প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিনে সরকার ঘোষিত পর্যটন নিষেধাজ্ঞার ফলে পরিবেশ পুনরুদ্ধারের যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে আশাবাদী পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই)।
প্রাথমিক এই উন্নতি ভবিষ্যতে দ্বীপটিতে টেকসই পর্যটনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দ্বীপের প্রবাল প্রাচীরের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো, আবার ফিরে আসছে সামুদ্রিক কচ্ছপ, বাড়ছে সামুদ্রিক শামুকের সংখ্যা—যা দ্বীপের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা শাখার পরিচালক মো. এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও দ্বীপবাসীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছি। প্রকৃতির ভারসাম্য যে ধীরে ধীরে ফিরে আসছে, তা স্পষ্টভাবেই দেখা যাচ্ছে।"
তিনি আরও জানান, সরকার দ্বীপটির পরিবেশগত সহনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই পর্যটনের সম্ভাবনাও শক্তিশালী করতে চায়।
এরই মধ্যে প্রবাল প্রাচীর, কচ্ছপের গতিবিধি এবং সামুদ্রিক শামুকের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ধারাবাহিক পরিবেশগত পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে।
"এই উদ্যোগগুলো সেন্ট মার্টিনের ভঙ্গুর পরিবেশ ব্যবস্থাকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি," বলেন রফিকুল ইসলাম।
পরিবেশগত ক্ষতি ঠেকাতে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পর্যটনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।
বন বিভাগের মতে, প্রবাল প্রাচীর ও সংশ্লিষ্ট সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট চাপ মোকাবিলায় একটি সমন্বিত কৌশল প্রয়োজন।
প্রধান কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে, সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা প্রতিষ্ঠা, দূষণ ও প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো, কম প্রভাবসৃষ্টকারী টেকসই পর্যটন উৎসাহিত করা এবং দ্বীপবাসীদের জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের আরেক পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার বলেন, সংরক্ষণ কার্যক্রম জোরদারে জনসচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, "যখন পর্যটকেরা পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারেন, তখন তারাও এই কাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন।"
নিষেধাজ্ঞার ফলে দ্বীপবাসীর জীবিকায় প্রভাব পড়েছে—এমন অভিযোগের বিষয়ে সোলায়মান হায়দার বলেন, "বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ স্থানীয় বাসিন্দা মূলত জেলে। দ্বীপের অধিকাংশ হোটেল-রিসোর্টের মালিকও বাইরের লোক। কাজেই স্থানীয়দের জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত—এমন দাবি অতিরঞ্জিত।"
তবে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষুব্ধ পর্যটন ব্যবসায়ী ও রিসোর্ট মালিকরা।
স্থানীয় এক রিসোর্ট মালিক আব্দুল মালেক বলেন, "আমাদের ব্যবসা চরম হুমকির মুখে। এত কড়াকড়ির মধ্যে আমরা টিকতে পারছি না। আমরা সরকারের কাছে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া বা অন্তত পর্যটকের সংখ্যা সীমিত করে অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।"
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপে প্রায় ১১ হাজার মানুষের বাস, যাদের অনেকে মাছ ধরার পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে মাছ বিক্রি ও ছোটখাটো দোকান চালিয়ে বাড়তি আয় করতেন।
"কিন্তু বর্তমানে এমন কড়াকড়ি যে প্রকৃত বাসিন্দারাও অনেক সময় চলাচলে বাধার মুখে পড়ছেন," বলেন তিনি।
এদিকে পরিবেশবাদীরা সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরার সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, "আমরা এমন একটি নিয়ন্ত্রিত ও পরিবেশবান্ধব পর্যটন মডেলের পক্ষে, যেখানে সংরক্ষণ এবং স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনের মধ্যে ভারসাম্য থাকবে।"
তিনি বলেন, "যদি দ্বীপটি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর এই অনন্য অভিজ্ঞতা পাবে না। আমাদের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক।"
তিনি আরও বলেন, পরিবেশগত ক্ষতি কমাতে পর্যটন অবশ্যই সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। এর জন্য দরকার সীমিত সংখ্যক পর্যটক প্রবেশের বিধান, পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং সচেতন ভ্রমণচর্চা উৎসাহিত করা।