Bangla
2 years ago

হলিউডের রূপালি পর্দায় থেকেও কিলিয়ান মার্ফির সাদামাটা জীবন যাপন

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

সম্প্রতি বিজ্ঞানী জুলিয়াস রর্বাট ওপেনহাইমারের জীবন আধারিত চলচ্চিত্র 'ওপেনহাইমার' সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ছবিটির পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান এবং নাম ভূমিকায় অভিনয়কারী কিলিয়ান মার্ফি তাই এখন নেটপাড়াতে উঠে এসেছেন শীর্ষে। সাড়া ফেলে দেয়া চলচ্চিত্রটি নতুন আলোচনায় এনেছে তাদের ব্যক্তিগত জীবনকেও। 

ক্রিস্টোফার নোলানের সাথে কিলিয়ান মার্ফির পরিচয়টা হয় ২০০৩ সালে। তখন 'ডার্ক নাইট ট্রিলজি' করার জন্যে ব্যাটম্যানের, মানে ব্রুসের চরিত্রের জন্যে নতুন মুখ খুঁজছিলেন। অডিশন দিতে এলেন কিলিয়ান মার্ফি।

কিন্তু কোনো এক কারনে কিলিয়ানের আর ব্যাটম্যান হওয়াটা হলো না। কিন্তু নোলানের চোখ আটকে রইলো মার্ফিতেই। কিলিয়ান মার্ফির মাথা ন্যাড়া আর চোখ জ্বলজ্বলে একটা ছবি কিছুতেই তিনি ভুলতে পারছিলেন না।

অগত্যা তার মার্ফিকে পছন্দ হলো স্কেয়ারক্রোর চরিত্রের জন্য। সেই দিয়ে শুরু নোলানের মার্ফিকাব্য। পর পর ৫টি ছবিতে ক্রিস্টোফার নোলানের সাথে মার্ফির কাজ করা, যদিও প্রথমবার ওপেনহাইমারে তার শীর্ষ ভূমিকায় অভিনয়। তবে এটা ছিল হলিউড কোনো অভিনেতার দীর্ঘসূত্রে নোলানের সাথে কাজ করা, যেটা যেকোনো হলিউডির কাছে স্বপ্নের মতো। 

ক্রিস্টোফার নোলান চলচ্চিত্র নির্মাণে ধ্রুপদী পথে চলতেই বিশ্বাসী। আজকের দিনে থেকেও ভিএফএক্সের ব্যবহার থেকে তিনি থাকেন শত হাত দূরে। বাস্তব শট নেয়া বেশি পছন্দের। ছবি শ্যুট করতে আজও তার পছন্দ আইম্যাক্স।

নিজের সিনেমার স্ক্রিপ তৈরি করেন নিজেই। এমন কম্পিউটারে পাণ্ডুলিপি লেখেন, যাতে নেই কোনো ইন্টারনেট সংযোগ, যা আজকের দিনে অকল্পনীয়।

ক্রিস্টোফার নোলান নিজের কাজ নিয়ে বিভোর থাকেন, তাতে যেন যতি পতন না ঘটে তাই নিজেকে দূরে রেখেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে। এমনকি ব্যবহার করেন না ইমেইল। তার কুশীলবদের সাথে যোগাযোগ দূরালাপনে নয়তো সশরীরে উপস্থিত হয়ে। খুব জনাকীর্ণতাও এড়িয়ে চলেন। মোটে ৪জন লোক নিয়ে তার প্রোডাকশন হাউস, যাতে আছেন তিনি নিজে আর তার সহধর্মিনী এমা থমাস। 

কিলিয়ান মার্ফির হলিউডে পা রাখাটা বেশ নাটকীয়। ছিলেন ওকালতির ছাত্র, অকৃতকার্য হয়ে গড়ে ফেললেন গানের ব্যান্ড। গাইয়ে থেকে থিয়েটারে পা, তা থেকেই ধীরে ধীরে হলিউডে অভিষেক ঘটে টুয়েন্টি এইট ডেস লেটার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। 

কিলিয়ান মার্ফি ব্যক্তিজীবনে ভীষন রহস্যময়, নিজেকে আড়াল করে রাখতে বেশি ভালোবাসেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে তার নেই কোনো আনাগোনা। খ্যাতির পেছনে ছোটেন না কখনো। স্বভাবে বেশ ঘরোয়া। এমন কোনো কাজ হাতে নেন না, যাতে করে পরিবারের থেকে খুব দূরে থাকতে হয়।

ভক্তদের সাথে ছবি তুললেও ইতোস্তত বোধ করেন, পাছে তার ব্যক্তিগত জীবন লোকের কাছে খেলো হয়ে যায়! তিনি মনে করেন আজকের যুগে আমরা চারপাশে ক্যামেরার চাদরে মুড়ে আছি, এই অবস্থাটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। 

অনেকের ধারণা হলিউডের কোনো অভিনেতা শুধু এক নারীতে আসক্ত থাকতে পারেন না, এই ধারণাটি যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন কিলিয়ান মার্ফি। সফলতার পথে হাঁটতে বহু পরিশ্রম করেছেন মার্ফি আর এই যাত্রায় তার চিরকালের সঙ্গী তার স্ত্রী ইভান ম্যাকগিনেস। তিনি অনেক সাক্ষাৎকারে ইভানের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। মার্ফি বাড়িতে যতটা সময় থাকেন সকলের যত্ন নেন, ইভানের সাথে রান্না করে আর বাচ্চাদের সাথে তার সময়টা বেশ কেটে যায়।

আমেরিকান অভিনেতা হয়েও নিজেকে আইরিশ বলে পরিচয় দিতে ভীষন ভালোবাসেন মার্ফি। চান সন্তানেরা আইরিশ বোলেই কথা বলুক, তাই দুই সন্তানকে দাদু-দাদির কাছে রাখতে চান। তিনি চাননি কখনো তারা অভিনয় জগতে পা রাখুক, তাই নিজের অভিনয় সন্তানদের দেখতে দেন না। 

কিলিয়ান মার্ফি তার অভিনীত চরিত্রগুলিতে নিজের শতভাগ ঢেলে দেবার চেষ্টা করেন । তাতে মাঝে মাঝে কিছু ত্যাগ করতেও হয়।

ম্যাড কাউ রোগে আক্রান্ত হবার ভয়ে মার্ফি দীর্ঘকাল নিরামিষাশী ছিলেন। কিন্তু পিকি ব্লাইন্ডারে টমি শেলবির চরিত্রের জন্য মাংসাহার করতে হয়েছিল কিছুকাল, তবে এখন তিনি আবার নিরামিষভোজী।

পিকি ব্লাইন্ডারের প্রতিটি সিজনে তাকে হাজারটার মতো সিগারেট ফুঁকতে হয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, তার কোনোটাই তামাকের ছিল না, সব ছিল নেহাতই কিছু ভেষজের তৈরি, যাতে ছিল না ক্যান্সারের কোনো বীজ। 

roysushmitadiba@gmail.com

শেয়ার করুন