Bangla
2 days ago

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার ভিডিও বার্তা

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে এক আবেগঘন ভাষণে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। 

আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে এক ভিডিও বার্তায় এ বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা। 

তিনি এই দিনটিকে “জাতির পুনর্জাগরণ ও গণজাগরণের প্রতীক” হিসেবে অভিহিত করেন এবং জুলাই শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পাঁচই অগস্ট শুধু একটি বিশেষ দিবস নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন।” 

তিনি স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের এবং সেই একই চেতনায় জুলাই ২০২৪-এ যারা জীবন দিয়েছেন বা আহত হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগকেও ঐতিহাসিক বলেও উল্লেখ করেন।

ভাষণে তিনি তুলে ধরেন গত ১৬ বছরের শাসনামলে ঘটে যাওয়া দুঃশাসন, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এবং কোটা ভিত্তিক বৈষম্যের চিত্র। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই সময়ের অবিচার ও হতাশার কথাও উঠে আসে। তিনি বলেন, “ভালো ফল করেও বহু তরুণ চাকরির জন্য ক্ষমতাসীনদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। ঘুষ বা মাফিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়া চাকরি পাওয়া ছিল অসম্ভব।”

তিনি জানান, “সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিচারব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এমনকি গণমাধ্যমেও একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়েছিল যারা স্বৈরাচারী শাসনের পক্ষে কাজ করত।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা যখন গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তখন সরকার গুলি চালায়, গ্রেপ্তার করে, এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে তথ্য লুকাতে চায়।” তিনি উল্লেখ করেন যে বহু আন্দোলনকারী হাসপাতালে চিকিৎসাও পায়নি, কারণ সরকারি নির্দেশনায় তাদের ভর্তি করতে নিষেধ করা হয়।

এই প্রেক্ষাপটে শহীদ ও আহতদের কল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ তুলে ধরেন তিনি। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৭৭৫টি শহীদ পরিবারকে ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা প্রদান করা হয়েছে। ১৩ হাজার ৮০০ জন আহত ‘জুলাইযোদ্ধাকে’ নগদ অর্থসহ মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। ৭৮ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে, যেখানে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতালসহ নির্ধারিত হাসপাতালে আহতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভাষণের শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই শহীদদের আত্মত্যাগ তখনই স্বার্থক হবে, যখন আমরা একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারব।” 

তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা নির্যাতনের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে গণতন্ত্র, সুবিচার ও জনকল্যাণের পথে অবিচল থাকে।

তিনি জাতির উদ্দেশে শপথ ঘোষণা করেন, “জুলাই শহীদদের স্বপ্নই হবে আমাদের আগামী বাংলাদেশের নির্মাণ রেখা।”

শেয়ার করুন