Bangla
7 months ago

বৈরী আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত কক্সবাজার উপকূল

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে সাগর। যার ফলে একের পর এক বিশাল  ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। আঘাত হানছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ঝাউবন ও বালুভর্তি জিওব্যাগে । এছাড়া জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলো জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪-৫ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে কুতুবদিয়া,  মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটা ও  কুতুবজোম এলাকায়। এছাড়াও সেন্টমার্টিনের লোকালয়ে প্রবেশ করছে সমুদ্রের জোয়ারের পানি। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন উপকূলের হাজারো মানুষ। এদিকে সমুদ্রসৈকত উত্তপ্ত থাকায়  সমুদ্রস্নানে নামতে পারছেন না ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা । সৈকত থেকে উঠিয়ে রাখা হয়েছে জেড স্কী ও কিটকট চেয়ার। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সৈকতের পাশে গড়ে উঠা অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও বন্ধ রাখা হয়েছে। 

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর পরেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ১-২ দিন অব্যাহত থাকবে। 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। জোয়ার পানি স্বাভাবিকের  চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তায় মাইকিং করছে লাইফ গার্ড ও বিচ কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা যায়, সাগর উত্তাল। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে জিও ব্যাগ ডিঙিয়ে আঘাত করছে ঝাউবাগানে। আবার জিও ব্যাগের ওপর বসে থাকা পর্যটকও ঢেউয়ের আঘাতে পড়ে যাচ্ছে। অনেক পর্যটক পানিতে নামতে চাইলেও বড় বড় ঢেউ দেখে নামছে না। অনেকে বড় ঢেউ পেছনে রেখে ছবি তুলতে চলে যাচ্ছেন। অনেক পর্যটক উত্তাল সাগর উপভোগ করছেন দূর থেকে।

ঢাকা থেকে আগত পর্যটকেরা বলেন, গত ২ দিন ধরে কক্সবাজার অবস্থান করছি । তখন সাগর এতো উত্তাল ছিল না। আজকে দেখছি সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। সাগরে গোসলে নামার উপায় নেই। মনে হচ্ছে সাগরে নামলেই ঢেউ আঘাত করে নিয়ে যাবে।
 
পর্যটক রহিম উদ্দিন বলেন, এমন সাগর আগে কোনো দিন দেখা হয়নি। এত বড় বড় ঢেউ, সাগরের এমন সৌন্দর্য দূর থেকে খুবই উপভোগ করছি। এরপরও গোসল করতে নামতে  চেয়েছিলাম, কিন্তু লাইফ গার্ড কর্মীরা নামতে বাঁধা দেয়। 
 
সমুদ্র সৈকতের লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, জোয়ারের সময় সাগর বেশি উত্তাল থাকে । পানির উচ্চতা ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই অনেক পর্যটক সাগরে গোসল করতে নামতে চাইলেও সাগর উত্তাল থাকায় কাউকে নামতে দেয়া হচ্ছে না। ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফ গার্ড ও বিচ কর্মী সবাই একযোগে কাজ করছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। 

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন সৈকত পাড়ের জেড স্কী, বিচ বাইক, ফটোগ্রাফার ও কিটকট ব্যবসায়ীরা। সাগরের বড় বড় ঢেউয়ের আঘাতে জেড স্কী উপকূলে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে উঠিয়ে রাখা হয়েছে পর্যটকদের বসার কিটকটও (ছাতা)। পর্যটক কম থাকায় ব্যবসা হচ্ছে না ফটোগ্রাফার ও বিচ বাইক চালকদের।
 
জেড স্কী চালক জাকারিয়া রহমান বলেন, সাগর খুবই উত্তাল।  যার কারণে জেড স্কী উপকূলে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যবসা এক প্রকার বন্ধ।

কিটকট ব্যবসায়ী গফুর উদ্দিন বলেন, লাবনী থেকে সুগন্ধা ও শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত কয়েকশ কিটকট ( ছাতা) বালুচর থেকে উঠিয়ে রাখা হয়েছে। এখন ব্যবসা বন্ধ করে নিরাপদে বসে আছি।
 
সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে কুতুবদিয়া, মহেশখালীতে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করছে সমুদ্রের পানি। এতে উপকূলের বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন। পানির স্রোতে অনেকের ঘরবাড়ি, গাছপালা ও মাছের ঘের তলিয়ে যাচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। 

মাতারবাড়ির বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে  ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছে ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত মাতারবাড়ি, ধলঘাটা মানুষের ভোগান্তি কাটবেনা বলে মন্তব্য করেন আমিনুল। 

এদিকে, সেন্টমার্টিনে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে ঢুকছে । ভোগান্তিতে পড়েছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। 

সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, চারদিন ধরে ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তারউপর বৈরী আবহাওয়ার ফলে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে মাছ ধরাও বন্ধ। সব মিলিয়ে চরম কষ্টে আছেন দ্বীপের প্রায় ১২ হাজার মানুষ। 
 

tahjibulanam18@gmail.com

শেয়ার করুন