প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
শাহ সুজা মসজিদ, কারো কারো কাছে পরিচিত 'সুরা মসজিদ' হিসেবে। অনেকে আবার বলেন 'সৌর মসজিদ'। আবার 'গায়েবি মসজিদ' বলেও ডাকে অনেকে!
মুসলিম স্থাপত্যকলার অনন্য এ নিদর্শন এই মসজিদ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর ধরে।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৪নং ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের চৌরগাছা মৌজায় এ মসজিদের অবস্থান। নানান জেলার নানান মতের মানুষ স্থাপত্যশৈলী দেখতে ছুটে আসেন এ মসজিদে। প্রাচীন এ মসজিদের এর নামকরণ নিয়েও রয়েছে নানান জনশ্রুতি।
স্থানীয়দের মতে, শত শত বছর আগে জিন জাতি একরাতে এ মসজিদ নির্মাণ করেছে। এর স্থাপত্যশৈলী ও কারুকার্য দেখে অনেক ইতিহাসবিদরা মনে করেন, ১৬ শতকে সুলতানি আমলে হোসেন শাহীর শাসনকালে এটি নির্মাণ করা হয়। সে অনুয়াযী মসজিদটির বয়স প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর। অনেকে বলেন, মুঘল আমলে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা এ মসজিদ নির্মাণ করেছেন। তাই একে শাহ সুজা মসজিদ বলে ডাকা হয়।
নির্মাণ কাঠামো
মসজিদটির নির্মাণ বা স্থাপত্য দেখলে অনুমান করা যায় মসজিদটি সুলতান হোসেন শাহ-এর আমলের নিদর্শন।
মসজিদটির মূল কাঠামো বা গড়ন ৪ ফুট উঁচু একটি প্ল্যাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আয়তনে বাইরে দিক থেকে উত্তর-দক্ষিণে ৪০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২৬ ফুট, আছে চারটি গম্বুজ।
পুরো মসজিদের দেয়ালে মৌলিক টেরাকোটার নান্দনিক অলংকরণ করা আছে। মসজিদটির ওপরে বর্গাকার এক গম্বুজবিশিষ্ট নামাজ কক্ষ এবং পূর্ব ভাগে ছোট তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি বারান্দা রয়েছে। প্রধান কক্ষ ১৬ ফুট। চুন সুরকির সাহায্যে ছোট আকৃতির ইট দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদের দেয়াল। নামাজ কক্ষের চার কোণে চারটি ও বারান্দায় দুটি কালো পাথরের মিনার রয়েছে।
মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে তিনটি, উত্তর দক্ষিণে একটি ও বারান্দার উভয়পাশে একটি করে প্রবেশ পথ আছে। মসজিদের ভেতরে কেবলা দেয়ালে তিনটি সুন্দরভাবে অলংকৃত পাথরের তৈরি অবতল মেহরাব রয়েছে। মসজিদের ইটের সঙ্গে পাথরের ব্যবহার, দেয়ালের মাঝে পাথরের স্তম্ভ, ইটের গাঁথুনি চোখে পড়ার মতো।
প্রত্যেক দরজার নিচে ১৬ বর্গফুটের প্রধান কক্ষসহ চৌকাঠগুলো পাথরের তৈরি। পূর্ব পাশে মসজিদে প্রবেশের সিঁড়ি আছে। এখানকার কালো ও বেলে পাথর বাংলার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত রাজমহল থেকে আনা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
মসজিদের আশেপাশের পরিবেশ
অভূতপূর্ব নির্মাণশৈলি ছাড়াও মসজিদের উত্তর পাশে ৩৫০X২০০ গজ আয়তনের একটি দিঘি রয়েছে। দিঘির পশ্চিম এবং উত্তর পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি কবর। এ ছাড়া এখানে রয়েছে একটি ঈদগাহ মাঠ। মাঠের পাশে বিশাল আকৃতির দুটি তেঁতুলগাছ আছে যা পুরো এলাকায় ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় অনেকের মতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ প্রাচীন মসজিদে এসে মানত করলে মানুষের ইচ্ছা পূরণ হয়। প্রায় প্রতি শুক্রবারেই এখানে থাকে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন যাকে উৎসব বললেও ভুল বলা হবেনা।
যেভাবে যাওয়া যাবে
দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ১০৬ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। উপজেলা পরিষদ ওসমানপুর বাজার থেকে ভ্যান অথবা অটোরিকশায় ঘোড়াঘাট-হিলি রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে। রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই এ মসজিদের দেখা মিলবে।