প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনার ইচ্ছা মানুষের চিরদিনের। মাউন্ট এভারেস্টকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে চেনা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে, সেসময় থেকেই প্রচেষ্টা একে জয় করার। শত বছর ধরে অনেক ব্যর্থ প্রচেষ্টা, অনেক অভিযাত্রীর অকাল মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন দুই অভিযাত্রী, এডমুন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে।
তবে এভারেস্ট জয়ের পরও তা জয়ের পিছনের পথ পাড়ি দেয়া কখনোই সহজ ছিল না, ১৯২১ সালের ৫ই জুন এভারেস্টে ওঠার পথে প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন আলেক্সান্ডার কেলাস। সেই থেকে ২০২৪ সালের ২৩ই মে পর্যন্ত ৩৪০ জনেরও বেশি পর্বতারোহী হিমালয়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠার পথে মৃত্যুবরণ করেছেন, এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী সজল খালেদও। এবার জেনে নেয়া বিখ্যাত পাঁচ পর্বতারোহী যারা মাউন্ট এভারেস্টে ওঠার পথে শিকার হয়েছেন দুর্ঘটনার, বরণ করেছেন মৃত্যুকে।
মিন বাহাদুর শেরচান
মিন বাহাদুর শেরচান ছিলেন একজন নেপালি পর্বতারোহী এবং ব্রিটিশ গুর্খা রেজিমেন্টের প্রাক্তন সৈনিক। ২০০৮ সালে ৭৬ বছর বয়সে পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন, যদিও ৫ বছর পর সেই অর্জন কেড়ে নেন ৮০ বছর বয়সী জাপানি পর্বতারোহী ইউয়িচিরো মিউরা।
মিন বাহাদুর তাই ২০১৭ সালে ৮৫ বছর বয়সে সেই রেকর্ড আবার অর্জন করে নেয়ার জন্য মাউন্ট এভারেস্টে পদার্পণ করেন, তবে ওঠার পথেই এভারসেট বেস ক্যাম্পে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ডেভিড শার্প
ডেভিড শার্প একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ পর্বতারোহী যার ঝুলিতে ছিল পৃথিবীর ষষ্ঠ সর্বোচ্চ শৃঙ্গ চো ওয়ু, আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো জয়ের অভিজ্ঞতা।
তিনি কোনো রকম গাইডের সাহায্য ও অক্সিজেন ছাড়াই পর্বতারোহণে পারদর্শী ছিলেন, যা পরবর্তীতে তার অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২০০৩ এবং ২০০৪ এ শার্প দুইবার এভারেস্ট আরোহণের চেষ্টা করেন, তবে ফ্রস্টবাইটের শিকার হয়ে তার দুই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরপর ২০০৬ এ তিনি একাই মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের মিশনে নামেন, কিন্তু পথে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে তার পরিবারের অনুরোধে ২০০৭ সালে শার্পের দেহাবশেষ দৃষ্টিসীমা হতে সরিয়ে নেয়া হয়।
জর্জ ম্যালোরি
জর্জ ম্যালোরি ছিলেন একজন ব্রিটিশ পর্বতারোহী যিনি ১৯২০ এর দশকে প্রথম তিন ব্রিটিশ মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানের সদস্য ছিলেন। সেসময় নেপালের দিক হতে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ নিষিদ্ধ ছিল, তাই তিব্বতের দুর্গম পথ হতে আরোহণ করতে হতো।
১৯২৪ এর এভারেস্ট অভিযানে ৮ই জুন জর্জ ম্যালোরি ও তার সঙ্গী এন্ড্রু আরভাইন এভারেস্টের চূড়ার ২৪০ মিটার থেকে নিখোঁজ হন, এবং তার ৭৫ বছর পর ১৯৯৯ সালের ১ই মে ম্যালোরির দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। ম্যালোরি এভারেস্ট জয়ের প্রথম পর্বতারোহী ছিলেন কি ছিলেন না পরবর্তীতে এনিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
রব হল
রব হল ছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত পর্বতারোহী যার ঝুলিতে ছিল পাঁচবার এভারেস্ট জয়ের অভিজ্ঞতা, যেটা সেসময় নেপালি ব্যতীত অন্যান্য দেশের পর্বতারোহীদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৯৯৬ সালে এভারেস্ট জয়ের পর নামার পথে রব হল হাইপোথার্মিয়ার শিকার হন, সেখানেই ১১ই মে মৃত্যুবরণ করেন। ২৩ই মে তার মৃতদেহে খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু তা আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
হ্যানেলোর শ্মাৎজ
১৯৭৯ সালে জার্মান পর্বতারোহী হ্যানেলোর শ্মাৎজ ইতিহাসের চতুর্থ নারী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছেছিলেন, এবং তার স্বামী গেরহার্ড তার সাথে সেসময়ে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছেন। ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে এভারেস্ট অভিযানের জন্য রওনা হওয়া শ্মাৎজ তুষারঝড় ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হওয়াসহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন তারা।
তাদের পর্বতারোহী দলের সতর্কতা উপেক্ষা করে হ্যানেলোর এবং আমেরিকান পর্বতারোহী রে জেনেট তাদের অবরোহণের সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তারা ডেথ জোনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন, যেখানে হাইপোথার্মিয়ায় জেনেটের মৃত্যু হয়েছিল। হ্যানেলোর শ্মাৎজ এবং দুই শেরপা তৎক্ষনাৎ অবতরণের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু শ্মাৎজ এর মধ্যেই মারা যান।
হ্যানেলোর শ্মাৎজ ছিলেন প্রথম মহিলা এবং প্রথম জার্মান নাগরিক যিনি এভারেস্টের চূড়ায় মারা যান এবং পরবর্তীতে হিমায়িত সতর্কতা চিহ্ন হয়ে উঠেন। ১৯৮৪ সালে তার দেহাবশেষ উদ্ধার করতে গিয়ে দুজন নেপালি শেরপা মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ শ্মাৎজের দেহাবশেষ দেখা যায় এবং ধারণা করা হয় যে বাতাসের ধাক্কায় তা কাংসুং পাসে পড়ে গিয়েছে।