প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ১০ দিন ছুটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ভ্রমণে আসবেন অন্তত ৫-৬ লাখের বেশি পর্যটক৷ ইতিমধ্যে তারকা মানের হোটেলগুলোর ৮৫ শতাংশ এবং অন্যান্য হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোয় প্রায় ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এবার ঈদে কক্সবাজারে শতকোটি টাকার বানিজ্যের সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটি এবং বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সমুদ্র ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসবেন ভ্রমণপিপাসুরা। এবার ঈদে বেশ আনন্দ উল্লাসে সমুদ্র সৈকত উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকেরা৷ কারণ অন্য সময়ের চেয়ে এবার ঈদে লম্বা ছুটি পেয়েছেন চাকুরীজীবিরা। এতে আশা করা হচ্ছে অন্তত ৫-৬ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসবেন। এবং বর্ষায় ঝিমিয়ে পড়া ব্যবসাও চাঙা হবে বলে ধারণা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিন স্তরের ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে সী -সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থা ও ট্যুরিস্ট পুলিশ।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরে পর্যটকের রাত্রিযাপনের জন্য প্রায় সাড়ে পাঁচশ হোটেল মোটেল ও কটেজ এবং ফ্লাট রয়েছে। ঈদুল আযহাতে আগত পর্যটকদের বরণে এসব হোটেল -মোটেল নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। তবে এখনো অধিকাংশ হোটেলে কাঙ্খিত পর্যটকের সাড়া মিলেনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে এবার ঈদে শতকোটি টাকার বানিজ্য হবে। মূলত ৯-২০ জুন পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটক অবস্থান করবেন। এই সময়ে বেশ ভাল বানিজ্য হবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আব্দুল কাদের মিশু বলেন, ঈদের পর বেশিরভাগ পর্যটক ভ্রমণে আসবেন। ঈদ উপলক্ষে ইতিমধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন ঈদুল আযহার ছুটি ৫ জুন থেকে শুরু হলেও পর্যটকরা কক্ষ বুকিং দিচ্ছে ৯ জুন থেকে। ৯-১৩ জুন পর্যন্ত কক্সবাজারে লাখের কাছাকাছি পর্যটক অবস্থান করবে বলে তিনি আশাবাদী।
কলাতলী - মেরিন ড্রাইভ হোটেল - রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় গেল বছরের চেয়ে এবার ঈদ ছুটিতে আশানুরুপ পর্যটকের সাড়া নাও মিলতে পারে । তবে আমরা আশাবাদী। আমাদের সমিতির আওতাভুক্ত হোটেল মোটেলের এখনো ৩০-৪০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। তবে আমরা আশা করছি বৃ্ষ্টি কমলে ঈদের দুই তিনদিন পর পর্যটক সমাগম বাড়তে পারে । সেই অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
পর্যটন ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমের কারণে অন্যবারের তুলনায় এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটকের সাড়া কম মিলছে। তবুও লম্বা ছুটি থাকায় শেষদিকে কক্সবাজার পর্যটকের কোলাহলে মুখরিত থাকবে বলে আশা করছি।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভ্রমনকে আনন্দমুখর করতে প্রতিবারের মত এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।
এ বিষয়ে ট্যুরিষ্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দ দাশ বলেন, এবারের ঈদে কক্সবাজারে কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটতে পারে। পর্যটকদের ভ্রমন আনন্দমুখর করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণের পাশপাশি সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে পুলিশ অবস্থান করবে। একদিকে মোবাইল টিম অন্যদিকে সাদা পোশাকে পুলিশ সমুদ্র সৈকতে ডিউটি করবেন। তিনি আরো বলেন, আমরা পর্যটকের সেবার মান বাড়াতে স্থানীয় স্টকহোল্ডারদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। তাদেরকে সাবধান করেছি। পর্যটকদের হয়রানি থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দিয়েছি।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ২০ মে এক প্রস্তুতিমূলক সভায় ঈদের ছুটিতে যানবাহনে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয় এবং রেস্তোরাঁয় খাবারের মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এসবের বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ছুটির সময় একাধিক মোবাইল টিম পর্যটকদের সকল ধরনের হয়রানি রোধে মাঠে কাজ করবে।
ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক, মেরিন ড্রাইভ ও রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এবারের ঈদে কক্সবাজারে নিরাপদ ও আনন্দঘন ভ্রমণের পরিবেশ নিশ্চিত হবে।