প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেটের স্বনামধন্য শাহজালাল মাজারের খ্যাতি সম্পর্কে সকলেই অবগত। রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনী প্রচারনার পথ শুরু হয় এ মাজার থেকেই।
রাজধানী ঢাকায়ও এমনি এক মাজার আছে যার জনপ্রিয়তা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাজারটির নাম সুলতানুল আউলিয়া হযরত শাহ্ আলী বাগদাদী (রহঃ) মিরপুর মাজার শরীফ। শাহ্ আলী মাজার নামেই লোকমুখে এ মাজার বেশি পরিচিত।
দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ এসে মাজারটির সামনে ঢলে পরে অশ্রুশিক্ত চোখে। কান্নামিশ্রিত কন্ঠে প্রার্থনায় নিমজ্জিত ধার্মিকদের মোনাজাত শোনা গিয়েছে এবারের শবে বরাতের রাতেও। জানা যায় শবে বরাতের রাতে এই মাজারটিতে বসে এশিয়ার বৃহত্তম ভিক্ষুকদের মেলা।
রাজধানী ঢাকার চেয়েও পুরনো এই মাজারে যুগ যুগ ধরে এভাবেই শবে বরাতসহ নানা মুসলিম ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়ে আসছে। উৎসবের দিন গুলোতে মাজারে লোকসমাগম তুলনামূলক বেশি।
ঢাকা শহরে মোঘল-পূর্ব আমলের মসজিদ-মাজারের কমতি নেই। তবে আদি ইট নির্মিত যেসব স্থাপনা দেখা যায় তার মধ্যে বিনত বিবির মসজিদ (১৪৫৭) এর পর দ্বিতীয় পুরাতন মসজিদ হিসেবে ধরা হয় শাহ আলীর মসজিদ (১৪৮০)। সেই মসজিদের মুখোমুখি স্থানে শায়িত শাহ আলী বাগদাদীর মাজার।
২.৭৬ একরের ওপর নির্মিত এ মাজারটি পুরান ঢাকা থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। মাজারটির পাশেই রয়েছে মাঝারি আকারের একটি পুকুর। মাজারের সাথে রয়েছে শাহ আলী মসজিদ এবং আরো রয়েছে মহিলাদের জন্য জিয়ারতের স্থান।
তাছাড়া মসজিদ সংলগ্ন একটি মহিলা কলেজ রয়েছে যা শাহ আলীর নামানুসারে ‘শাহ আলী মহিলা কলেজ’ হিসেবে পরিচিত। আশে-পাশে রয়েছে জিয়ারতে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদির জন্য বিভিন্ন দোকান।
মসজিদটি শাহ আলী মাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও আসলে শাহ আলী বাগদাদীর আগমনের পূর্বেই সাধারন মসজিদ হিসেবে স্থাপিত হয়েছিল। জানা যায়, বাংলার স্বাধীন সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে (১৪৭৪-১৪৮১) এ অঞ্চলের গভর্নর জহিরউদ্দীন খান এটি নির্মাণ করেন ১৪৮০ খৃষ্টাব্দে (হিজরি- ৮৮৫ সালে)। মাজারটির স্থাপনার দিকে লক্ষ্য করলে মোঘল-পূর্ব স্থাপনাশৈলী দেখা যায়।
শাহ আলীর পূর্ননাম সৈয়দ শাহ আলী বাগদাদী, ছিলেন একজন সুফি ধর্ম প্রচারক যিনি ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন ইসলাম ধর্ম প্রচারে। তার জন্মস্থান ইরাকের বাগদাদের ফোরাত নদীর তীরে কসবা নামক স্থানে। তিনি স্বয়ং হজরত আলী (রাঃ) এর বংশধর ছিলেন।
তিনি জন্মস্থান বাগদাদে অবস্থানকালীন সুফী তরিকার বিখ্যাত সুফী সাধক হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানি (রঃ) এর তরিকা চর্চা করতেন।
কিন্তু বাগদাদে শিয়া এবং সুন্নিদের ভেতর ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হলে কয়েকজন সুফী তরীকার সঙ্গী নিয়ে দিল্লিতে চলে আসেন শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর কেশমোবারক, ইমাম হোসাইনের জুলফ, বড় পীর আবদুল কাদির জিলানি (রঃ)’র জুব্বা সাথে নিয়ে, যা তিনি বংশগত উত্তরাধিকার হিসাবে পেয়েছেন।
দিল্লির পর ১৪৮০ সালে ফরিদপুরে ও এর পর মিরপুরে জরাজীর্ন অবস্থায় মসজিদটিকে উদ্ধার করে সেখানে বাস করতে শুরু করেন ও আশে-পাশে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন।
শুধু তার আগমন কিংবা জন্ম নিয়ে দ্বন্দ-দ্বিধার শেষ নেই, তার মৃত্যু নিয়েও বেশ রহস্যময় ঘটনা শোনা যায়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত ৪০ দিলের চিল্লার ঘটনাটি।
একদিন শাহ আলী আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করতে মসজিদে নিজেকে আটকে রাখেন এবং ৪০ দিন তাকে বিরক্ত না করতে সচেতন করে দেন সঙ্গীদের। চিল্লার শেষ দিনে সঙ্গীরা কক্ষ থেকে ভয়ানক আর্তনাদের শব্দ পায় এবং দরজা ভেঙ্গে কক্ষে এসে দেখে শাহ আলীর দেহ ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে পরে আছে। সেখানে তারা এক দৈববানী শুনতে পান: “যেখানে আছে সেখানেই দাফন কর”। অতঃপর সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। এভাবেই মসজিদটির ভেতর গড়ে ওঠে একটি মাজার।
বর্তমানে মাজারটি ভন্ডদের আস্তানা হয়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অনেকের ক্ষোভ, মাজারটি দিন দিন মর্যাদা হারাচ্ছে। ভন্ডদের কারণে মানুষের বিশ্বাসও কমে যাচ্ছে।
fatemaaktarhellbound@gmail.com