পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থানগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রা কেমন হয়?
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় বাংলাদেশে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে নামলেই তা সর্বোচ্চ শীত হিসেবে পরিগণিত হয়। এই সময় জনজীবনে যেমন স্থবিরতা নেমে আসে, ঠিক তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও দেখা যায় শীত নিয়ে নানাবিধ পোস্ট কিংবা মিম।

তবে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, পৃথিবীতে এমনও কিছু স্থান রয়েছে যেখানে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। আমাদের দেশের ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রীতিমতো সেখানে কোনো ব্যাপারই না। তেমনই কিছু স্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হবে এই লেখায়।
ডোম ফুজি, এন্টার্কটিকা
পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো বরফে ঢাকা মহাদেশ এন্টার্কটিকার ডোম ফুজি। ২০১০ সালের আগস্টে এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৯২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অত্যধিক শীতল তাপমাত্রা হওয়াতে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা রীতিমতো অসম্ভব।
ভস্তক রিসার্চ সেন্টার, এন্টার্কটিকা
এন্টার্কটিকা মহাদেশে অবস্থিত এই স্থানটিতে ১৯৫৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। ১৯৮৩ সালের জুলাইয়ে এখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল মাইনাস ৮৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গবেষণার কাজে ব্যবহৃত স্থানসমূহের মধ্যে এটি বেশ প্রসিদ্ধ।

ওয়মিয়াকন, রাশিয়া
পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল গ্রাম হিসেবে পরিচিত ওয়মিয়াকন যেটি রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ৩৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ২০১৮ সালে এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৮৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
মজার ব্যাপার হলো, এতটা ঠান্ডার মধ্যেও এই গ্রামে প্রায় ৫০০ লোক বসবাস করে। অত্যধিক শীতল তাপমাত্রার কারণে এখানে তেমন কোনো ফসল চাষ হয় না। বলগা হরিণ পালনের কারণে এর মাংস এবং স্যুপই এই গ্রামের মানুষের প্রধান খাদ্য। তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে বন্ধ হয়ে যায় এখানকার একমাত্র স্কুলটিও।
ইয়াকুটস্ক, রাশিয়া
রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সাখা রিপাবলিকের রাজধানী ইয়াকুটস্ক বিশ্বের সবচেয়ে শীতল শহর হিসেবে পরিচিত। এই শহরের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
বর্তমানে এই শহরে প্রায় ৩ লক্ষ লোক বসবাস করে। হাঁড় কাঁপানো শীতেও কয়েক স্তরের গরম পোশাক পড়ে মানুষ তাদের কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবেই সম্পাদন করে এখানে। তবে এখানে গাড়ি না চালালেও ইঞ্জিন চালু করে রাখতে হয়। তা না হলে ঠান্ডায় জমে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যেতে পারে।
সোভিয়েত আমলে যদি কেউ জোসেফ স্ট্যালিনের বিরোধিতা করত তাহলে তাকে এই স্থানে নির্বাসনে পাঠানো হতো। তবে বর্তমানে এই স্থানে মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে দিব্যি টিকে আছে 'বরফের নরক' হিসেবে খ্যাত ইয়াকুটস্কের বাসিন্দারা।
ভারখোইয়াস্ক, রাশিয়া
রাশিয়ার সাখা রিপাবলিকের অধীন এই শহরটিও পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৮৯২ সালে এখানে মাইনাস ৯৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এই শহরটিতে প্রায় দেড় হাজারের মতো লোক বসবাস করে।
এখানে রয়েছে একটি নদী বন্দর, একটি বিমানবন্দর ও একটি বলগা হরিণ পালন অঞ্চল। বৈরি আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে এখানকার মানুষের জীবন এগিয়ে চলে।

দেনালি, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত পাহাড়ি এই অঞ্চলটি শীতপ্রধান অঞ্চল হিসেবেও বেশ পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, ২০০৩ সালে এখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৭৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। অতিরিক্ত শীতল তাপমাত্রার কারণে এখানকার পর্বতের উপরিভাগে তেমন কোনো স্থায়ী বসতি নেই। তবে নিম্নভাগে সীমিত সংখ্যক স্থানীয় আদিবাসী বসবাস করে।
সালকার্ক ফোর্ট, কানাডা
সালকার্ক ফোর্ট স্থানটি কানাডার পেলি নদী এবং ইয়কোন নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত। এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৭৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট রেকর্ড করা হয়েছিল। একসময় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হলেও অত্যধিক শীতল তাপমাত্রার কারণে পরবর্তীতে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। স্থানটিতে নৌকা এবং বিমান ছাড়া চলাচলের অন্য কোনো পথ নেই।

নর্থ আইস স্টেশন, গ্রিনল্যান্ড
গ্রিনল্যান্ডে অবস্থিত এই স্থানটির তাপমাত্রাও থাকে বেশ শীতল। ১৯৫২ সালে এখানে ব্রিটিশরা রিসার্চ স্টেশন স্থাপন করে। ১৯৫৪ সালের জানুয়ারি মাসে এখানে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন মাইনাস ৬৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ১৯৫৪ সালে এটিই ছিল উত্তর মেরুর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। স্থানটিতে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা কার্য পরিচালনা করেন গবেষকরা।