Bangla
10 days ago

কাউলুন ওয়ালড সিটি

বিভিন্ন সিনেমাকে অনুপ্রাণিত করা পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর

কাউলুন ওয়ালড সিটি
কাউলুন ওয়ালড সিটি

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

যদি আপনাকে কল্পনা করতে বলা হয় একটি শহর যার জনসংখ্যা ঘনত্ব ১২ লাখ প্রতি বর্গ কিলোমিটার, আপনি কি তবে তা বিশ্বাস করবেন? এবার কল্পনা করুন একটি শহর যেখানে ভবনের পর ভবন লেগোর ব্লকের মতো বসিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। নেই কোনো খেলার মাঠ, মুক্ত ভাবে একটু শ্বাস নেওয়ার স্থান যা দেখলে মনে হয় কোনো অ্যাকশন মুভি থেকে তুলে আনা যেখানে দূর ভবিষ্যতের দৃশ্য যেখানে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং সবাই একই জায়গায় পিঁপড়ের মতো গিজগিজ করে থাকছে। তেমনি একটি শহর হলো কাউলুন ওয়ালড সিটি, যেখানে একটি হাউজিং কমপ্লেক্সই যেন আলাদা একটি শহর, তাই একে ওয়ালড সিটিও ডাকা হয়ে থাকে।

কাউলুন ওয়ালড সিটি ছিল ব্রিটিশ হংকংয়ের কাউলুন শহরের সীমানার মধ্যে চীনের একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং আইন-শৃঙ্খলাহীন ছিটমহল।

চীনা সামরিক দুর্গ হিসেবে নির্মিত, ১৮৯৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছে নতুন অঞ্চলগুলো ইজারা দেওয়ার পর শহরটি একটি ছিটমহলে পরিণত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হংকংয়ের জাপানি শাসনের অবসানের পর এর জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়, যার বেশিরভাগই শরণার্থী চীনা গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসে এখানে আশ্রয় নিতে।

১৯৮০ দশকের শেষের দিকে, কাউলুন ওয়ালড সিটি ৬.৪ একর বা ২৬,০০০ বর্গমিটার বা প্রায় চারটি ফুটবল মাঠের সমান আকৃতির এলাকায় প্রায় ৩৫,০০০ বাসিন্দা বসবাস করতো।

কোনো প্রকার ব্যবস্থাপনা না থাকার ফলে শহরের বাসিন্দা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির তাদের পরিচালনার জন্য হিমশিম খেত। ছিটমহলের অরাজক প্রকৃতির কারণে, মাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যবসা সমৃদ্ধি লাভ করে।

১৯৫০ থেকে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত, এটি স্থানীয় গ্যাং ও ক্রাইম সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল এবং সেখানে জুয়া, যৌনকর্ম এবং মাদক সেবনের হার অনেক বেশি ছিল।

কাউলুন ওয়ালড সিটির প্রাথমিক জনসংখ্যা কয়েকশ'র মধ্যে উঠানামা করলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারী আদমশুমারিতে ১৯৭১ সালে এই শহরের জনসংখ্যা ১০,০০৪ এবং ১৯৮১ সালে ১৪,৬১৭ বলে অনুমান করা হয়।

১৯৮৭ সালে সরকারি জরিপ একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে। কাউলুনে তখন প্রায় ৩৩,০০০ মানুষ বাস করতো। এই জরিপের উপর ভিত্তি করে, ১৯৮৭ সালে এই শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১,২৫৫,০০০ যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থান করে তোলে।

১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার প্রাচীরবেষ্টিত শহরটি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

বাসিন্দাদের উচ্ছেদের অতি দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ হবার পর, ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে ধ্বংস শুরু হয় এবং ১৯৯৪ সালের এপ্রিলে সম্পন্ন হয়। পরবর্তী সময়ে সেখানে কাউলুন পার্ক ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে খোলা হয়।

ওয়ালড সিটি ধ্বংস করা হয়ে ফেললেও এর কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন, যার মধ্যে একটি ছোট ভবন এবং এর দক্ষিণ দিকের গেটের অবশিষ্টাংশ সংরক্ষিত রয়েছে।

১৯৮২ সালের ফিল্ম ব্রাদার্স ফ্রম দ্য ওয়াল্ড সিটি কাউলুন ওয়াল্ড সিটির পটভূমিতে তৈরি করা হয়।

১৯৮৪ সালের গ্যাংস্টার ফিল্ম লং আর্ম অফ দ্য ল-তে কাউলুনকে গ্যাং এর আশ্রয়স্থল হিসেবে দেখানো হয়েছে।

১৯৮৮ সালের ব্লাডস্পোর্ট মুভিতে শহরটি একটি মার্শাল আর্ট টুর্নামেন্টের প্লট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৯৩ সালের জ্যাকি চ্যান অভিনীত ক্রাইম স্টোরি ফিল্মটি আংশিকভাবে ওয়াল্ড সিটিতে চিত্রায়িত হয় এবং এতে ভবন বিস্ফোরণের বাস্তব দৃশ্য রয়েছে।

মজার ব্যপার হলো এই ফিল্মের শ্যুটে ভবনের বিভিন্ন বিস্ফোরণের সিন দিয়েই ওয়ালড সিটির ধ্বংস শুরু হয়। ২০০৫ সালের ব্যাটম্যান বিগিনস মুভির কিছু অংশ কাউলুন ওয়াল্ড সিটি থেকে অনুপ্রাণিত।

samiulhaquesami366@gmail.com

শেয়ার করুন