প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
প্রতি বছর প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক আয় এনে দেওয়া দেশের মেরিন খাত আজ চরম সংকটে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পেশাজীবী নাবিকরা। বুধবার (২ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা খাতটির সুরক্ষায় পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে বিদেশি জাহাজে চাকরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাবিকরা ভিসা সমস্যা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং নীতিমালার অভাবে ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে শুধু ক্যাডেট ও রেটিং পর্যায়েই এখন শত শত নতুন সিডিসি (Continuous Discharge Certificate) পাওয়া নাবিক বেকার। আগামী পাঁচ মাসে এই সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এ অবস্থায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসএসসি পাস ডিপ্লোমাধারীদের অফিসার ক্যাডেট পর্যায়ে সিডিসি প্রদানের প্রস্তাব নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান নাবিকরা। তাঁদের দাবি, এটি আন্তর্জাতিক মেরিটাইম মানদণ্ড এবং দেশের বিদ্যমান নৌবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
নাবিকরা বলেন, “ডিপ্লোমা ইন মেরিন টেকনোলজি” কোর্স আন্তর্জাতিক STCW কোড A-III/1 অনুযায়ী স্বীকৃত নয়, এবং বাংলাদেশ মেরিন শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ অনুযায়ীও এটি অফিসার ট্রেনিংয়ের যোগ্য নয়। এছাড়া নৌ অধিদপ্তরের অধীন কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান নয় বলেও তারা অভিযোগ করেন।
বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রস্তাবিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক IMO হোয়াইট লিস্ট থেকে বাদ পড়তে পারে। এতে করে আন্তর্জাতিক ম্যানিং এজেন্সিগুলোর আস্থা হারাবে এবং দেশের মেরিন খাতের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ৫ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল— প্রস্তাবিত সিডিসি প্রদান পরিকল্পনা বাতিল ও নৌ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ, চাহিদাভিত্তিক রিক্রুটমেন্ট কোটা নির্ধারণ, বিদেশি চাকরির ক্ষেত্রে ভিসা সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ, প্রশিক্ষণ ও নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ, ভেনেজুয়েলায় বন্দি ক্যাপ্টেন মাহবুবের মুক্তি।
নাবিকরা বলেন, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি ব্যতীত অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র ৬ মাসের ট্রেনিং নিয়ে অফিসার পর্যায়ের সিডিসি দেওয়া হলে তা যোগ্যতার ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করবে এবং সেক্টরের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে।
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, “প্রত্যেক নাবিক একেকজন অঘোষিত রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষায় এই সেক্টরের পেশাগত মান ও নীতিমালার বিষয়ে কোনো আপোষ করা চলবে না।”
পেশাজীবীদের মতে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রক্ষা করে একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা প্রণয়ন না করলে মেরিন খাত থেকে বাংলাদেশের আয় ও অবস্থান—দুটিই ঝুঁকির মুখে পড়বে।