রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে গণভোটের সময়সূচি নির্ধারণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রকাশিত হয়েছে :
সংশোধিত :
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য না হওয়ায় গণভোটের তারিখ নির্ধারণ করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, “গণভোট নিয়ে বিরোধ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে এখন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা তার সহযোগী হিসেবে থাকব। নিশ্চিন্ত থাকুন, এককভাবে কেউ সিদ্ধান্ত নেবেন না — এটি সম্পূর্ণ প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত হবে। তিনি চাইলে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন, এবং সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে আমরা দৃঢ়ভাবে তার পাশে থাকব। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
আইন উপদেষ্টা জানান, ২৭০ দিনব্যাপী আলোচনার পরও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন গভীরভাবে হতাশাজনক।
তিনি বলেন, “এমন বিভক্ত অবস্থায় কীভাবে একটি ঐকমত্যের দলিল পাস করা সম্ভব — সেটিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
আসিফ নজরুল বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো মূল কিছু প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। আগে আমরা জানতাম বিষয়বস্তুর ওপর মতপার্থক্য রয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, দুটি নতুন মতভেদ তৈরি হয়েছে — একটি হলো দলিলটি পাসের প্রক্রিয়া নিয়ে, আরেকটি হলো গণভোটের সময়সূচি নিয়ে। জুলাই আন্দোলনকে সমর্থনকারী রাজনৈতিক দলগুলো এখন এমন কঠোর, পরস্পরবিরোধী এবং উত্তেজিত অবস্থান নিয়েছে যে, সরকার কী করবে তা নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। এত দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পরও যদি ঐকমত্য না হয়, তাহলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নতুনভাবে বিবেচনা করতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো রাজনৈতিক দল একতরফা আলটিমেটাম বা চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে, তা মানে তাদের মধ্যে কোনো ঐকমত্য নেই। তারা আসলে সরকারের কাছ থেকে নিজেদের দলীয় অবস্থানের অনুমোদন চাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখন যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে, তা জুলাই আন্দোলনের চেতনাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
মন্ত্রীসভায় এ নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে — একটি হলো ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন অধ্যাদেশ’, যার মধ্যে গণভোট এবং ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংশোধনের বিধান থাকবে। আমরা পরীক্ষা করব, এর কোনো দৃষ্টান্ত আছে কিনা, কিংবা এটা আদৌ সম্ভব কিনা। দ্বিতীয় বিকল্পটি হলো, এ দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই দুটি বিকল্প নিয়েই তীব্র মতপার্থক্য রয়েছে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনকে প্রভাবিত করবে না।
তিনি বলেন, “যে যাই বলুক, আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করব। সব দায়িত্ব কেবল আমাদের নয়, সংসদেরও রয়েছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করব, কিন্তু রাজনৈতিক ঐকমত্য অপরিহার্য।”
আসিফ নজরুল আরও বলেন, “তৃতীয় একটি বিকল্প হলো নির্বাচনের পর — নির্বাচিত সংসদ সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে কাজ করতে পারে। তাদেরও দায়িত্ব আছে। আমি জুলাই সনদ ও নির্বাচনের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগসূত্র দেখি না। আমরা ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে অটল।”
গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেয়। কমিশন প্রস্তাব দেয়, জাতীয় নির্বাচনের আগে বা নির্বাচন দিবসেই গণভোট আয়োজনের।
তবে জামায়াতে ইসলামী দাবি জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করতে হবে, যাতে জুলাই সনদ আইনি বৈধতা পায় এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে বিএনপি বলেছে, গণভোট নির্বাচন দিবসেই হতে হবে— এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা নয়।
বিএনপি কমিশনের সুপারিশে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তাদের অভিযোগ— মূল জুলাই সনদে যেসব বিষয় ছিল না, নতুন করে অনেক কিছু যুক্ত করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।
 
 
 For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.
              For all latest news, follow The Financial Express Google News channel.