Bangla
a year ago

নেহি জিতেগা, হামারা মার্জি!

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

সময় ২০০৩ সাল, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের ৩টি তেই হারে বাংলাদেশ, সেই সিরিজিকে ঘিরে মইন আক্তার ও আনোয়ার মাকসুদের প্যারোডি শো ‘লুজ টক’ -এর ৪৬তম পর্বে উঠে আসে বিখ্যাত লাইন “নেহি জিতেগা, হামারা মার্জি!” 

এরপর কেটে গেছে ২০ বছর, এসেছে ৫টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ। তবুও ‘নেহি জিতেগা’তেই আটকে রইলো বাংলাদেশের ক্রিকেট। দর্শকদের গ্লানি এতোটাই ভারী হলো যে বিদেশের মাটিতে গ্যালারিতে বসে নিজেরাই নিজ দলের খিল্লি করলেন লুজ টকের সেই বিখ্যাত ব্যঙ্গাত্মক লাইন দিয়ে। 

২০০৭ বিশ্বকাপে তরুণ সাকিব-তামিম-মুশফিকের হাত ধরে দু’টি বড় জয়, ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের পর এবারের অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যে পরিপূর্ণ ২০২৩ বিশ্বকাপকে ঘিরে আমাদের স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া, কেনই বা থাকবে না? সুপার লীগে ৩য় হয়ে বিশ্বকাপে আসা দলটা যে আমরাই ছিলাম! 

লিটন দাসের চোখ ধাঁধানো সব ইনিংস, সাউথ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতেই বধ, আবার এই বিশ্বকাপের ঠিক আগেই শান্তর “এভাবেও ফিরে আসা যায়!” লাইনটিকে বাস্তবে রুপ দিয়ে একের পর এক দারুণ ইনিংসে. কেই ভেবেছিল এমন একটা বিশ্বকাপ উপহার দেবে আমাদের টাইগাররা?

২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের অতিমানবীয় পারফর্মেন্সের সুবাদে বেশ প্রতিদ্বন্দীতামূলক ক্রিকেট খেলেও কিছুটা ভাগ্য, কিছুটা নিজেদের ভুল, আবার কিছুটা মানসিকতায় পিছিয়ে পড়ায় খুব ভালো কিছু করতে পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। 

চোখে বিঁধে থাকার মতো ভুলগুলো শুধরে তাই ২০২৩ বিশ্বকাপে ভালো করার প্রত্যয় ছিল সবার মধ্যেই। দলটাও আস্তে আস্তে বেশ গুছিয়ে উঠছিলো। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের পেস এটাককে নখদন্তহীন বলা হলেও অ্যালান ডোনাল্ডের কোচিংয়ে তাসকিন-শরিফুলরা প্রতিদিনই জ্বলে উঠছিলেন। 

বাধা বলতে বাংলাদেশের শুধু ছিল বাজবল ক্রিকেটের যুগে একটু রয়ে সয়ে ব্যাটিংটাই। তারপরও ২৭০ থেকে ৩৩০ নিয়মিতই হচ্ছিলো, আর বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট প্রতি ম্যাচেই পুষিয়ে দিত বাকিটা। 

২০২৩ এর শুরু থেকেই হঠাৎ ছন্দপতন। ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ হার, একরাশ নাটকীয়তা শেষে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদ – এখান থেকে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা যে হচ্ছে না সেটা বেশ স্পষ্ট ছিল। এরপরেও শান্তর ফর্ম, আফগানদের বিপক্ষে এশিয়া কাপে ৩৩৪ রান, ভারতের বিপক্ষে জয় - সব মিলিয়ে একদম আশা ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থায় কি দলটা ছিল? অবশ্যই না! 

নিউজিল্যান্ড সিরিজের মাঝে হওয়া নাটকীয়তাকে ছাপিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে আর প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানকে বিধ্বস্ত করে বাংলাদেশ কিন্তু জানান দিচ্ছিলো – এবার ভালো কিছুই হবে। 

কিন্তু হলো আর কোথায়। স্বীকৃত বড় দলের পাশাপাশি হেরে বসল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও। ক্রিকেট আবার ফিরে গেল সেই ২০০৩ সালে, এত বছর আগের সেই প্যারোডি শো-র লাইনটি আমাদের ক্রিকেটের বাস্তবতার সাথে মিশে গেল আবারও। 

ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, জয়-পরাজয় থাকবেই। কিন্তু বাংলাদেশের খেলা দেখে কে বলবে এই দলটা আসলে জেতার জন্য নামে? জেতার জন্য নামলে কী কেউ ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম বলেই তেড়েফুড়ে ছক্কা হাঁকাতে যায়? টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রায় দুই যুগ পরে এসেও ব্যাটসম্যানদের উইকেট নিতে প্রতিপক্ষ বোলারদের ঘাম ঝরাতে হয় না। বলে বলে নতুন ছক আঁকতে হয়না। আমাদের শান্ত-লিটনরা নিজেই নিজের উইকেট দিয়ে দেন।

শুধু শান্ত-লিটনই বা কেন, সাকিব-মুশফিককেও দেখা যায় একই ভুল বারবার করতে। নিয়মিত খেলা দেখা দর্শকরা জানেন এই খেলা দেখলে যে কেউই বলবে, “আরে, এরা ইচ্ছা করেই হেরে যাচ্ছে না তো?” 

সামর্থ্যের প্রশ্ন থাকলেও হয়তো দর্শক হিসেবে কিছুটা শান্তনা মিলত আমাদের, কিন্তু আমাদের এই লিটন-শান্তরা যা করে দেখিয়েছে গত ২-৩ বছরে, কিংবা আমাদের পেস ইউনিটের পারফর্মেন্স – অন্তত সামর্থ্য নেই এটা বলার সুযোগ কম। আর দলে যদি থাকে ১৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ৩ জন খেলোয়াড়, তাহলে দর্শকদের হতাশা কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে তা আর বলার প্রয়োজন নেই।

কিন্তু সামর্থ্য ও ফলাফল যখন পাশাপাশি ধরা হয়, মনে হয় আসলেই কী বাংলাদেশের প্লেয়ারদের জেতার ইচ্ছেটাই উবে গেছে? নাকি ব্যাটিং-বোলিং দুই ইউনিটেই চলছে গভীর কোনো সমস্যা? গভীর সমস্যা থাকলে একই ভুল তো বারবার হওয়ার কথা না। 

২০০৩ বিশ্বকাপে আমাদের সব ম্যাচে পরাজয় থেকে ২০ বছর পর এসেও তলানীর কাছে থেকে বিশ্বকাপের শেষটা, “নেহি জিতেগা, হামারা মার্জি!”- লুজ টকে মইন আক্তারের এই লাইন এত বছর পরে এসেও আমাদের ক্রিকেটের সাথে এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকার কারণটা বের হবে কবে? 

[email protected]

শেয়ার করুন