প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
সম্প্রতি দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক। দেশের মূলধারার গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- সবখানেই যেন এই নামটিতে সয়লাভ হয়ে গেছে। তবে শুধু রাসেলস ভাইপারই নয়, বাংলাদেশে দেখা মেলে আরো নানা প্রজাতির সাপ যার মধ্যে কিছু সাপ বিষধর, কিছু মৃদু বিষধর, আবার কিছু আছে নির্বিষ। চলুন এই লেখায় জেনে নেয়া যাক তেমনই কিছু সাপের প্রজাতি সম্পর্কে।
রাসেলস ভাইপার
রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে চন্দ্রবোড়া নামেও পরিচিত। অত্যন্ত বিষধর এই সাপটি দেখতে বাদামি বর্ণের, দেহ কিছুটা মোটা, মাথা ত্রিভুজাকার ও গায়ে কালচে ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে।
অন্যান্য সাপ মানুষ দেখে পালিয়ে গেলেও এই সাপ সেসময় নিজেকে বিপন্ন মনে করে মানুষের দিকে তেড়ে আসে। নদীর মোহনা কিংবা আবাদি জমিতে এদের বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
কিং কোবরা বা শঙ্খচূড়
অনেকে এই প্রজাতির সাপকে রাজগোখরা নামেও ডেকে থাকে। এই সাপ অত্যন্ত বিষধর। এটি চেনার সহজ উপায় হচ্ছে এটি আকৃতিতে বেশ লম্বা হয় এবং অন্যান্য গোখরা সাপের মতো এর ফণায় চশমার মতো অবয়ব থাকে না। এটি সাধারণত ঝোপঝাড় কিংবা বনে-জঙ্গলে বাস করে থাকে।
ক্রেইট বা শঙ্খিনী
স্থানীয়ভাবে সাপটিকে শঙ্খিনী, শাঁকিনী কিংবা কেউটে নামে ডাকা হয়। এই সাপটিও অত্যন্ত বিষধর। পৃথিবীতে এই সাপের মোট আটটি প্রজাতির মধ্যে পাঁচটি প্রজাতিই বাংলাদেশে দেখা যায়। বন-জঙ্গলের পরিবর্তে মানুষের বসতভিটার আশেপাশে থাকতে বেশি পছন্দ করে এই সাপ।
কালো নাইজার
এটি শঙ্খিনী জাতের একটি সাপ যা অত্যন্ত বিষধর। বনে-জঙ্গলে বেশি দেখা যায় এই সাপ। সিলেট, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং সুন্দরবন এলাকায় এদের বেশি দেখা যায়।
সবুজ বোড়া
ভাইপার প্রজাতির এই সাপকে গ্রিন ভাইপার এবং স্থানীয়ভাবে গাল টাউয়া নামে ডাকা হয়। এর মাথার অংশ অপেক্ষাকৃত মোটা আকৃতির হয়ে থাকে। বিষধর এই সাপটি সুন্দরবন এবং পাহাড়ি এলাকায় বেশি দেখা যায়। এটি সাধারণত মানুষের মাথায় কিংবা গায়ে দংশন করে।
দাঁড়াশ সাপ
কৃষকের বন্ধু নামে পরিচিত এসাপটিও পুরোপুরি নির্বিষ। ফসলি জমির ইঁদুর এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জীব খেয়ে এটি কৃষকের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তবে এই সাপ সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা হলো এটির লেজে বিষধর কাঁটা থাকে যা দিয়ে কারো শরীরে আঘাত করলে শরীরের ঐ অংশের পচন ধরে।
তবে ধারণাটি পুরোপুরি মিথ্যা এবং বস্তুত এর লেজে কোনো কাঁটা নেই। এছাড়া এই সাপের কোনো বিষদাঁতও নেই।
পাতি লাউডগা সাপ
এই সাপটি বেশ মৃদু বিষযুক্ত। সাপের রঙ সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। সাধারণত গাছের ডগায় থাকে ও সবুজাভ বর্ণের জন্য অনেক সময় নজরে আসে না এটি।
হুক নোজ বা বড়শি নাক
এটি একটি সামুদ্রিক সাপ এবং বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে এটিকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দেহ তামাটে ধূসর ও গায়ে নীলাভ ধূসর কিংবা কালো ব্যান্ড থাকে এই সাপের।
ইয়েলো ভেলিড
এটিও একটি সামুদ্রিক সাপ এবং অত্যন্ত বিষধর। বাংলাদেশে ২০২৩ সালে কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এ সাপ দেখা গিয়েছিল। এর পিঠ কালো এবং বুক হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে সাপ নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা হলো সাপে কামড়ালেই রোগী মারা যাবে যা সঠিক নয়। বরং দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে এনে এন্টিভেনম (সাপের বিষ ধ্বংসের ঔষধ) প্রয়োগ করা হলে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বাংলাদেশের প্রায় সকল সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে সাপের এন্টিভেনম পাওয়া যায়। অন্যথায় রোগীর প্রাণনাশ কিংবা অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটতে পারে।