Bangla
a year ago

মাশরুমরা কথা বলে একে অপরের সাথে! 

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

প্রাণিরা একে অপরের সাথে কথা বলতে পারলেও উদ্ভিদদের জন্য তা অসম্ভব বলেই আমরা জানি কিন্তু ডলফিনদের বুদ্ধিমত্তা, শিম্পাঞ্জিদের মানুষের সাথে গঠণগত সাদৃশ্য, হাতির বৃহৎ আকার- এসবকিছু নিয়ে আমরা ভাবলেও মাশরুম হয়তো সেভাবে আমাদের ভাবনায় আসেও না

মাশরুমকে আমরা দেখি পিজ্জার ওপরে, তেলে ভাজা দোকানে তাদের বড়া বানাতেও দেখি, এছাড়া কিছু প্রজাতির মাশরুম খুব বিষাক্ত হওয়ায় তাদের আছে আলাদাভাবে  কুখ্যাতি

অবাক করা ব্যাপার হলো, কোকো নামের এক বিখ্যাত গরিলা যেমন ১০০০ এর বেশি চিহ্ন ব্যবহার করতে পারে যোগাযোগে; তেমনি বিজ্ঞানীদের ধারণা সুনির্দিষ্ট কিছু প্রজাতির মাশরুমও ৫০ টির মতো শব্দ ব্যবহার করে নিজেদের ভেতর ঘটাতে পারে যোগাযোগ

ফানজাইদের শুধু উদ্ভিদবিজ্ঞানের জায়গা থেকে আমরা দেখলেও এদের বৈশিষ্ট্য জানলেও কথা বলার ব্যাপারটি নিয়ে আগে হয়তো কেউ ভাবেননি 

১৯৯৮ সালে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্গানিজমটি আবিষ্কৃত হয়৷ প্রায় চার বর্গকিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত এই ক্ষেত্রজুড়ে ছিলো বিভিন্ন প্রজাতির ফানজাই বা ছত্রাক 

ওরেগনের ব্লু মাউন্টেইনে পাওয়া আরমিলারিয়া অস্টোয়েই নামের প্রজাতিটি প্রায় ,৬৫০ বছরের পুরনো বলে ধারণা করা হয় এই অঞ্চলে গবেষকরা পরীক্ষা চালিয়ে দেখেন যে, মাশরুমের প্রজাতিগুলো আন্তঃসম্পর্কযুক্ত অতিকায় এক বাস্তুতন্ত্রের অংশ, যেটি 'হিউমোংগাস ফাংগাস' নামে পরিচিত  আরমিলারিয়া অস্টোয়েই এই বাস্তুসংস্থানের সাথে যুক্ত হয় হাইফির (মাইসেলিয়াম গড়ে তোলার একক) তন্তুগুলোর মাধ্যমে, যা সেই ক্ষেত্রটির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন অংশও গড়ে তুলতে সাহায্য করে৷ 

তবে মাশরুমগুলো না হয় এভাবে সংযুক্ত হলো, কিন্তু গভীর রাতে মাশরুমগুলোকে কি কখনো ফিসফিস করে কথা বলতে শুনেছেন? শোনেননি তো তাহলে বোঝা যাবে কী করে যে মাশরুমরা একে অপরের সাথে কথা বলে

ব্রিস্টোলের অ্যান্ড্রু অ্যাডামাজকি কয়েক রকম ফানজাই, যেমন- স্প্লিট গিল, গোস্ট, এনোকি ক্যাটারপিলার ফানজাইকে গবেষণার জন্য ব্যবহার করেছিলেন ইলেকট্রোড ব্যবহার করে তিনি উপাত্ত সংগ্রহ করেন, যেগুলো নমুনা হিসেবে নেয়া মাশরুমগুলোর গোড়ায় স্থাপন করা হয় এতে দেখা যায়, স্পন্দনগুলো স্বতঃস্ফূর্ত নয়, বরং নির্ধারিত সেটির মাত্রা দেখে মনে হয় ফানজাইগুলো কথা বলছে

কিন্তু ছত্রাক তো প্রকৃতপক্ষে একা একা বেড়ে ওঠে অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় কিন্তু প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়, নিজেদের আত্মরক্ষা পুষ্টি উপাদান সংগ্রহের স্বার্থে তাদের এমন সংযোগ ঘটে থাকে 

এডামাজকি তার দল  গবেষণায় দেখেন যে, ফানজাইগুলো এককভাবে তেমন সক্রিয় নয়, তবে দলগতভাবে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে! মানব মস্তিষ্কে যোগাযোগের সময় উদ্দীপনাসূচক স্পাইকগুলো কোথায় ঘটছে, সেই প্রক্রিয়াই তারা মাশরুমের জন্যও অনুসরণ করেন! মাশরুমের ক্ষেত্রেও বৈদ্যুতিক স্পাইকিং এর  ফলেই এই সাড়া দেওয়ার ব্যাপারটি দেখা যায় বিভিন্ন প্রজাতির ভেতর স্পাইকগুলোর ফ্রিকুয়েন্সি নিজেদের ভেতর ঘনিষ্টতার ক্ষেত্রে  পার্থক্য দেখা যায় 

গবেষকরা এক্ষেত্রে ইংরেজিতে থাকা শব্দ স্বরবর্ণের দৈর্ঘ্যও বিবেচনায় নিয়েছিলেন৷ ইংরেজিতে একটি স্বরবর্ণ উচ্চারণে সময় লাগে . সেকেন্ড, ফানজাইদের ক্ষেত্রেও একটি শব্দ উচ্চারণের সময় প্রায় একই! গবেষণার এই এককে একটি ইংরেজি শব্দ উচ্চারণের সময় . স্পাইক, সি. মিলিটারিস ট্রেইন নামের প্রজাতিতে এটি . স্পাইক মাত্র! ফলে মাশরুমদের কথা বলার গতি প্রায় মানুষের সমতুল্যই

তবে এই যোগাযোগটি সবসময়ের জন্য ঘটেনা মূলত অনেকগুলো মাশরুম যখন কলোনি গড়ে, তখন প্রত্যেকে মূলত নিজেদের জীবনের তাগিদেই তা করে এর ভেতর কোনো একটি মাশরুম কোনোভাবে সংকটে পড়লেই অন্যান্যরা তাদের স্নায়ুতন্ত্রে চলতে থাকা বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মাধ্যমে সবাইকে বার্তা পাঠিয়ে সাবধান করে দেয় 

এই আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়াটি অবশ্য অন্য কিছু উদ্ভিদেও দেখা যায় যেমন- শুঁয়োপোকা ক্লোভার পাতা খেয়ে ফেললে 'রানার' এর মাধ্যমে গাছের অন্যান্য পাতায় সতর্ক সংকেত পৌঁছে যায় এতে অন্যান্য পাতাগুলো রুক্ষ বিস্বাদ হয়ে উঠে, যা পুরোটাই একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া 

্যাডবাউন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জোসেফ স্টুফারের মতে, মাশরুমের একে অপরের সাথে যোগাযোগের ব্যাপারটিও এমনই মূলত আসন্ন বিপদের গন্ধ পেলেই অন্যদের সাবধান করে দেয়া আত্মরক্ষার জন্য দরকারি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারা 

তবে মাশরুমদের ভেতর চলা যোগাযোগের সময় তাদের কী কথা হয় সেসবের পাঠোদ্ধার করার জন্য আরো বহুপথ পাড়ি দিতে হবে কতটা পরিণত এই যোগাযোগ আর কী তার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য তা এখনো আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নয়। 

mahmudnewaz939@gmail.com 

শেয়ার করুন