Bangla
3 days ago

কর প্রশাসনে ডিজিটাল রূপান্তরের সুফল শুরু

রাজস্ব সংস্কার, কর ডিজিটালায়ন ও বাণিজ্য ছাড়প্রক্রিয়ায় কর প্রশাসনে নতুন গতি

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

গত এক বছরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত কর প্রশাসনের ডিজিটালায়নের তিনটি বড় পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই সুফল দিতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে বাণিজ্য সংক্রান্ত ডকুমেন্টেশন দ্রুততর হয়েছে এবং কর আহরণে দুর্নীতির ফাঁকফোকর বন্ধ হচ্ছে।

এই অগ্রগতি মূলত পূর্বের দুর্নীতির সুযোগে ভরা ম্যানুয়াল বা কাগজে-কলমে প্রক্রিয়া থেকে  ভার্চুয়াল বা অনলাইন কার্যক্রমে করদাতাদের আস্থার পুনঃস্থাপন ঘটিয়েছে। 

রাজস্ব ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনের ফলে কর প্রদানে ভোগান্তি কমে এসেছে এবং শুল্কবন্দর থেকে পণ্যমুক্তি দ্রুততর হচ্ছে।

এই উদ্যোগগুলো যদি স্থায়ী করা যায়, তাহলে করদাতা ও কর কর্মকর্তাদের মধ্যে বেআইনি লেনদেনের সুযোগ হ্রাস পাবে এবং শুল্কবন্দরে পণ্যমুক্তির সময়ও কমে আসবে।

ডিজিটালাইজেশনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত পদক্ষেপ সমূহের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি করদাতাদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা; কর ফাইল অডিটের জন্য ম্যানুয়াল নির্বাচন বন্ধ; এবং বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) গেটওয়ের মাধ্যমে আমদানি সনদ, লাইসেন্স ও অনুমতিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু পেশার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিলবাধ্যতামূলক হওয়ায় ২০২৫ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে এটি তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের ৪ আগস্ট থেকে সব ব্যক্তি করদাতার জন্যই রিটার্ন অনলাইনে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিএসডব্লিউ চালু হওয়ার পর থেকে ৪ লাখ ৩১ হাজার ১৬৯টি সনদ, লাইসেন্স ও অনুমতি অনলাইনে গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পণ্য মুক্তির প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। অডিট ফাইল নির্বাচন পুরোপুরি ডিজিটাল হওয়ার বিষয়টিও বড় অগ্রগতি, কারণ পূর্বে এই প্রক্রিয়া ছিল দুর্নীতির উৎস।

এনবিআর-এর তথ্য মতে, "ট্যাক্স জাস্টিস"-এর ধারণা অনুযায়ী প্রতি সার্কেলের মাত্র শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ রিটার্ন অডিটের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, যার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৯৪টি। শিগগিরই ঝুঁকিভিত্তিক অডিট নির্বাচনের প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণরূপে অটোমেটেড করা হবে।

এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে কর প্রদানের সময় ও ব্যয় কমে আসবে এবং করদাতারা আরও উৎসাহিত হবেন কর দিতে। তবে এর জন্য নতুন রাজনৈতিক সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন, যা আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে আসবে বলে প্রত্যাশা।

তবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সংস্কারবিরোধী আন্দোলনের জের ধরে সরকারের দেওয়া শাস্তির মুখে কর্মকর্তারা এখনো আতঙ্কিত, বিস্মিত এবং চরম মনোবলহীন অবস্থায় রয়েছেন। তাদের এ আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা জরুরি। 

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মে ও জুনে এনবিআরকে দুই ভাগে বিভক্ত করার একটি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে রাজস্ব প্রশাসনে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়।

যদিও এনবিআরের রাজস্ব আয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত এক দশকে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি (২ দশমিক ৫৬ শতাংশ) অর্জন করেছে (শুধু কোভিড-১৯ বছর বাদে), তবুও কর কর্মকর্তারা এবং ব্যবসায়ীরা বিশ্বাস করেন, এ বছর পরিস্থিতির উন্নতি হবে যদি কর কর্মকর্তাদের কাজের স্পৃহা ফিরিয়ে আনা যায়।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে বলেন, "২০২৪ সালকে অন্যান্য স্বাভাবিক অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না, কারণ বছরের শেষের দিকে কর সংগ্রহে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর বিকল্প নেই, কিন্তু কর বিভাগে সংস্কারে এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।"

বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও আলীহুসেন আকবরালি বলেন, কর রিটার্ন অনলাইনে পূরণ করতে এখনো অনেক সময় লাগে, এটি আরও উন্নত করা উচিত।

তিনি বলেন, “সিঙ্গাপুরের আয়কর রিটার্ন ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের একটি আদর্শ হতে পারে, যেখানে করদাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি, সিডিবিএলসহ সব তথ্য কর কর্মকর্তারা এক জায়গায় পেয়ে যান। এমন একটি সফটওয়্যার থাকা উচিত যা রিটার্নে প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে বড় অমিল থাকলে তা কর কর্তৃপক্ষকে জানাবে তদন্তের জন্য।”

শনিবার দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেন, ডিজিটালাইজেশনের সুফল ধীরে ধীরে আসবে, কারণ এনবিআর এখন ইন্টিগ্রেশন এবং ইন্টারঅপারেবিলিটি নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

আংশিক অটোমেশনের অভিযোগ সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, "সরকারের অন্যান্য বিভাগগুলোকেও একই গতিতে ডিজিটালাইজ করতে হবে, যাতে কর কর্মকর্তারা রিটার্নে প্রদত্ত সব তথ্য সহজেই পেতে পারেন।"

তিনি আরও জানান, কর প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ করতে বন্ডেড গুদাম সুবিধা এবং বিদেশি নাগরিকদের জন্য কর ছাড়প্রাপ্তি প্রক্রিয়া সরলীকরণের মতো আরও কিছু ডিজিটাল পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

doulotakter11@gmail.com

শেয়ার করুন