বগুড়ায় জ্যৈষ্ঠের ফল বাজারে বাহারি ফলের সমাহার, রাসায়নিক ভাবে পাকানোতে কঠোর ভোক্তা-অধিকার
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
জ্যৈষ্ঠের উষ্ণ বাতাসে বগুড়ার ফলের বাজার যেন প্রকৃতির মঞ্চে রঙিন নাটক! ফতেহ আলী বাজার, সাথমাথা, শেরপুর ফলপট্টি, ধুনুটমোড় ও রেজিস্ট্রি অফিস মোড়ে আম, লিচু, জাম, কাঠাল, পেঁপে, আনারসের লোভনীয় সম্ভারে মুখরিত বাজার। দিনমজুর থেকে অফিস কর্মী, সবার হাতে ফলের ব্যাগ। কিন্তু এই রসালো উৎসবের মাঝে অপরিপক্ক ও রাসায়নিকভাবে পাকানো ফলের ছায়া ক্রেতাদের মনে জাগাচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকির ভয়।
ঐতিহ্যগতভাবে চৈত্রকে ‘মধুমাস’ বলা হলেও, ফলের প্রাচুর্যে জ্যৈষ্ঠ এখন এই নামে সমাদৃত। অফিস-আদালতের আপ্যায়ন থেকে শুরু করে দিনমজুর বা ইজিবাইক চালকের হাতেও দেখা যাচ্ছে ফলের ব্যাগ। এই ফলমেলা শুধু স্বাদেরই নয়, বাঙালির জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে দাম বেশি থাকায় অনেক ক্রেতাই কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তবে, এই উৎসবের মাঝেও উদ্বেগের ছায়া পড়েছে। বাজারে অপরিপক্ক, স্বাদহীন এবং রাসায়নিকভাবে পাকানো ফলের অভিযোগ ক্রেতাদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
ফলের বাজারের ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। ফতেহ আলী বাজারের ব্যবসায়ী এক ব্যাবসায়ি বলেন, “আমরা চেষ্টা করি ক্রেতাদের কাছে সেরা মানের ফল পৌঁছে দিতে। তবে কিছু কৃষক বা সরবরাহকারী অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ক ফল সরবরাহ করেন, যা আমাদের জন্যও সমস্যা তৈরি করে। আমরা চাই, প্রশাসন এই ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিক।”
শেরপুর বাসস্ট্যান্ড ফলপট্টির এক ব্যবসায়ী বলেন, “জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলের চাহিদা অনেক বেশি। আমরা ক্রেতাদের তাজা ও প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফল দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে, বাজারে কিছু রাসায়নিক পাকানো ফল মিশে যায়, যা আমাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট করে। ক্রেতাদের সচেতন হওয়া উচিত এবং আমরা নিরাপদ ফল সরবরাহে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
ক্রেতারাও তাদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন। সাথমাথা এলাকার বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলের বাজারে গেলে মন ভরে যায়, কিন্তু অনেক সময় ফল কিনে বাড়ি ফিরে দেখি স্বাদ নেই বা কৃত্রিমভাবে পাকানো। এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং ফল চেনার বিষয়ে আমাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার।”
কলোনি এলাকার গৃহিণী রহিমা বেগম বলেন, “আমরা পরিবারের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ফল কিনতে চাই। কিন্তু রাসায়নিক ফলের ভয়ে বাজারে গিয়ে দ্বিধায় পড়ি। প্রশাসন যদি নিয়মিত তদারকি করে এবং আমাদের কীভাবে ভালো ফল চিনতে হবে, সে বিষয়ে গাইডলাইন দেয়, তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে কিনতে পারব।”
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বগুড়ার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “কিছু কৃষক নির্দিষ্ট পাকার সময়ের আগেই ফল বাজারে আনছেন, যা ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে ফল পাকানোর নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আমাদের টিম বাজারে নিয়মিত তদারকি করছে এবং প্রমানিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”
তিনি আরও জানান, “ভোক্তাদের নিরাপদ ও গুণগত মানসম্পন্ন ফল সরবরাহের জন্য আমরা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। ক্রেতাদের প্রতি আমার আহ্বান, ফল কেনার সময় রঙ, গন্ধ এবং টেক্সচার যাচাই করুন এবং কোনো অনিয়ম লক্ষ্য করলে আমাদের অভিযোগ জানান।”