প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ভারতে রয়েছে নানা ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী একটি গ্রাম যার নাম ‘কুল্ধারা’। রাজস্থান রাজ্যের জয়সলমীর শহর হতে ১৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। প্রায় ২০০ বছর ধরে জনশূন্য রয়েছে গ্রামটি।
১২৯১ সালে পালি জনপদ হতে আগত কুল্ধর গোত্রের পালিওয়াল ব্রাহ্মণরা গোড়াপত্তন ঘটান গ্রামটির। তারা মরুর এই স্থানটিতে পুকুর কেটে, কুয়ো খুঁড়ে পরিকল্পনামাফিক নদীর জল ব্যবহার করে কৃষিকাজ শুরু করেন। অল্প দিনের মধ্যেই গ্রামটি একটি সমৃদ্ধ স্থানে পরিণত হয় এবং এর সুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
কিন্তু কুল্ধারার মানুষের এই সুখ সহ্য হয়নি জয়সলমীর রাজ্যের অত্যাচারী দেওয়ান সালিম সিংয়ের। কর আদায়ে এমন কোনো হীন কাজ নেই যা তিনি করতেন না।
জনশ্রুতি আছে, একবার এই সালিম সিংয়ের কুনজর পড়ে কুল্ধারা গ্রামপ্রধানের মেয়ের উপর। যেকোনো মূল্যে মেয়েটিকে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রামবাসীর ওপর চাপিয়ে দেন অসম্ভব করের বোঝা। শর্ত দেন, কর পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে পেয়াদা পাঠিয়ে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার।
গ্রামের মানুষ অতিরিক্ত করের বোঝা থেকে বাঁচতে ও মেয়ের সম্মান রক্ষার্থে এক রাতের মধ্যে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি ১৮২৫ সালের দিকে ঘটে।এক রাতের মধ্যে প্রায় ১৫০০ গ্রামবাসী কোথায় হারিয়ে গেলেন তা আর জানা যায়নি।
অনেকের মতে, যোধপুর শহরের কাছাকাছি কোনো স্থানে বসতি স্থাপন করে তারা। কিন্তু এর কোনো সত্যতা নেই। যেন কোনো অজানা জাদুবিদ্যায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যান তারা।
এরপর সালিম সিং আবারও গ্রাম বসাতে চেয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনি। কেননা এখানে কেউ রাত কাটাতে পারত না। অনেকের মৃত্যর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু কেন এমন ঘটনা ঘটে তার সঠিক কারণ জানা যায নি।
তবে অনেকের মতে পালিওয়াল ব্রাহ্মণদের অভিশাপ রয়েছে গ্রামের ওপর। তারাই গ্রাম ত্যাগের সময় অভিশাপ দিয়েছিলেন যাতে এখানে আর জনবসতি না গড়ে ওঠে।একারণেই গ্রামটিতে ঘটে ভৌতিক ও অদ্ভুত সব ঘটনা।
কুল্ধারার অস্বাভাবিক ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাও পরিচালিত হয়েছে। ২০১৩ সালে দিল্লীর প্যারানরমাল সোসাইটির কয়েকজন সদস্য রাত কাটিয়েছেন এখানে। তাদের অভিজ্ঞতাও সুখকর ছিল না। ক্ষণে ক্ষণে আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়া, বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসা সহ নানা বিচিত্র ঘটনার সাক্ষী হন তারা।
বর্তমানে গ্রামটিকে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর একটি হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করেছে। দেশ- বিদেশের বিভিন্ন পর্যটক সারা বছরব্যাপী স্থানটিতে আসে। তবে এখানে বিকাল চারটার পর কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় না।