প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
“ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।“
একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে দাঁড়িয়ে রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র কথাগুলো আক্ষরিক অর্থেই সত্য। ইন্টারনেটের বদৌলতে আমরা এখন আকাশের ঠিকানাতে বার্তা পাঠাই। আঙুলের ছোঁয়ায় নিজের অনুভূতি পাঠিয়ে দিতে পারি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে। কেবল শব্দ নয়, পাঠানো যায় কথা, ছবি কিংবা ভিডিও।
কিন্তু এখনো আমরা অনেকে চিঠি লিখতে চাই, চিঠি পেতে চাই। ছুঁয়ে দিতে চাই প্রিয় মানুষের লেখা প্রতিটি শব্দ। শুধু প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নয়, চিঠি লেখা যেতে পারে বন্ধুকে, বাবা-মাকে, ভাই-বোনকে। চিঠি আমাদের প্রিয় মানুষদের ভালবাসা জানানোর সেরা মাধ্যম। পোস্ট অফিস ঘুরে না যাক, হাতে হাতে হলেও কাগজে লেখা অনুভূতি পৌঁছে দিতে কার না ভালো লাগে?
চিঠির বাহ্যিক সৌন্দর্য নির্ভর করে চিঠির খামের উপর। একটি সুন্দর খাম আপনার চিঠিকে করতে পারে আরো বেশি প্রাণবন্ত। চিঠির এই সৌন্দর্যকে বাড়ানোর কথা মাথায় রেখে খাম তৈরি শুরু করেন সুবর্ণা সন্ধ্যা। বিক্রি করেন ‘খাম’ নামক ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে। শুধু খাম নয়, প্রয়োজনে গ্রাহকের শব্দগুলোকেও লিখে দেন তিনি।
সুবর্ণা সন্ধ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চুতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে ডায়েরি লিখতেন। সে ডায়েরিগুলোর কাভার পেইজকে নিজের মতো করে সাজাতেন। এক সময় নান্দনিক খামের প্রতিও আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু পছন্দসই কোনো খাম খুঁজে না পেয়ে নিজেই শুরু করেন খাম বানানো। শুরুর দিকে সেসব খাম দিতেন নিজের পরিবার ও বন্ধুদের। কখনো সেসব খামে চিঠি থাকতো, কখনো কেবলই একটি দৃষ্টিনন্দন খাম।
করোনা মহামারীর সময় বাকী সবার মতো তিনিও ঘরবন্ধী হয়ে পড়েন। তখন আরো বেশি ক্রাফটিং বিষয়ক কাজ শুরু করেন। ছোটবোনের আগ্রহে একটি ফেইসবুক পেইজও খুলেন; নাম দেন ‘খাম’। পেইজটি খুলতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। ভেবেছিলেন খুব একটা হয়তো আগ্রহী লোক পাবেন না। কিন্তু খোলার দিন বিকাল থেকেই অর্ডার পেতে শুরু করেন তিনি।
কেন মানুষ প্রযুক্তির কল্যাণে গড়ে উঠা এমন যোগাযোগ ব্যবস্থার পরেও চিঠি লেখেন? এই প্রশ্নের জবাবে সুবর্ণা সন্ধ্যা বলেন, “প্রিয় মানুষের প্রিয় জিনিসকে আগলে রাখার একটা তাড়না থাকে আমাদের। ই-মেইল কিংবা ম্যাসেঞ্জারের কোনো টেক্সটকে আমরা সেভাবে আগলে রাখতে পারি না। আমার মনে হয় এই তাড়না থেকেই মানুষ চিঠি লেখে এখনো।”
‘খাম’ এর বেশিরভাগ ক্রেতাই তরুণ-তরুণী হলেও তারা কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যই নিচ্ছে তা নয়। সুবর্ণা সন্ধ্যা জানান, “বেশিরভাগ খাম আসলে বন্ধুদের জন্য নিচ্ছে মানুষ। মায়ের জন্যও কিনেছে একজন একবার।”
তবে ঈদের সময় কার্ডও বিক্রি করেন বলে সব বয়সের ক্রেতার দেখা মেলে।
খাম বানানো কেবল আয়ের উৎস নয়, এটি সন্ধ্যার কাছে আবেগ। তাই কাজটা তিনি ভীষণ ভালবেসে করেন। এটা করতে গিয়ে কখনো ক্লান্তও হন না।
একটি খাম বানাতে যে খরচ হয় তার তুলনায় খুব সামান্যই লাভ হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “একটি খাম বানাতে আমার প্রায় ৩০ টাকা খরচ হয়, কাস্টোমাইজেশন বাদে প্রাইস শুরু হয় ৫০ টাকা থেকে। একটি খাম বানাতে প্রায় আধ-ঘন্টা সময় লাগে। সে হিসেবে আমার কিন্তু লাভ নেই। কাজটা ভালবাসি বলেই করি।”
‘খাম’ এর যাত্রা প্রায় দুই বছরের। ফলোয়ার সংখ্যা দুই হাজারের মতো। দুই বছরে এই কাজটা করতে গিয়ে চমৎকার সব অভিজ্ঞতা হয়েছে সন্ধ্যার। দু-একটা তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে।
কেউ কেউ বিদেশ থেকেও দেশে থাকা প্রিয় মানুষের জন্য খাম বা চিঠির অর্ডার দেন। প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার জন্যও অনেকে ’খাম’ এর দ্বারস্থ হন।
পড়াশুনার পাশাপাশি এই কাজটা চালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। তবুও ‘খাম’ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন সুবর্ণা সন্ধ্যা। ভবিষ্যতে একটি কফি শপ দিতে চান ঢাকায়। যেখানে শুধু কফি না, থাকবে নান্দনিক সব খামও।
mizanur2351@gmail.com