প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
শহরের রাস্তায়, পার্কের মোড়ে প্রায়ই দেখা যায় একগুচ্ছ স্বচ্ছ আর চকচকে বেলুনের গুচ্ছ হাতে ফেরি করে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে হকার। স্বচ্ছ প্লাস্টিকের চকচকে বেলুনের উপর নানা আঙ্গিকের রঙ্গিন নকশা আর টাইপোগ্রাফি বেলুনগুচ্ছকে কেমন একটা শৈল্পিক এবং নান্দনিক রূপ দান করে। ফলে আমাদের সময়ের ছেলেমেয়েরা এর চাকচিক্যময় স্বচ্ছতায় মোহিত হয়ে নাম দিয়েছে ‘ঝিলিমিলি বেলুন’।
বেলুনের গুচ্ছ একটি আলাদা বেলুনের চেয়ে বেশি নান্দনিক আভা দেয়। ফলে গোটা গুচ্ছ কিনে নেয়ার সামর্থ না থাকায় গোটা বেলুন গুচ্ছের সঙ্গে একটি ছবি তুলেই ক্ষান্ত হয় অনেকে।
বেলুন নিয়ে বাচ্চাদের উচ্ছ্বাস খুবই সাধারণ বিষয়। তবে এবার ঘটেছে সবচেয়ে অসাধারণ অঘটন। ঝিলিমিলি বেলুনের সাথে তরুণ-তরুণীর গড়ে ওঠেছে আবেগঘটন রোম্যান্টিক সম্পর্ক। প্রত্যাশিতভাবেই, অন্য সব কিছুর মতোই এবার বেলুনগুলোও সাইবার স্পেসে তাদের ‘স্পেস’ করে নিয়েছে বেশ ভালোভাবেই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝিলিমিলি বেলুন আলোড়ন তোলে যখন একজন হাতে দুটি বেলুনসহ তার প্রিয়জনের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘যখন আমি দেখলাম সে একটি ঝিলিমিলি বেলুনের দিকে তাকিয়ে হাসছে, তখন আমি সারা শহর ঘুরে আমার ঝিলিমিলিকে (প্রেমিকা) একটি ঝিলিমিলি (বেলুন) এনে দিলাম।’
বেলুনের সঙ্গে আবেগঘন রোম্যান্টিক সম্পর্ক কতটা গভীর হয়ে উঠেছে তা সহজেই অনুমান করা যায়, যখন কেউ তার প্রিয়জনকে আদর করে ‘ঝিলিমিলি’ বলে সম্বোধন করে।
এছাড়া একজন ফেসবুকে লিখেছে, ‘আপনারা ‘ঝিলিমিলি’ বেলুন না চেয়ে বরং আমাকে চান, আমাকে পেলে আপনার গোটা জীবনই ঝিলিমিলি হয়ে যাবে।’ এছাড়া বিভিন্ন জন নানাভাবে এইসব বেলুনের সঙ্গে নিজেদের রঙিন আর রোম্যান্টিক সব আবেগ প্রকাশ করছে।
এদিকে কেউ কেউ বেলুনের হকারে জীবন এবং বেলুন সম্পর্কিত রোম্যান্টিক হাইপ উল্লেখ করে জীবনের গূঢ় বাস্তবতার চিত্রও তুলে ধরতে চেয়েছেন।
উদাহরণসরূপ, শামস রহমান নামে একজন বেলুনের হকার এবং বেলুনের সঙ্গে ছবি তুলতে থাকা তরুণীদের একটি স্থিরচিত্র ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘অ্যাস্থেটিসিজম ওভার এসেনশিয়ালিটি।’ সত্যিই তাই।
ঝিলিমিলি বেলুন নিয়ে আমাদের যে রঙিন রোমান্টিসিজম তার ছিটেফোটাও পড়ে না তার জীবনে যার জীবিকা নির্ভর করে কয়টি বেলুন সে বিক্রি করতে পারে তার উপর। বেলুনের উপর নির্ভর করে হকারের পুরো পরিবার। নির্ভর করে তার সন্তানের পড়াশোনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ঝিলিমিলি বেলুনের হকার আফজাল হোসাইন (৪৮) কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর চাকরি হারিয়ে বেলুনের হকার হতে বাধ্য হয়েছেন। "আমি খুব কষ্টে আমার সংসার চালাই, ছেলের পড়াশোনা পড়াশোনার খরচ ঠিকঠাক দিতে পারিনা।’ -আফজাল হোসেন বলেন।
আমাদের আনন্দের অনুষঙ্গ আর রোম্যান্টিক ভাবাবেগযুক্ত ‘ঝিলিমিলি’ বেলুনের মুদ্রার অপর পিঠে জড়িয়ে আছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাহিক জীবনের বেচে থাকার সংগ্রাম। সেদিকটা হয়তো আমাদের চেতনা আর দৃষ্টি দুটোরই অগোচরে থেকে যায়।
riaz65070@gmail.com