প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
পুলিশ অফিসার জাহান খান (তাসনিয়া ফারিণ) তার পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে বদলি হয়ে আসেন সিলেটে। এদিকে ঢাকা শহরে বেড়ে যাচ্ছে একের পর অপরাধ। ৫ বছর আগে খুন হওয়া ডন ইউসুফ (শরীফুল রাজ) কি তাহলে আবার ফিরে এসেছে? এ নিয়ে চলছে বিস্তর জল্পনা।
জাহান এখানে দেখতে পান লাবু মাস্টারকে, যার সাথে ইউসুফের চেহারার হুবহু মিল। কিন্তু এই ব্যক্তির ইতিহাস বা ব্যক্তিত্বের সাথে বিন্দুমাত্রও মেলে না ইউসুফের ব্যক্তিত্ব।
এদিকে থেমে নেই সুশীল শাহীনও (মিশা সওদাগর)। পুরো ঢাকার নিয়ন্ত্রণ চাই তার। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইউসুফ মৃত্যুর পরও আবার কীভাবে ফিরে আসতে পারে- তা নিয়ে তাকেও বেশ ব্যতিব্যস্ত হতে দেখা যায়।
এভাবে ধীরে ধীরে ঘটনাপ্রবাহ জমে উঠতে থাকে। এই পর্যায়ে কাহিনীতে উঠে আসে অতীত। ইউসুফের স্বাভাবিক একজন মানুষ থেকে অপরাধী হয়ে ওঠার কাহিনী। কিন্তু কীভাবে কী হলো, জাহানের বাবার হত্যার সাথে সে কীভাবে জড়িত হলো কিংবা কেনই বা সুস্থ জীবন থেকে তার এ জগতে পদার্পন - সেসবের জট খুলতে থাকে একে একে। ইউসুফের সাথে লাবু মাস্টারের কি আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে- তাও এতে পরিষ্কার হয়ে ওঠে।
ছবিতে রয়েছেন আরেক পাগলাটে ডাক্তার শমসের (মোশাররফ করিম)। আছেন সৎ পুলিশ কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন (ফজলুর রহমান বাবু)। তারাও নানাভাবে জড়িয়ে আছেন ইউসুফের জীবনের সাথে।
সিনেমায় ইউসুফ আর জাহানের বৈরিতা, তাদের উভয়ের খুঁজতে থাকা প্রতিশোধ কি আচমকা মিলে যাবে এক বিন্দুতে? শমসের ডাক্তারেরই বা কী ভূমিকা সেখানে?
এসবকিছুর উত্তর মিলবে 'ইনসাফ'-এ।
সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন সঞ্জয় সমদ্দার। বড়পর্দায় এটিই তার প্রথম কাজ। সিনেমার কাহিনী লিখেছেন নাজিম উদ দৌলা। সম্পাদনা করেছেন সীমিত রায় অন্তর। আবহসঙ্গীতে আরাফাত মহসিন।
সিনেমার আবহসঙ্গীত ও সম্পাদনা সত্যই প্রশংসার দাবি রাখে। পরিচালনায় যত্নের ছাপ ছিল, তবে আড়াই ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের সিনেমাটিতে কাহিনীর দুর্দান্ত গতি থাকলেও কাহিনীর বিল্ড আপে আরেকটু সময় দেয়া যেত।
বিশেষত ডাক্তার সমশের এর চরিত্রটি পর্যাপ্ত স্ক্রিনটাইম পায়নি। কেন এই ডাক্তার ইনসাফের জন্য রক্তের পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন- সেটার পেছনের গল্পটা দেখাতে পারলে আরও ভালো হতো। এএসপি জাহানের শাড়ি পরে ফাইট করার দৃশ্যটা 'রোমান্টিক' হতে পারে, কিন্তু এখানে তাকে ফর্মাল গেট-আপেই বেশি মানানসই হতো বলে মনে হয়। সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যগুলো আরেকটু আধুনিকতা দাবি করে, তবে বাজেট হিসেব করলে পরিচালক সাধ্যের ভেতর যতটা সম্ভব ভালো করার চেষ্টা করেছেন।
অভিনয়ে শরীফুল রাজ ছিলেন দুর্দান্ত। তার স্ক্রিন প্রেজেন্স অনবদ্য। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরমেন্স করেছেন তিনি এই সিনেমায়। ফুলকপির বড়া খেয়ে বিদায় নেয়ার দৃশ্যে কিংবা বাবার কবরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্যগুলোয় তিনি অনবদ্য।
মিশা সওদাগর সাবলীল। 'সৎ সঙ্গে সচেতন, অসৎ সঙ্গে নিকেতন' এর মতো সংলাপ দিয়ে কমিক ভাইব দিয়েছেন। টাইগার রবি ডিআইজি মিজান চরিত্রে মেপে মেপে অভিনয় করেছেন। তাসনিয়া ফারিণ চেষ্টা করেছেন ভালো করার। তাকে পুলিশের রোলে ভালো মানিয়েছে। তবে আরেকটু ন্যাচারাল হওয়ার সুযোগ তার ছিলো। ফজলুর রহমান বাবু দারুণ। আর মোশাররফ করিম অনবদ্য। হারুনুর রশীদ বান্টি, আল মনসুর, ডনসহ বাকিরা নিজ নিজ রোলে ছিলেন মানানসই।
তবে ছবির ফল ইন অ্যাকশনে গিয়ে চঞ্চল চৌধুরীর দুর্দান্ত ক্যামিও দর্শককে ভীষণ চমকে দেবে। তিনি ছিলেন ভয়ংকর সুন্দর।
ছবিতে তিনটি গান ব্যবহৃত হয়েছে। 'তোমার খেয়ালে' গানটিতে রাজ ও ফারিনের কেমিস্ট্রি বেশ ভালো জমেছে। 'ধামাকা' গানে জেফার পারফর্ম করেছেন। আর আলোচিত 'আকাশেতে লক্ষ তারা ২.০' ছিলো ছবির একদম শেষে ক্রেডিট দেখানোর সময়। তবে পুরো ছবিতে ফারিণের চরিত্রটির যে গাম্ভীর্য ও ব্যক্তিত্ব, গানটি তার সাথে যায়নি। যদিও এটি আইটেম গান নয়, বিনোদনমূলক গান হিসেবেই দেয়া।
সবমিলিয়ে, ইনসাফ মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবে দর্শকের সাথে 'ইনসাফ' করতে পেরেছে। ভালো একটি গল্প ও বিনোদন- দুটোই পাওয়া যাবে এখানে।
mahmudnewaz939@gmail.com