Bangla
12 days ago

অ্যানা হজেসঃ উল্কাঘাতের কবলে পড়া পৃথীবীর প্রথম মানুষ

অ্যান হজেসই হলো পৃথিবীর একমাত্র স্বীকৃত ব্যক্তি যিনি উল্কা বা গ্রহাণু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন
অ্যান হজেসই হলো পৃথিবীর একমাত্র স্বীকৃত ব্যক্তি যিনি উল্কা বা গ্রহাণু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

১৯৫৪ সালের ৩০ শে নভেম্বরের কথা। আমেরিকার অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের সিলাকাউগা শহরে অ্যান এলিজাবেথ ফাউলার হজেস নামে একজন নারী দুপুরে সোফায় শুয়ে ভাতঘুম নিচ্ছিলেন। ঘড়ির কাটায় তখন আনুমানিক ২ টা বেজে ৪৬ মিনিট। হঠাৎই একটা পাথর সদৃশ বস্তু তার ঊরুতে এসে আঘাত করে। মূহুর্তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। তখনও সে বুঝতে পারেনি সেই বস্তুটি কোনো সাধারণ কিছু ছিল না। সেটি ছিল মহাশূণ্য থেকে ধেঁয়ে আসা একটি উল্কা। যার আনুমানিক ওজন ছিল সাড়ে ৮ পাউন্ড বা প্রায় ৪ কেজির মতো।

আর অ্যান হজেসই হলো পৃথিবীর একমাত্র স্বীকৃত ব্যক্তি যিনি উল্কা বা গ্রহাণু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। একারণে উল্কার যে অংশটুকু হজেসকে আঘাতপ্রাপ্ত করেছিল সেটি’ হজেস উল্কা’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এটি অ্যালাবামা ন্যাশনাল হিস্টোরি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

হজেস যে উল্কাটি দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল সেটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যার একটি অংশ সম্ভবত ফাঁকা কোনো স্থানে গিয়ে পড়েছিল। আর আরেকটি অংশ চমকপ্রদভাবে অ্যান হজেসের বাড়ির ছাদ দিয়ে তার শরীরে পড়ে।

তবে এটি সরাসরি তার শরীরে এসে পড়েনি। প্রথমে উল্কার অংশটি তার ঘরে থাকা রেডিওতে এসে লাগে। এরপর সেটি হজেসের শরীরের ওপর পড়ে। যাইহোক, উল্কাটি তাকে খুব বেশি আঘাতপ্রাপ্ত করতে পারেনি। যদিও তাকে পরবর্তীতে হাসপাতালে নিয়ে ও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

এদিকে ঘটনাটি ঘটার পর আশেপাশের লোকজন তার বাড়িতে ভীড় জমায়। প্রথমে লোকজন বিমান দুর্ঘটনার একটি অংশ বলে মনে করেন। এরপর সেখানকার নিকটবর্তী খনিতে কাজ করা একজন ভূ-বিজ্ঞানী এসে নিশ্চিত করেন এটি একটি উল্কা।

যেসময় ঘটনাটি ঘটে সেসময় হজেস ও তার মা বাসায় ছিলেন। তার বর কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে লোকের ভীড় দেখতে পায়। এরপর তিনি ভীড় ঠেলে আসল রহস্য জানতে পেরে চমকে যান। সিলাকাউগা পুলিশ বস্তুটিকে জব্দ করে এবং এর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য এয়ার ফোর্সের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তারা নিশ্চিত করে বস্তুটি আসলেই উল্কা ছিল।

এরপর ঘটে আরেকটি অবাককান্ড। যেহেতু উল্কাটি হজেসের শরীরে আঘাত করেছে তাই সে দাবি করে এর মালিকানা তার। তিনি এটাকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ মনে করেন। অন্যদিকে হজেস যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তার মালিক বার্ডি গাই দাবি করেন বাড়িটি যেহেতু তার তাই এর মালিকও তিনি।

ঘটনাটি শেষপর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়ায়। প্রায় এক বছর পর্যন্ত মামলাও চলে। এরপর গাইকে ৫০০ মার্কিন ডলার প্রদানের মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করেন হজেস ও তার স্বামী। তাদের ধারণা ছিল উল্কাটি তারা কোনো ধনী লোক বা সংস্থার কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন কিন্তু আসলে তা ঘটেনি।পরবর্তীতে হজেস উল্কাটি ন্যাশনাল হিস্টোরি মিঊজিয়াম কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়। তখন থেকে সেটি সেখানেই আছে।

অ্যানের শরীরে উল্কা পড়া নিয়ে কথা বলেছিলেন ফ্লোরিডা স্টেট কলেজের জ্যেতিষবিজ্ঞানী মাইকেল রেনল্ডস ।তার মতে, 'এটি একটি বিরল ঘটনা। কেননা সাধারণত উল্কা বা গ্রহাণু মহাসাগরে বা ভূখন্ডের কোনো দূরবর্তী স্থানে গিয়ে পড়ে।'

তবে উল্কাঘাত কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। ১৯৭২ সালে ভেনেজুয়েলায় একটি গরু মারা যায় উল্কাঘাতে।২০১৩ সালে এরকম আরো একটি ঘটনা ঘটে রাশিয়ার চেলইয়াবিন্সকে। সেবার একটি উল্কা তৈরি করে সনিক বোম বা শব্দ নিনাদ। অর্থাৎ প্রচন্ড বেগ শব্দ তরঙ্গ ছুটে যায় চারদিকে। অনেক বাড়ির জানলা ও কাঁচ ভেঙ্গে আহত হয় বহু মানুষ।

তবে উল্কা বা গ্রহাণু নিয়ে আর কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নেই মানুষের। কেননা নাসা ইতোমধ্যে ডার্ট নামে একটি অভিযান চালিয়েছে। এর মাধ্যমে যেকোনো উল্কাকে চাইলেই বিশেষ কোনো নভোযান দিয়ে আঘাত করে এর গতিপথ পরিবর্তন সম্ভব।

[email protected]

শেয়ার করুন