Bangla
2 years ago

মাংসপেশিতে টান: প্রতিকারে করণীয়

ছবি: দা ওল্ড ফার্মারস আলমানাক ওয়েবসাইট থেকে
ছবি: দা ওল্ড ফার্মারস আলমানাক ওয়েবসাইট থেকে

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

হাত, পা বা ঘাড়ের মাংসপেশিতে কখনো টান ধরেনি এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। ঘুমের মাঝে, অনেকক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে, সকালে হাটার সময় এই সমস্যাটি বেশি হতে দেখা যায়। পায়ের কাফ মাসল বা পায়ের পিছনের মাংসপেশি, হাত, পিঠ,  ঘাড় এমনকি মুখের মাংসপেশিতেও টান পড়তে দেখা যায়।

মাসল ক্রাম্প কি

মাংসপেশিতে টানকে খাতা কলমের ভাষায় বলা হয় মাসল স্পাসম বা মাসল ক্রাম্প। মাংসপেশিতে হঠাৎ অনৈচ্ছিক সংকোচনের ফলে ব্যাথা হয়। এই ব্যথা কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আবার অনেক সময় আরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। মাসল ক্রাম্প বেশি হয় পায়ের পিছনের কাফ মাসলে। রাতে কাফ মাসলে এই টান ধরাকে বলা হয় ‘নক্টারনাল লেগ ক্রাম্প’। মাসল ক্রাম্পের তীব্রতা খুব মৃদু থেকে শুরু করে তীব্র ব্যাথা, পেশি শক্ত হয়ে থাকতে পারে।

মাসল ক্রাম্প কেন হয়

মাসল ক্রাম্প বসে থাকা, শুয়ে থাকা, ঘুম, ব্যায়াম করা এমন যেকোনো সময় যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। তবে বয়স্কদের ও নারীদের বেশি হতে দেখা যায়। একটানা অনেক সময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা, অনেক বেশি ব্যায়াম করা বা শারিরীক কসরত করা, দেহে ইলেকট্রোলাইড এর ভারসাম্যহীনতা, পানিশূন্যতা, অনেক বেশি সময় একটানা কাজ করা এগুলোর জন্য মাসল ক্রাম্প হতে পারে। 

এছাড়াও স্নায়ু বা মাংসপেশির কোনো অসুখ থাকলে মাসল ক্রাম্প হয়ে থাকে। কখনো কখনো কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপও মাসল ক্রাম্প হতে দেখা যায়। ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা হলো দেহে মিনারেল বা খনিজ পদার্থের ভারসাম্যহীনতা। দেহে মিনারেল ও পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে মাংসপেশি ও স্নায়ু ঠিকমত কাজ করতে পারে না। ফলে মাসল স্পাজম হয়ে থাকে। 

অনেক সময় ধরে শারীরিক কসরত করলে,ব্যায়াম করার আগে ঠিকঠাক স্ট্রেচিং না করলে, অনেক গরম আবহাওয়াতে ব্যায়াম করলে খেলোয়াড় বা এথলেটদের মাঝে মাসল ক্রাম্পের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও কিছু ডাইউরেটিক জাতীয় ঔষধ এবং পারকিনসন্স ডিজিজ এর কিছু ঔষধ ইত্যাদি  ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে মাসল ক্রাম্প হয়।

মাসল ক্রাম্প হলে করণীয় 

যেকোনো সময় যেকোনো বয়সের মানুষের মাসল ক্রাম্প হতে পারে। এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের মাঝে আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পেশি রিল্যাক্স বা শিথিল করার চেষ্টা করতে হবে। পায়ের পিছনের পেশিতে ব্যথা হলে আস্তে আস্তে পা সোজা করার চেষ্টা করতে হবে। হাত বা ম্যাসাজ রোলার দিয়ে ধীরে ধীরে পেশি মালিশ করতে হবে। পায়ের নিচে বালিশ ব্যবহার করে পা উঁচু করে রাখা যেতে পারে। আস্তে আস্তে দাঁড়ানো বা হাঁটার চেষ্টা করতে হবে। 

চিকিৎসা 

মাসল ক্রাম্প কিছু সময় পর আপনা আপনি ঠিক হয়ে যায়। যদি এটা ঠিক না হয়, যদি পেশি ফুলে যায়, পেশির চামড়ার রঙ পরিবর্তন হয়, শরীরের অন্য কোথাও ব্যাথা হয় তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। সাধারণত মাসল রিলাক্সান্ট বা মাংসপেশি শিথিল করার ঔষধ দেওয়া হয়। এছাড়াও ব্যথা কমানোর ঔষধ দেওয়া হয়। এছাড়া যদি ঘন ঘন পেশিতে টান পরলে ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি খাবার ও ঔষধও খেতে বলা হয়। 

মাসল ক্রাম্প প্রতিরোধে করণীয় 

মাসল ক্রাম্প প্রতিরোধ করতে নিয়মিত কিছুক্ষণ হাঁটার অভ্যাস করা উচিত। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। তাহলে মাসল ক্রাম্প হওয়া কমে যাবে। 


যারা নিয়মিত খেলাধুলা করেন বা ভারী ব্যায়াম করেন তারা অবশ্যই ব্যায়াম বা খেলাধুলা করার আগে মাসল স্ট্রেচিং করে নিবেন। দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে পর্যাপ্ত পানির সাথে সাথে বিভিন্ন ফলের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে হবে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা, বাদাম, শাকসবজি খেতে হবে। ধুমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। দীর্ঘ সময় একটানা বসে না থেকে এক ঘন্টা পর পর বিরতি নিয়ে কাজ করতে হবে।

 

firuz.nawer@gmail.com

শেয়ার করুন