প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
আমাদের উঠানের কিংবা রাস্তার ধারে গাছের ডালে হেলেদুলে উঁকি দিতে থাকা জবা ফুলকে অনেকেই শুধুই অলঙ্কারিক ফুল ভেবে ভুল করেন। সনাতন ধর্ম পদ্ধতিতে জবা ফুল পূজার উপকরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত যার স্থান দেবীর বেদিতে। অথচ এই সাধারণ মনে হওয়া ফুলটির ভেতর লুকিয়ে আছে বহু ভেষজ গুণ।
প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী (গ্রিক) চিকিৎসায় জবা ফুলের বহুমুখী ব্যবহার দেখা যায়। পানীয় হিসেবে জবা ফুলের ব্যবহার বেশ আগে থেকেই ছিল। বিশেষ করে জবা ফুল দিয়ে তৈরি চা বর্তমানে শুধু স্বাস্থ্যসচেতনদের বিকল্প পানীয়ই নয়, বরং একটি কার্যকর ঘরোয়া ওষুধও বটে।
একটি কাপ, সামান্য সময় আর কয়েকটি পাঁপড়ি—এই সামান্য আয়োজনেই শুরু হতে পারে এক কাপ গরম চায়ের সুস্বাস্থ্যের গল্প। জবা ফুলের চায়ের হরেকরকম উপকারিতা আছে। উল্লেখযোগ্য দিকগুলো বলতে গেলে-
মেয়েদের হরমোনের ভারসাম্য বজায়
আয়ুর্বেদ মতে, জবা ফুল নারীদের হরমোন সংক্রান্ত অনেক সমস্যার জন্য উপকারী। মাসিকের অনিয়ম, পিসিওএস কিংবা অতিরিক্ত রক্তস্রাবের সমস্যায় জবা চা নিয়মিত পান করলে উপশম মিলতে পারে।
মানসিক চাপ ও ঘুমের সমস্যা দূর
জবা ফুলে থাকা প্রাকৃতিক ফ্ল্যাভোনয়েড ও ট্রাইটারপেনয়েড উপাদান স্নায়ুকে শিথিল করে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ হালকা গরম জবা ফুলের চা পান করলে ঘুম গভীর হয়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা ও ব্রণ কমাতে সহায়ক
জবা ফুলে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা রক্ত পরিষ্কার করে ত্বকে ব্রণের প্রবণতা হ্রাস করে। সেই সঙ্গে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্যরেখা প্রতিরোধ করে।
চুল পড়া ও খুশকি প্রতিরোধে কার্যকর
জবা ফুল বহুদিন ধরেই চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর চা রক্তে পুষ্টি যোগায় এবং মাথার তালুতে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে।
হজমে সহায়ক
জবা ফুলের চা হালকা টনিকের মতো কাজ করে। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কিছুটা কমিয়ে আনে।
জবা ফুলের চা তৈরিতে যা লাগবে
২–৩টি তাজা দেশি জাতের জবা ফুল। রঙ লাল, গোলাপি বা সাদা যেকোনো হতে পারে। অবশ্যই রাসায়নিকমুক্ত হতে হবে। সাথে ১ কাপ পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও সামান্য মধু বা আদার রস চাইলে ব্যবহার করা যায় সাথে ১-২টি পুদিনা পাতা।
প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে জবা ফুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন, বিশেষত পাঁপড়ির ভেতরের অংশে যাতে ধুলো-মাটি বা পোকামাকড় না থাকে। এরপরে বিশুদ্ধ পানি ভালো করে ফুটিয়ে নিন এবং গরম পানিতে জবা ফুলের পাঁপড়ি ছেড়ে দিন।
এখন, ঢেকে রেখে দিন ৫–৭ মিনিট। যখন আপনি দেখবেন পানির রঙ ধীরে ধীরে হালকা গোলাপি বা লালচে হয়ে যাচ্ছে। তখনই ছেঁকে নিন। এছাড়াও চাইলে একটু মধু বা এক চিমটি আদার রস, পুদিনা পাতা মিশিয়ে নিতে পারেন। অবশেষে, হালকা গরম অবস্থায় পরিবেশন করুন।
কিছু সতর্কতা
যদিও এটি একটি প্রাকৃতিক পানীয়, তবে গর্ভবতী নারীরা এবং যারা ওষুধে সংবেদনশীল, অথবা মনে করেন জবা ফুলের সংস্পর্শে অ্যালার্জি হতে পারে, তারা জবা ফুলের চা গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে এই চা সেবন করবেন। এছাড়াও, চা তৈরিতে রাসায়নিক স্প্রে দেওয়া ফুল কখনোই ব্যবহার করবেন না। বলে রাখা ভালো, হাইব্রিড জাতের জবা ফুল এই রেসিপির জন্য প্রযোজ্য নয়।