প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
থ্রি ইডিয়েটস সিনেমার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? তিন বন্ধুর এই সিনেমার তিনজন তিনটি ভিন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। একইভাবে তিনজনের দুর্বলতা তিন রকমের। রাজুর 'ভয়' তার দুর্বলতা, ফারহানের শক্তি তার 'ফটোগ্রাফি' আর র্যাঞ্চো? তার কি কোনো দুর্বলতা ছিল না? তারও ছিল। র্যাঞ্চোর দুর্বলতা 'সম্পর্কে জুড়ে থাকা।'
প্রত্যেক মানুষরই কোনো না কোনো কিছুর প্রতি দুর্বলতা থাকে। আজকের লেখা দুর্বলতাকে ঘিরে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিবে। কেন দুর্বলতা কাটানো প্রয়োজন? তা কীভাবে শনাক্ত করা যায় দুর্বলতা এবং কী করে তা কাটিয়ে ওঠা যায়।
কেন জানা দরকার?
নিজেকে জানা
নিজের দুর্বলতাকে জানার মাধ্যমে নিজেকে আরো কাছ থেকে জানা যায়। ফলে দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত থাকলে ব্যক্তিগত ও কর্মস্থল দুই জায়গায়ই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সাহায্য করবে।
ব্যক্তিগত উন্নয়ন
নিজের দুর্বলতাগুলো স্বীকার করে নিলেই পরিবর্তন ও উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হবে। এই পরিবর্তন দিন শেষে পুরো জীবনেই প্রভাব রাখবে। কাজেই ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য নিজের দুর্বলতাগুলো স্বীকার করে নেয়া জরুরি।
কর্মস্থলে সাফল্য
পেশাগত জীবনে দুর্বলতা বয়ে চলা ক্যারিয়ারের জন্যে নেতিবাচক। এখানে কোনো ধরনের হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। সহকর্মী ও উর্ধ্বতন দ্বারা অনেক ক্ষেত্রেই আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া হয় না। এমনকি এই দুর্বলতার জন্য আপনি আপনার দায়িত্ব থেকে স্থানান্তরও হতে পারেন। তাই দুর্বলতাগুলো জেনে নেয়া খুবই প্রয়োজন।
সাহায্য পেতে
দুর্বলতা শনাক্ত করতে পারলে কোথায় কোন ক্ষেত্রে কে বা কারা আপনাকে সহায়তা করতে পারবে সে বিষয়ে সম্যক ধারণা পাওয়া সম্ভব। যেমন: আপনি মনে করেন, বিশ্লেষণত্বক চিন্তা আপনার দ্বারা হয় না। সেক্ষেত্রে এমন কোনো ব্যক্তি প্রয়োজন যিনি আপনাকে এই বিষয়ে সহায়তা করতে পারবে। এই সহায়তা পেতে হলেও নিজের দুর্বলতাগুলো জানা প্রয়োজন। এতে করে নিজের দায়িত্বের জায়গা কমে আসে এবং কোনো কাজ সম্মিলিতভাবে করা যায়।
কীভাবে নিজের দুর্বলতা সনাক্ত করা যায়?
নির্ভরযোগ্য মানুষের মতামত ও সমালোচনায় মনোযোগী হওয়া
উপরের শিরোনাম পড়েই এটুকু স্পষ্ট যে এখানে দুটি বিষয় প্রয়োজন; মতামত ও সমালোচনা তবে এই মতামত ও সমালোচনা আসতে হবে আপনার নির্ভর ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে। সে হতে পারে আপনার পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী, শিক্ষক যে কেউ। এখন কীভাবে বুঝবেন এই ব্যক্তি আপনাকে আপনার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে?
আপনি যার সাথে নির্ভয়ে সব কিছু বলতে পারেন এবং যে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী আপনার তার থেকে এই সহায়তা পেতে পারেন।
পার্সনালিটি টেস্ট অর্থাৎ ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা
এটা হতেই পারে যে এমন কোনো ব্যক্তি আপনার চেনাজানা নেই। সেক্ষেত্রে পার্সনালিটি টেস্ট অর্থাৎ ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা নিতে পারেন।
অনলাইনে ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা নেয়া যায় এমন বিভিন্ন ধরনের ফ্রি ওয়েবসাইট আছে। এর মধ্যে সিক্সটিন পার্সনালিটিজ ডট কম অন্যতম। এসব ওয়েবসাইটে ব্যক্তিত্বের সাথে জড়িত অনেকগুলো প্রশ্ন থাকে। এসব প্রশ্নের সাপেক্ষে নিজের ব্যক্তিত দুর্বল ও সবল দিক জানা যায় ফলে ব্যক্তিত্বের ধারনা লাভ করা যায়।
এছাড়া মাইন্ডটুলস, স্ট্রেন্থ ফাইন্ডার, গ্যালাপ এরকম অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা
অতীতের কথা ভাবতে নেই এমন কথা প্রচলিত আছে, ক্ষেত্র বিশেষ ঠিকও হতে পারে। তবে এটাও ঠিক যে অতীত থেকে চাইলে আপনি শিখতেও পারেন। যেমন ধরুন প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার আপনি বর্তমানে হয়েছেন এবং স্বভাবগত, মনস্তাত্ত্বিক কিংবা শারীরিক দুর্বলতার জন্য সেটি ভিন্নভাবে মোকাবিলা করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিখে আপনি বর্তমানে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হতে পারবেন।
যদি দক্ষতাজনিত সমস্যা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেই বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠুন। যদি কৌশলগত কারনে সমস্যা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কৌশলে পরিবর্তন আনতে পারেন। পড়াশোনার প্রয়োজন হলে আরো বেশি গবেষণা, বই পড়া জেতে পারে। অতীত এভাবেই আপনার বর্তমানে ভূমিকা রাখতে পারে। কোনো বিস্মৃতি হয়ে নয় বরং শিক্ষক হয়ে কাজে আসতে পারে।
নিজের দুর্বলতা শনাক্ত করে থেমে না থেকে সেগুলো শক্তিতেও পরিণত করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্যের। এছাড়া প্রয়োজন,
প্রতিযোগিতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতি গ্রহণ করা
নিজের দুর্বলতা ছাটিয়ে বিদায় করার সবচেয়ে দারুন উপায় তার সামনাসামনি হওয়া। আগে যেমন, মতামত, বিশ্লেষণ, ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা অথবা অতীত যখনই আপনি নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত হবেন তখন থেকেই নিজের দুর্বলতা কাটানোর জন্য যা করা প্রয়োজন তার চর্চাটা শুরু করে দিতে পারেন। কেননা কোনো প্রতিযোগিতার জন্যেই আপনি কখনোই পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হতে পারবেন না। মানসিকভাবে হতে পারবেন বটে আর এজন্যই চর্চা এবং সময়ে-সময়ে নিজেকে ঝালাই করে নেয়া দরকার।
ইতিবাচক থাকা
নিজেকে খাটো করে দেখা যাবে না,হীনমন্যতার স্থান নেই এখানে। পৃথিবীর সব মানুষ সবকিছু করতে পারে না, না পারাটাই স্বাভাবিক।
নিজেকে ভালোবাসা, উন্নতি ও পরিবর্তনকে প্রশংসা করা
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজের ব্যর্থতাগুলোকেই দেখি। যেমন, মনে হতে পারে ইংরেজি না জানার কারনে ভালো কোথাও চাকরি হচ্ছে না, কিংবা গণিতে দুর্বলতার জন্য ভালো ফলাফল আসছে না। সেক্ষেত্রে আপনার মনে রাখা উচিত এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন একদিনে আসবে না। এটি একটি প্রক্রিয়া যা যত চর্চা আর পরীক্ষা দেয়া হবে ততো ভালো হতে থাকবে। বছরখানেক লেগে যেতে পারে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন লক্ষ্য করতে। তাই কিছুটা উন্নতি হলেই নিজের কাধে নিজেকেই সাবাশ দিতে হবে। ভালো কিছু খেতে পারেন, উপহার দিতে পারেন নিজেকে, যাদের সহায়তা নিয়েছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ধন্যবাদ দিতে পারেন।
ছোট-ছোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা
যেকোনো দুর্বলতাকে ছাপিয়ে উঠতেই নিজেকে সময় দেয়া প্রয়োজন আর এজন্য দরকার ছোট-ছোট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা এবং সেগুলো অর্জন করা। যেমন: আপনি দক্ষতা অর্জন করতে চান, সেক্ষেত্রে প্রতিদিন অথবা সাপ্তাহিক কতটুকু অধ্যায়, ধাপ এগিয়ে যেতে পারলে সুবিধা হয় সেটুকু অর্জন করতে পারেন। মনস্তাত্ত্বিক হলে, ধ্যান, যোগ-ব্যায়াম, জিম (শারীরিক কসরত) করতে পারেন। জানাশোনার জন্য বই পড়তে পারেন। বিশ্লেষণে ভালো হবার জন্যে মানুষের মতামতধর্মী লেখা পড়তে পারেন অথবা বক্তব্য শুনতে পারেন। বেশি বেশি মানুষের সাথে মেশা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে।
ভ্রমণ
ভ্রমণ একমাত্র উপায় যেখানে নিজের দুর্বলতা জানা, বোঝা ও শক্তি সামর্থ্যের প্রয়োগ সবকিছু একই সাথে হয়ে যায়। ভ্রমণের মাধ্যমে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য যে চর্চার প্রয়োজন তাও সম্পন্ন করা যায়। মোট কথা যে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে লেখাটি শুরু অর্থাৎ কেন দুর্বলতা জানা প্রয়োজন, কীভাবে জানা প্রয়োজন এবং কী করে তা শক্তিতে রূপান্তর করা যায় সবকিছুই ভ্রমণের মাধ্যমে করা সম্ভব।
এটি একটি প্রক্রিয়া তাই নিজেকে ভালোবেসে প্রয়াসে লেগে থাকাই শ্রেয় এটা মেনে যে দুর্বলতা থাকবে।
মো. ইমরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।