প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
অজানাকে জানার কৌতূহল মানুষকে পৃথিবীর গণ্ডি পেরিয়ে মহাবিশ্ব পর্যন্ত নিয়ে গেছে। বিগব্যাং তত্ত্ব থেকে শুরু করে চাঁদে গমন কিংবা মহাকাশ স্টেশন স্থাপন- সবকিছুই আবর্তিত হয়েছে জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করার এক দুর্বার ইচ্ছাশক্তি থেকে যা প্রতিনিয়ত আরও বিকশিত হচ্ছে।
মহাবিশ্বের পরিধি একজন মানুষের কল্পনার পরিধির থেকেও অনেক বড় যার প্রতিটি বাঁকেই লুকিয়ে আছে রহস্য। একজন মানুষের মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খায় এই বিষয়ে যার মধ্যে একটি হলো মহাবিশ্বের বেশিরভাগ অংশ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে কেন?
তবে এ প্রশ্নটি নতুন কোনো প্রশ্ন নয়। আজ থেকে প্রায় দুইশ বছর আগে অর্থাৎ ১৮২৩ সালে জার্মান জ্যোতির্বিদ ও চিকিৎসক হাইনরিখ অলবার্স এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার মতে, মহাবিশ্ব যেহেতু সবসময় একইরকম থাকে এবং এর চারপাশে অসংখ্য তারা বা নক্ষত্র অবস্থিত, তাহলে আলোকিত থাকার পরিবর্তে মহাবিশ্ব সবসময় এমন অন্ধকারাচ্ছন হয়ে থাকে কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা জটিল। পৃথিবীর আকাশ নীল হলেও পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বের হলে সেই নীল রঙের পরিবর্তে চারদিকেই বিরাজ করে অন্ধকার। এর প্রধান কারণ হলো বায়ুমন্ডলের প্রভাব। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের দ্বারা যখন আলো বিচ্ছুরিত হয় তখন এক ধরনের মিথস্ক্রিয়ার জন্য দিনের বেলা আকাশ নীল রঙের দেখায়। কিন্তু পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বের হলে আর বায়ুর উপস্থিতি পাওয়া যায় না। ফলে সেখানে আলো এবং বায়ুর মিথস্ক্রিয়া না থাকাতে মহাবিশ্ব সবসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে।
আমাদের সৌরজগতে অবস্থিত গ্রহগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে। প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর যে প্রান্ত সূর্যের সম্মুখে থাকে সেখানে দিন এবং বাকি অংশে রাত থাকে।
দিনের বেলা সূর্যের আলো যখন বায়ুমন্ডলের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় তখন আলো এবং বায়ুর সংস্পর্শের ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠের আকাশ নীল দেখায়। কিন্তু রাতের বেলা যেহেতু সূর্যের আলো থাকে না তাই আকাশের নীলাভ বর্ণ দেখা যায় না। বরং সৌরজগতে অবস্থিত নক্ষত্রসমূহ সেই সময় পৃথিবী থেকেই পরিলক্ষিত হয়।
অর্থাৎ কোনো বস্তু আমরা তখনই দেখতে পাই যখন ঐ বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়। সূর্যের আলো বায়ুমন্ডলের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় বিধায় সূর্যের আলো আমরা দেখতে পাই এবং এ আলো পরিবহনের পথে অবস্থিত বস্তুগুলোও আমাদের চোখে ধরা পড়ে। পাশাপাশি আলো এবং বায়ুর মিথস্ক্রিয়ার ফলে দিনের বেলা আকাশের রং নীল বর্ণের দেখায়।
কিন্তু মহাকাশে আলো পরিবহনের কোনো মাধ্যম নেই। অর্থাৎ একটি বস্তু হতে উৎপন্ন আলোর প্রতিফলন অন্য কোনো বস্তু কিংবা জীবের চোখে ধরা পড়ার যে মাধ্যম বা রাস্তা সেটি মহাকাশে নেই। আর এজন্য অসংখ্য নক্ষত্র থাকার পরও সেগুলোর আলো অন্য কোথাও প্রবাহিত হতে পারে না। তাই আমাদের কাছে মহাকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়। দিনের বেলা সূর্যের আলোর কারণে পৃথিবী থেকে নক্ষত্রগুলোকে দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু রাতের বেলা ক্রমশ সেসব নক্ষত্রগুলো পৃথিবী থেকে দেখা যায়।
এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে আকাশে থাকা তারাগুলোকে খুব কাছাকাছি মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু তেমনটি নয়। কারণ একটি তারা থেকে আরেকটি তারার দূরত্ব অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক দূরে অবস্থিত পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে দেখার কারণে তারাগুলোকে একে অপরের কাছাকাছি মনে হয়।
এছাড়া ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহবর মহাকাশের আরেকটি রহস্যজনক বিষয়। ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহবর বলতে মূলত মহাকাশের সেসব স্থানকে বোঝায় যেখানে প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বল যেকোনো বস্তুকে তার দিকে টেনে নেয়।
একবার কোনো কিছু ব্ল্যাক হোলে ঢুকে পড়লে সেটির পক্ষে সেখান থেকে বের হয়ে আসা আর সম্ভব হয় না। এমনকি আলোও একবার ব্ল্যাক হোলে ঢুকলে আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। ব্ল্যাক হোলগুলো পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। আর এটিও মহাকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকার পেছনে একটি কারণ হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
tanjimhasan001@gmail.com