প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও ক্ষতিগ্রস্তদের সম্মাননা, পুনর্বাসন এবং আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মোট ৮টি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার বেশি।
পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সমাজ সুরক্ষা, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, আবাসন এবং স্মারক নির্মাণের বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে এই প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদ পরিবারের জীবনমান উন্নয়নই এসব উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
ছয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীন থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অনুমোদন ও বরাদ্দ ছাড়াই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা করা যায়।
এডিপি বই বিশ্লেষণে দেখা যায় — সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
আবাসন প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দ
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ২ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ঢাকার মিরপুরের ৯ এবং ১৬ নম্বর সেকশনে মোট ২৫টি ১৪ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। শহীদ পরিবারকে ১২৫০ বর্গফুট এবং ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত আহতদের ১০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
এই প্রকল্প এলাকায় স্কুল, মসজিদ, বাজার, কমিউনিটি সেন্টার, খেলার মাঠ এবং পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ আধুনিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। চলতি বছরই নির্মাণকাজ শুরু করে ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সমাজসেবা ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসন
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ক্ষতিগ্রস্তদের সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাবলম্বিতা’ শীর্ষক ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। এর আওতায় আহত ও আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং ক্ষমতায়ন সেবা দেওয়া হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে সমাজসেবা অধিদপ্তর। মেয়াদ: ডিসেম্বর ২০২৭ পর্যন্ত।
নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের চিহ্নিত করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এটি বাস্তবায়ন করবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর।
ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রচার
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আন্দোলন সংক্রান্ত তথ্য-চিত্র, ভিডিও, সাক্ষাৎকার ও স্মৃতিকথা সংরক্ষণের জন্য দুটি প্রকল্প নিয়েছে। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ ৪৯ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশি-বিদেশি ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন সংগ্রহ করবে। নথিপত্র ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর ৪৭ কোটি ২৮ লাখ টাকায় ‘ডিজিটাল ওরাল হিস্ট্রি আর্কাইভ’ তৈরি করবে। যেখানে শহীদ, আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতা সংরক্ষিত থাকবে।
দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও স্বনিয়োজিত কর্মসংস্থান
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের দক্ষতা প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে।
শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদদের কবরস্থানে সমাধিফলক নির্মাণ করবে। এতে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও দেওয়া হবে।
এই প্রকল্পগুলো বৈষম্যবিরোধী ঐতিহাসিক আন্দোলনের বিস্তৃত প্রভাব মোকাবিলায় এক সমন্বিত, বহুমাত্রিক সরকারি উদ্যোগের অংশ। যেখানে আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং শহীদদের স্মরণ — সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
jahid.rn@gmail.com