প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে মিয়ানমারে নির্মাণসামগ্রী পাচারের ঘটনায় অবশেষে মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অফিস সহকারী বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় এই মামলা করেন বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
এবিষয়ে ওসি বলেন, মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জেলা প্রশাসনের নিয়োগকৃত সেন্টমার্টিন পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ আশিকুর রহমান, অপর আসামি সেন্টমার্টিন দ্বীপের নারী ইউপি সদস্য এবং সেন্টমার্টিন পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রের সভাপতি মাহফুজা আক্তারকে। এজাহারে ৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় নথিপত্র জালিয়াতি এবং মিয়ানমারে পণ্য পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নথিপত্র জালিয়াতি করে একটি চক্র মিয়ানমারে সিমেন্ট, টিন পাচার করেছে। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এরইমধ্যে দীর্ঘ দিন চোরাচালানে জড়িত ৮ সদস্যের একটি চক্রের নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে একটি সিন্ডিকেট গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে নেয়ার পথে মিয়ানমারে পাচার করে এসব নির্মাণসামগ্রী। এ ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসনের নিয়োগ করা সেন্টমার্টিন পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ আশিকুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হওয়ায় সেখানে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে কোনো নির্মাণসামগ্রী নৌরুটে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতিপত্র সংগ্রহের আইনগত বিধি রয়েছে।
সেন্টমার্টিনে রয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একটি পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলা প্রশাসনের পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রটি ভেঙে গেলে মেরামতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সম্প্রতি টেকনাফের ইউএনও সেন্টমার্টিনে যান। যেখানে ভেঙে যাওয়া কেন্দ্রটি সংস্কারের দাবি ওঠে। এর প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ টিআর প্রকল্পের অধীনে পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ওই বরাদ্দের অনুকূলে ইউএনও কেন্দ্রের ইনচার্জ আশিকুর রহমানকে কিছু নির্মাণসামগ্রী সেন্টমার্টিনে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন।
গত ২৮ এপ্রিল ৯টি শর্তে ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন অনুমতিপত্রটি দেন। যেখানে ৯ বাইন টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ২০ ব্যাগ সিমেন্ট, ৩০ কার্টন টাইলস এবং ৩০০ ফুট বালি দ্বীপে নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। অনুমতিপত্রটি গ্রহণকারী কর্মচারী আশিকুর রহমান ছাড়াও অনুলিপি দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক,
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক, কোস্টগার্ডের টেকনাফ অথবা সেন্টমার্টিন স্টেশন কমান্ডার, বিজিবির টেকনাফ বিওপির কোম্পানি কমান্ডার, টেকনাফ থানার ওসি, সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে।
আর সেই অনুমতিপত্রটি জালিয়াতি করে প্রদানপূর্বক ৩০ এপ্রিল টেকনাফের কেরুণতলী ঘাটে মোহাম্মদ আলম নামের সেন্টমার্টিনের এক বাসিন্দার মালিকানাধীন একটি ট্রলারে বোঝাই করা হয় নির্মাণসামগ্রী। যেখানে অনুমতিপত্রে উল্লেখ থাকা নির্মাণসামগ্রীর অতিরিক্ত বোঝাই করা হয়।
ওই অনুমতিপত্রে জালিয়াতির প্রমাণ মিলে। যেখানে যার স্মারক নম্বরটির সব ঠিক থাকলেও দুইটি স্থানে করা হয়েছে জালিয়াতি। যার একটি স্মারক নম্বর ইউএনও কার্যালয় থেকে পাওয়া স্মারকটি সকল নম্বর ঠিক রেখে দুইটি অঙ্ক পরিবর্তন করা হয়েছে। যেখানে ৮১৭ স্থলে রয়েছে ৮১৬। আর সামগ্রীর তালিকায় ৯ বাইন টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ৩০ কার্টন টাইলস এবং ৩০০ ফুট বালি পরিবর্তন করা না হলেও সিমেন্ট ২০ ব্যাগের স্থানে ৪০০ ব্যাগ লেখা হয়েছে। আর সেসব সামগ্রী দ্বীপে না নিয়ে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে পাচার করে দেয়া হয়েছে।