন নির্গমন হ্রাসই হবে বিশ্বব্যাংক-সহায়িত টিএ প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর প্রধান লক্ষ্য। 

kabirhumayan10@gmail.com

শেয়ার করুন