প্রকৃতির সাথে মিল রেখেই কেন নকশা করা হয় সেনাবাহিনীর পোশাক?
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
যেকোনো দেশকে অভ্যন্তরীণ অথবা বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে সেই দেশের আর্মি কিংবা সামরিক বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বলা যায়, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার গুরুদায়িত্ব সামরিক বাহিনীর হাতেই ন্যস্ত থাকে। আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সামরিক কৌশল রণক্ষেত্রে শত্রুকে পরাস্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সামরিক কৌশলসমূহের কথা বলতে গেলে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত পোশাকের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ তাদের পরা সামরিক পোশাক অন্যান্য পোশাক থেকে অনেকাংশে আলাদা। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয় এই পোশাক।
সেনাবাহিনীর পোশাক তৈরিতে কেমোফ্লেজ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কেমোফ্লেজ পোশাক বলতে মূলত সেসব পোশাককে বোঝায় যেগুলো আলো এবং রঙের সংস্পর্শে এক ধরনের দৃষ্টি বিভ্রাট তৈরি করে। মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে চারপাশের পরিবেশের সাথে মিলিয়ে যেতে এই ধরনের পোশাক ব্যবহার করা হয়।
যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর শত্রুর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যেমন সচেতন থাকতে হয়, ঠিক তেমনি নিজেদের আত্নরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। সম্মুখ সারির যুদ্ধের পাশাপাশি অনেক সময় গেরিলা কৌশলে আঘাত হানতে হয় শত্রু কিংবা কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর উপর। এক্ষেত্রে নিজের অবস্থান সম্পর্কে শত্রুকে অবগত হওয়ার সুযোগ দেয়া নাও হতে পারে। আর সেসব ক্ষেত্রে কেমোফ্লেজ পোশাক সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আত্নরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
কেমোফ্লেজ পোশাক পরার ফলে সেনা সদস্যরা তাদের অবস্থানকৃত পরিবেশের সাথে নিজেকে মিলিয়ে রাখতে পারে। কারণ এই ধরনের পোশাক প্রস্তুতের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। যেমন- কোন জায়গায় অভিযান সংগঠিত হবে, সেখানকার ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থা কেমন, গাছপালা কিংবা মাটি কেমন ইত্যাদি। ফলে শত্রুপক্ষের কাছে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবেশের উপর ভিত্তি করে কেমোফ্লেজ পোশাকগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
বন-জঙ্গলে যুদ্ধের ক্ষেত্রে আর্মিরা সাধারণত সবুজ, বাদামি এবং কালো রঙের মিশ্রণে তৈরি কেমোফ্লেজ পোশাক পরে। যেহেতু জঙ্গলের পরিবেশ অনেকটা সবুজ, বাদামি এবং কালো রঙের মিশ্রণে হয়ে থাকে, তাই তাদের পক্ষে সেই পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়া সহজ হয়ে যায়।
আবার মরুভূমিতে অভিযান পরিচালনাকালে হালকা বাদামি রঙের পোশাক ব্যবহার করা হয় যাতে মরুভূমির ধূসর বালুর সাথে মিশে থাকা সহজ হয়।
আবার সাগর কিংবা নৌপথে অভিযানের সময় ব্যবহৃত হয় অন্য কোনো ডিজাইনের পোশাক। তবে এখানে লক্ষ্যণীয় যে শুধু সামরিক বাহিনীই নয়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অন্যান্য বাহিনীও কেমোফ্লেজ পোশাক পরিধান করে থাকে। নিজেদের সুরক্ষার অংশ হিসেবে এ ধরনের পোশাক দীর্ঘদিন ধরে তারা ব্যবহার করে আসছে।
সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে কেমোফ্লেজ পোশাক পরার বিষয়টি শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে। তখন সামরিক কৌশল গ্রহণ ব্যতীত শত্রুকে পরাস্ত করা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। আর অক্ষশক্তি বনাম মিত্রশক্তির মধ্যকার সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অনেকটা বাধ্য হয়েই কেমোফ্লেজ পোশাকের প্রতি ঝুঁকে সেনা সদস্যরা। বর্তমানে দিন যতোই এগুচ্ছে কেমোফ্লেজ পোশাকেও ততো নতুনত্ব আনা হচ্ছে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর কৌশল হিসেবে।
জাতীয় সুরক্ষার পাশাপাশি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কেমোফ্লেজের পোশাক পরে থাকেন। বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী সৈন্যরা এ ধরনের পোশাকের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, শত্রুর হাত থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা কিংবা বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনের সৈন্যদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়ে কেমোফ্লেজের পোশাক।