Bangla
a year ago

কম দামে ভালো মানের শাড়ির খোঁজে

Representational image
Representational image

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

পোশাক হিসেবে শাড়ির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। দেশ হোক কিংবা বিদেশ, দেশি কিংবা বিদেশিদের মাঝে শাড়ির কদর সবখানেই আছে। শাড়ি বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী হোক কি পূর্ববঙ্গের, সবাই একই ধারণা পোষণ করে। আমাদের বাংলা সাহিত্যে, কবিতা-গানে শাড়ির উল্লেখ এবং এর বিভিন্ন বর্ণনায় যে মাহাত্ম্য প্রকাশ পায় তাতে শাড়ির সাথে বাংলার মানুষের আবেগ জড়িত।  

শাড়ি প্রেমিকেরা শাড়ি পরতে, শাড়ির বিষয়ে খুঁটিনাটি জানতে সবসময়ই আগ্রহী। শাড়ি শব্দের উচ্চারণ হতেই, একদলকে দেখা যাবে গবেষণায় বসে গেছে। আমাদের আজকের লেখনীর বিষয়ও শাড়িই। বাংলাদেশে প্রায় সবখানেই শাড়ি পাওয়া যায়। বিশেষ এলাকার বিশেষ শাড়ির দোকানও খুব কম নয়। ঢাকায় বড় বড় শপিং মল, ব্র্যান্ডেড শপ ও অনলাইনেও নিত্য নতুন শাড়ির ছড়াছড়ি। তবে শাড়ির লোকাল মার্কেট কোথায় তা কি সবার জানা? কোথায় আপনি সস্তায় সেরা মানের শাড়ি পেতে পারেন তা দেখে নেওয়া যাক আজকের লেখায়।  

ঢাকার অদূরে ডেমরায় জামদানির হাট 

ঢাকার অদূরে ডেমরার প্রায় ২০০-৩০০ বছরের ঐতিহ্য ‘ডেমরা বাজার জামদানি হাট’। বালু নদের পাড়ে গড়ে ওঠা এই হাট বসে প্রতি বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। নারায়নঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকার স্থানীয় তাঁতিরা এখানে তাদের তৈরি জামদানি বিক্রি করতে আসেন।

তবে দেশ বিদেশ থেকে ক্রেতারা আসেন। বিভিন্ন জেলার শাড়ি ব্যবসায়ীরা মধ্য রাতে ভীর জমান এই হাটে। এমনকি ভারতের কলকাতা থেকেও ব্যবসায়ীরাও পূজার সময় এখানে আসেন।

এখানে ৩০০ টাকা থেকে শুরু হয় শাড়ির দাম। বাহারি নকশার, বিভিন্ন দামের জামদানি রয়েছে। বেশি বিক্রি হয় ২০০০-৫০০০ টাকার শাড়িগুলো। ছোট বড় সবধরণের উদ্যোক্তা সাশ্রয়ী মূল্যে এই হাট থেকে জামদানি কিনে অনলাইনে অধিক লাভে বিক্রি করে থাকেন।

এছাড়া, সাধারণ ক্রেতাদেরও নিয়মিত দেখা যায় এই হাটে। ডেমরার স্থানীয় এক উদ্যোক্তা মহসিনা আলম জানান, “করোনার মধ্যে বিয়ের পর ঘরে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে অনলাইন ব্যবসা শুরু করি। গ্রাহকদের মাঝে জামদানি শাড়ির চাহিদা এবং আমার হাতের কাছেই এই হাট-এর সন্ধান পাওয়ায় অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করি ব্যবসা।” 

ঢাকার মিরপুরে বেনারসি পল্লীতে 

প্রায় ১০০ বছরেরও পুরনো দোকান-পাট মিরপুর বেনারসি পল্লীতে। বেনারসি পল্লী জনপ্রিয় বিয়ের বাজারের জন্য। মিরপুর ১০, ১১ ঘিরে প্রায় শ’খানেক বেনারসি শাড়ির দোকান আছে। নিজস্ব কারিগর দিয়েই তৈরি হয় কাতান, বেনারসি, জর্জেট, সিল্ক, হাফসিল্ক, সুতি সব ধরণের শাড়ি। 

এখানে যেমন চড়া দামের শাড়ি আছে, তেমনি আছে সাধ্যের মধ্যে চমৎকার সংগ্রহ। কম করে হলেও এখানে ৮০০-১০০০ টাকা থেকে কাতান শাড়ি পাওয়া যায়। বিয়ের শাড়ি হিসেবে কাতান, বেনারসী ৪০০০ টাকা থেকে শুরু। এছাড়াও, ২০০০-৫০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন পছন্দসই ডিজাইনার শাড়ি পাওয়া যায়। বেনারসি পল্লীতে বিয়ে ছাড়াও অন্যান্য সময়েও শাড়ির চাহিদা থাকে। 

জামদানির নগরী, নারায়নগঞ্জ  

ঢাকার নিকটে নারায়নগঞ্জের তারাবো পৌরসভার নোয়াপাড়ায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) জামদানি শিল্পনগরী ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত। এখানে হাজারের বেশি দোকান আছে জামদানির। সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার জামদানি শাড়ি তৈরি করে স্থানীয় বয়নশিল্পীরা। 

১০০০ টাকা থেকে শুরু করে কাজ, নকশা এবং সুতোর ভেদে ৩০০০, ৫০০০, ১০০০০ হাজারের মধ্যে এমন সব জামদানি পাওয়া সম্ভব যা আপনি কল্পনাও করতে পারেন না। এখানে কেউ একবার আসলে ২০ হাজার থেকে ৬০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করে তবেই দম নেন।

একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত জান্নাতুন নাহার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটি কোর্সের শিক্ষকের মাধ্যমে জামদানী পল্লীর সাথে পরিচিত হই। এরপর কয়েকবার এসেছি জামদানি কিনতে। শেষবার পরিবারসমেত এসে প্রায় ৪০ হাজার টাকায় ১০-১২টি শাড়ি কিনেছি।” 

এছাড়া বিসিকের উদ্যোগে নোয়াপাড়া জামদানি হাট বসে প্রতি শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। স্বল্প মূল্যে সেরা জামদানি হাকিয়ে নেওয়ার বড় সুযোগ এই হাট। 

টাঙ্গাইলের বিখ্যাত তাঁতের শাড়ি 

দেশীয় শাড়ির চাহিদা এখন ঢের গুণ বেড়েছে অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে। ঢাকাই জামদানি ও মসলিনের পর যে শাড়ি বাংলাদেশের গর্ব তা হলো টাঙ্গাইল শাড়ি। সম্প্রতি টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের জিআই পণ্যর স্বীকৃতি পাওয়ার ইস্যুতে তাঁতিদের হাতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ির কদর অনেক বেড়েছে।

টাঙ্গাইলের করোটিয়া উপজেলা, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়ন, বাজিতপুর গ্রাম ইত্যাদি স্থান এই শাড়ির প্রধানতম উৎস। স্থানীয় তাঁতিরা বংশ পরম্পরায় তৈরি করে চলেছে হাফ সিল্ক, পিওর সিল্ক, সুতি, মসলিন টেক্সচারের টাঙ্গাইল শাড়ি। এছাড়াও পুরো টাঙ্গাইলেই রয়েছে টাঙ্গাইল শাড়ির সমাহার তবে এই দুই জায়গায় হাট বসার কারণে এর পরিচিতি রয়েছে এখন দেশব্যাপী।

এখানের শাড়ির দাম শুরু হয় ৫০০-১০০০ টাকা থেকে। আবার ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকাও হতে পারে। সুতো ও কাজভেদে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত ঠেকতে পারে এর দাম।

তবে অধিক বিক্রিত  ১৫০০-২০০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত দামের শাড়িগুলো। কলকাতাতেও টাঙ্গাইল শড়ির চাহিদা থাকায় অহরহ কলকাতার ব্যবসায়ীরা টাঙ্গাইলের হাটগুলোতে আসেন। ঈদ, পূজা, বৈশাখ যেকোনো দেশীয় উৎসবে টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা সবচেয়ে উপরে থাকে। 

রাজশাহীর রেশমি সিল্ক

রাজশাহী সিল্ক নামে বিখ্যাত শাড়ির প্রতি আকর্ষণ নেই এমন কেউ কি আছে? রাজশাহী সিল্কের আছে আলাদা আভিজাত্য। রাজশাহীতে সপুরা সিল্ক মিলস সিল্কের শাড়ি উৎপাদনের জন্য দেশব্যাপী জনপ্রিয়।

শহরের বিসিক এলাকায় তাদের কারখানার সঙ্গেই রয়েছে বিশাল বিক্রয়কেন্দ্র যেখানে পিওর সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক, বলাকা সিল্ক, ক্রেপ সিল্ক, তসর সিল্ক, সফট সিল্ক, ধুপিয়ান সিল্ক ইত্যাদি সিল্কের শাড়ি পাওয়া যায়।

শুধু শাড়ি নয়, সিল্কের থান কাপড়ও পাওয়া যায়, চাইলে কেউ কম খরচে মন মতো নকশা করে শাড়ি বানিয়ে নিতে পারে।

শাড়ি এখানে বিভিন্ন দামের রয়েছে। শুরু ১৮০০-২০০০ টাকা থেকে। চোখ ধাঁধানো সিল্কের শাড়ির পশরা সপুরা সিল্কেই পাওয়া যায়। এখানে গজ কাপড় ৫০০ থেকে ১০০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, উষা সিল্ক, দোয়েল সিল্ক ইত্যাদি দোকানেও হাতের নাগালের মধ্যে শাড়ি আছে। 

মণিপুরি শাড়ির রাজ্যে, সিলেট  

সিলেটের লামা বাজার মনিপুরি মার্কেট, মাধবপুর, শ্রীমঙ্গলের মনিপুরি পাড়া মনিপুড়ি শাড়ির বিশাল বাজার। সিলেট জেলার অনন্য বৈশিষ্ট এবং দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে মণিপুরি শাড়ির দোকানগুলোও অন্তর্ভূক্ত। শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, মৌলভিবাজার, সিলেটের যেকোনো জেলাতেই মনিপুরি শাড়ির সমারোহ চোখে পড়বে। 

টেম্পল পাড়, শিউলি, গঙ্গা যমুনা পাড় ইত্যাদি মনিপুরি নজরকাড়া নকশায় এখানে সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। যেমন ৭০০-৮০০ টাকায় সাধারণ মণিপুরি, ১২০০-১৮০০ টাকায় শাড়ির জমিনে কাজ করা এবং এর চেয়ে বেশি দামে গঙ্গা যমুনা পাড়ের শাড়ি থেকে শুরু করে ভারী নকশার শাড়ি পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে। তাই সিলেট গেলে মনিপুরি শাড়ি কিনতে ভুলবেন না যেন!  

বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে শাড়ির বাজার বেশ সরগরম থাকে। তখন খরচাও বেশি হয়। কিন্তু যদি একটু বুদ্ধি করে আগে থেকে, কিংবা অফ-সিজনে এই লোকাল মার্কেটে যাওা যায়, তাহলে মন ভরে কম খরচে অনেক শাড়ি কেনা সম্ভব। এছাড়াও, এসব উৎপত্তিস্থল থেকে শাড়ি কিনলে অনেকেই লাভবান হবেন।

afranawmi@yahoo.com

শেয়ার করুন