প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
কয়েক মাস বাড়ার পর গত মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ কমেছে, যার ফলে মুদ্রা বাজারের সামগ্রিক তহবিল ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
মে মাসের তারল্য হ্রাস কেবল অতিরিক্ত তহবিলের উপরই নয়, ব্যাংকগুলোর অবিনিয়োগকৃত ঋণের পরিমাণের উপরও প্রভাব ফেলেছে।
অতিরিক্ত তারল্য হলো নগদ ও নগদের সমতুল্য সম্পদ যেমন ট্রেজারি বিল ও বন্ড এবং প্রয়োজনীয় তরল সম্পদের অতিরিক্ত ক্যাশ রিজার্ভ। অন্যদিকে অবিনিয়োগতকৃত নগদ হলো ব্যাংক ভল্টে পড়ে থাকা আমানত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের নভেম্বরে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪১ ট্রিলিয়ন টাকা, যা এ বছরের জানুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন, ফেব্রুয়ারিতে ১ দশমিক ৬২ ট্রিলিয়ন, মার্চে ১ দশমিক ৬৬ ট্রিলিয়ন এবং এপ্রিলে ১ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন টাকায়। মে মাসে এই অঙ্ক নেমে আসে ১ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন টাকায়।
ওই মাসে ব্যাংকে অবিনিয়োগকৃত অতিরিক্ত তহবিলের পরিমাণ নেমে আসে ৫৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন টাকায়, যা এপ্রিলে ছিল ৮৪ দশমিক ০৯ বিলিয়ন টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকে বিনিয়োগ না করা অতিরিক্ত নগদ ছিল ৭৬ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে অর্থ উত্তোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় মে মাসে ব্যাংকগুলোতে তারল্য কিছুটা কমে থাকতে পারে।
তিনি জানান, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মে মাসে প্রায় ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। “এসব কারণ সম্ভবত ব্যাংক খাতের সামগ্রিক তারল্য হ্রাসে অবদান রেখেছে,” তিনি যোগ করেন।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, মে মাসে ব্যাংকিং খাত রেকর্ড ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স কিনেছে, যেটি বিদ্যমান তারল্যের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, "অর্থনীতির উপর ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির চাপের কারণে অর্থ উত্তোলনের প্রবণতা বাড়ে এবং এখন সেটিই ঘটছে।" একই সময় ঋণ পরিশোধের গতি কমে গেছে বলেও জানান তিনি।
যমুনা ব্যাংকের একজন শীর্ষ নির্বাহী মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, সামান্য হ্রাস সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাতে যথেষ্ট অতিরিক্ত তারল্য বজায় রয়েছে।
তিনি বলেন, উচ্চ হারের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) রয়েছে এমন কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটের মুখে পড়েছে কারণ তারা আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার থেকে ধার নিতে পারছে না। প্রয়োজন মেটানোর জন্য এই ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তহবিল দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
তবে তার মতে, ব্যাংকিং খাতে সামগ্রিক তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে এবং “এক মাসের তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের কোনো সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়।"