প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
ভারতের রাজস্থান রাজ্যের বিকান শহর হতে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেশনোক। এই দেশনোকেই রয়েছে কারণি মাতা মন্দির। মন্দিরটির বিশেষত্ব হলো, এখানে ২৫-৩০ হাজার ইঁদুর বাস করে এবং ভক্তরা ইঁদুরের কাছে নিবেদন করা খাবারকেই প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করে। এটি সবার কাছে পরিচিত ‘ইঁদুরের মন্দির’ হিসেবে।
জনশ্রুতি রয়েছে, ১৪৪৪ সনে রাজপুত চারণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন কারণি মাতা। ছোট থেকেই ঐশ্বরিক শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি।স্থানীয়রা তাকে দেবী দুর্গার অবতার মনে করতেন।
কিশোরী বয়সে দেবাজীর সাথে বিয়ে হয় তার। কিন্তু কারণি মাতা সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। একারণে তার ছোট বোন গুলাবের সাথে পুনঃবিবাহ হয় দেবাজীর।
তাদের চারজন সন্তান ছিল।এদের মধ্যে লক্ষণরাজ ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয়। লক্ষণরাজ কপিল সরোবরে ডুবে মারা গেলে কারণি মাতা যমরাজের কাছে তার মৃত পুত্রকে জীবিত ফেরত চান। যমরাজ আবেদন মঞ্জুর করলেও এবং মৃত সন্তানকে ইঁদুর হিসাবে পুনর্জন্ম দেন। তখন থেকে কারণি মাতার সাধনার জায়গায় ইঁদুরের প্রভাব বাড়তে থাকে। এরপর কারণি মাতার রহস্যজনক অন্তর্ধান হলে সেখানে রাও বিকা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।
মন্দিরটিতে কালো ও সাদা রংয়ের ইঁদুর রয়েছে।কালো ইঁদুরগুলোকে বলা হয় কাব্বাস। এরা মাতার বংশধর। অপরদিকে সাদা ইঁদুরগুলোকে কারণি মাতার সন্তান মনে করা হয়।
এখানে ইঁদুরেরা অবাধ বিচরণ করে ও ভক্তদের কোনো ক্ষতি করে না। মন্দিরে ভক্তরা সাদা ইঁদুরের দর্শন পেলে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করে। এই মন্দিরে কোনো পুরোহিত নেই। ভক্তরা মন্দিরে এসে কারণি মাতাকে দর্শন করেন এবং ইঁদুরের জন্য দুধ ও মিষ্টিজাতীয় খাবার নিয়ে আসেন।
ইঁদুরকে খাবার দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। পরে ইঁদুরের এটো করা খাবারই ভক্তরা প্রসাদ হিসাবে খেয়ে থাকেন। এই প্রসাদকে ভক্তরা পবিত্র মনে করেন।
মন্দিরটি ভোর পাঁচটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে যারা আসেন তাদের কিছু শর্ত মানতে হয়।
প্রথমত, মন্দিরে এসে কোনো ইঁদুরকে বিরক্ত করা যাবে না ও ভয় পাওয়া যাবে না। যদি কোনো ইঁদুর ভক্তের কারণে মারা যায় তাহলে তাকে সেই ইঁদুরের সমান ওজনের সোনার ইঁদুর মন্দির কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। মন্দিরটির চারপাশে বেষ্টনী রয়েছে যাতে অন্য প্রাণীরা ইঁদুরের ক্ষতি না করে।
সারাবছরেই রাজস্থানসহ ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তরা আসেন মন্দিরে।তবে কারণি মাতা উৎসবের সময় ভক্তসমাগম বেশি ঘটে। স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, ইঁদুরের প্রসাদ খেয়ে ভক্তদের কোনো ক্ষতি হয়নি।বরং কথিত আছে অনেক জটিল রোগী এই প্রসাদ খেয়ে উপশম পেয়েছেন।
aurnobprashad456@gmail.com