Bangla
3 days ago

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ধ্বংসের মুখ থেকে ফিরেছে: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

গত এক বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের মুখ থেকে ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নেয়া বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগের ফলেই এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।

আজ রোববার (১০ আগস্ট) সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গভর্নর বলেন, “গত বছরের আগস্টে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যাংক খাত একেবারে খাদের কিনারায় ছিল।”

তিনি বলেন, “আমাদের দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল—ম্যাক্রোইকোনমি স্থিতিশীল করা এবং আর্থিক খাত সংস্কার। এক বছরে পূর্ণ সংস্কার সম্ভব নয়, তবে আমরা প্রতিটি খাতে সংস্কার শুরু করেছি।”

দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই গভর্নর আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন, যাতে ঋণ সংযোগ (লাইন অব ক্রেডিট) বজায় রাখা যায়। তিনি বলেন, “আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি—আমরা আমাদের সব পাওনা পরিশোধ করব, এবং আমরা তা করেছি। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো হয়নি।”

তিনি জানান, গত এক বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং রপ্তানি আয়ই ঋণ পরিশোধে বড় সহায়তা করেছে।

মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে গভর্নর বলেন, এটি নিয়ন্ত্রণ করা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত বছরের ১৪ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি করেনি, বরং বাজারচাপ সত্ত্বেও প্রতি ডলার ১২২ টাকায় কিনেছে।

ফলে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে এবং ভবিষ্যতে তা ৫ শতাংশের নিচে নামবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

গভর্নর আরও বলেন, এখন দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টস উদ্বৃত্তে আছে, তবে বিনিয়োগ আকর্ষণে এখনও পিছিয়ে রয়েছে অর্থনীতি। তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে বড় বিনিয়োগ আসবে না, তবে আমরা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ের জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।”

ব্যাংক কমিশন গঠন না করার বিষয়ে গভর্নর বলেন, “কমিশন করলে সিদ্ধান্ত নিতে ৬ থেকে ৯ মাস সময় লাগত। তাই আমরা তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি—ব্যাংক খাত সংস্কার, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে।”

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর জন্য ৮ থেকে ১০টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় প্রয়োজন।

তিনি জানান, বড় পরিসরে আইন সংস্কার চলছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংস্কার (যাতে সম্পদ পুনরুদ্ধারের ধারা যুক্ত করা হচ্ছে), এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহিতা ও স্বাধীনতা বাড়ানো।

এছাড়া, ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স আইন এবং অর্থ ঋণ আদালত আইনেও পরিবর্তন আনা হবে, যাতে দীর্ঘদিনের ঋণ খেলাপি মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা যায়।

গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্সও সংশোধন করা হবে, যাতে কোনো ব্যাংক অনিয়মের কারণে তারল্য সংকটে পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি সেই ব্যাংক অধিগ্রহণ করতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আর কোনো ছাড় নয়। কোনো ব্যাংক যদি সঠিকভাবে চলতে না পারে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিজের হাতে নেবে।”

তিনি আরও জানান, সব ব্যাংক পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ‘৩৬০ ডিগ্রি মনিটরিং’ সংস্থা গঠন করা হবে, যাতে সমন্বিতভাবে অনিয়ম মোকাবিলা করা যায়।

এছাড়াও গভর্নর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নগদবিহীন (ক্যাশলেস) ব্যবস্থায় রূপান্তরের ওপর জোর দেন। এ লক্ষ্যে কিউআর কোড ব্যবহারে উৎসাহ, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রসার, ক্ষুদ্র ঋণ (ন্যানো লোন), স্কুল পর্যায়ে ব্যাংকিং শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, আবাসন খাতে সংস্কার, রাজস্ব বিভাগ পুনর্গঠন এবং স্মার্টফোনের দাম কমিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং বিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন