Bangla
4 days ago

কক্সবাজার উপকূলে ২.৭৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, দ্রুত মেরামতের দাবি

ফাইল ছবি।
ফাইল ছবি।

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের তোড়ে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সদরের ভারুয়াখালীতে ২ দশমিক ৭৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত কয়েকদিন ধরে  সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। এতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ -৫ ফুট উচ্চতায় বেড়েছে। জোয়ারের পানির তোড়ে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের অন্তত ২৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জোয়ারের পানির আঘাতে  মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ৯০৫ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কুতুবদিয়ায় ক্ষতির শিকার হয় ১ দশমিক ৬৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ  এবং সদরের ভারুয়াখালীতে ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানান, শুক্রবার (৩০মে)  সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ১৬৭ মিলিমিটার। শনিবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র এখনো উত্তাল আছে, এবং ৩ নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত অব্যাহত রয়েছে। সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ সমুদ্র উপকূলের অন্তত ১৫টি এলাকায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া।

ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দারা জানান, বর্ষার আগে দুর্বল বেড়িবাঁধ বা অকেজো স্থান মেরামত করা হলে মানুষ রক্ষা পেতো। এখন দুর্যোগের সময় বেড়িবাঁধ মেরামত করে কিছুই হবেনা,  ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত না হলে বারবার ক্ষতির মুখে পড়বে স্থানীয়রা। এসব বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। 

কুতুবদিয়া দক্ষিণ আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে কবি জসীম উদ্দিন  উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে বেড়িবাঁধ লাগোয়া বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদ্যুৎ প্রকল্প ভবনের দক্ষিণ পাশে ৫০ মিটারের মতো ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। এতে এই ইউনিয়নের পূর্বপাড়া, সন্দ্বীপীপাড়া, হাইস্কুলপাড়া ও শান্তি বাজার এলাকা অন্তত ৩-৪ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান শফিউল আলম কুতুবী জানান, তাঁর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধসংলগ্ন মৌলভীপাড়া ও মফজল আহমদপাড়ার অন্তত ২০০ বাড়িতে পানি ঢুকেছে। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছে শতশত মানুষ। একইভাবে উপজেলার উত্তর ধুরং ইউনিয়নের মিয়ারাকাটা ও দক্ষিণ ধুরংয়ের বাতিঘরপাড়া এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে কুতুবদিয়ায় উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়। যেসব গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে, সেসব এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি সব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমা বলেন, বায়ুবিদ্যুৎ এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ওঠানামা করছে। দ্বীপের ৭-৮ পয়েন্টে বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব ভাঙা অংশ দ্রুত মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোর্শেদ জানান, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫টি  ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের তোড়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। 

আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে।   শনিবার ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি রয়েছে। 

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় ৯০৫ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কুতুবদিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ দশমিক ৬৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং সদরের ভারুয়াখালীতে ২০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকছে সাগরে পানি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব বেড়িবাঁধ অংশ মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান নুরুল ইসলাম।  

এদিকে, নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শেষাংশে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতায় মেরিন ড্রাইভে আঘাত হানছে। এতে টেকনাফ অংশের দুই কিলোমিটারের বিভিন্ন জায়গায় চারটি অংশে ভাঙন ধরেছে। ভাঙন প্রতিরোধে দেওয়া জিও টিউব ব্যাগ ফুটো হয়ে ক্রমেই বিলীন হচ্ছে। 

tahjibulanam18@gmail.com

শেয়ার করুন