প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার মৌসুমে বন্যার সম্মুখীন হয় এদেশের নিম্নাঞ্চলের মানুষ। এসময় ভোগান্তির যেন অন্ত থাকে না বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। তবে শুধু বন্যার সময়ই নয়, বন্যা পরবর্তী সময়েও বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাদের।
এ বছর সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ। এছাড়া উত্তরবঙ্গ এবং ফেনীতে টানা বর্ষণের ফলে নদীর পানি বেড়ে গিয়ে সেসব জায়গাতেও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যার ভয়াবতায় বেশ কিছু জায়গায় স্থগিত করা হয় এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা।
তবে বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বন্যা কবলিত অঞ্চলের বাসিন্দারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো বন্যা চলে গেলেই কি সব বিপদ কেটে যায়? এক কথায় এর উত্তর হবে 'না'। কারণ বন্যার পানি চলে গেলেও ভূমিতে এর রেশ রয়ে যায় আরো বেশ কিছুদিন। আর তাই তো এসময় সচেতনতা অবলম্বন না করলে পড়তে হবে দূর্ভোগে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বন্যা পরবর্তী সময়ে মানুষের করণীয় সম্পর্কে।
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
বন্যার সময় ঘরে বিভিন্ন দূষিত জায়গা থেকে পানি প্রবেশ করে। আর তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে ঘর এবং আসবাবপত্র জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। অন্যথায় চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কৃমিনাশক ঔষধ খান
বন্যা পরবর্তী সময়ে দুই বছর কিংবা এর নিচের শিশু ব্যতীত সকল মানুষ এবং গবাদিপশুকে কৃমিনাশক ঔষধ খেতে হবে। বন্যার সময়ে খাদ্য এবং পানীয়তে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায় বিধায় বন্যা পরবর্তী সময়ে এই ঔষধ খাওয়া বাঞ্চনীয়।
বৈদ্যুতিক তার হতে সাবধান থাকুন
বন্যা কিংবা প্লাবনের ফলে বৈদ্যুতিক খুঁটি হতে তার বিচ্ছিন্ন হয়ে ভূমিতে পড়ে থাকতে পারে। এছাড়া বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশের ফলেও ঘরের বৈদ্যুতিক সংযোগে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তাই দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে এসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। অন্যথায় ঘটে যেতে পারে ভয়ংকর কোনো দূর্ঘটনা।
সাপ ও অন্যান্য প্রাণী হতে সাবধান থাকুন
বন্যা পরবর্তী সময়ে বসতবাড়ি কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাপসহ বিভিন্ন প্রাণীর উপিস্থিতি দেখা যেতে পারে। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে অবশ্যই এসব বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। প্রয়োজনে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার
প্লাবনের পানিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থাকে যা নলকূপের পানির সাথে মিশে পানি দূষণ ঘটায়। আর এ পানি আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে নলকূপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ নলকূপ চেপে পানি ফেলে দিতে হবে। এতে করে পরবর্তীতে পানি পান করার উপযুক্ত হবে।
মৃত প্রাণী মাটিতে পুঁতে ফেলুন
বন্যার পানিতে বিভিন্ন মৃত প্রাণীর মরদেহ বসতবড়ির আশেপাশে চলে আসতে পারে। তাই এ সময়ে সময়ে এসব মৃত প্রাণী মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। অন্যথায় সেগুলো বায়ু কিংবা পানির মাধ্যমে শরীরের রোগ ছড়াতে পারে।
ঘরে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করুন
বন্যা পরবর্তী সময়ে বসতবাড়িতে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব দেখা যায় যা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। তাই এসময় ঘর আবদ্ধ অবস্থায় না রেখে পর্যাপ্ত পরিমাণ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করুন।
চাষাবাদে সাবধানতা
বন্যা পরবর্তী সময়ে চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকদের বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এসময় ধানক্ষেত কিংবা অন্যান্য জমিতে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। বিশেষ করে সম্প্রতি রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এই বিষয়টিতেও কৃষকদের নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে জমিতে চাষাবাদের সময় হাঁটু পর্যন্ত শক্ত বুটজাতীয় জুতা পরা ভালো। এতে করে বিষাক্ত সাপের কামড় থেকে অনেকটাই নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন কৃষকরা।
জরুরি সেবার নম্বর মনে রাখুন
বন্যা পরবর্তী সময়ে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এম্বুলেন্স, জেলা প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা কিংবা উপজেলা হাসপাতাল ইত্যাদির নম্বর মনে রাখুন কিংবা মোবাইল বা কাগজে সংরক্ষণ করুন।
শাকসবজি ও ফলমূল ভালোভাবে ধুতে হবে
বন্যার সময় দূষিত পানিতে আবাদি জমি প্লাবিত হয়। এতে করে শাকসবজি কিংবা ফলমূলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ লেগে থাকতে পারে। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে অবশ্যই শাকসবজি এবং ফলমূল ভালোভাবে ধুয়ে তারপর খেতে হবে।